20 December 2018

ভারতে মধ্যযুগীয় দাস প্রথা! ৫২ জন আদিবাসীকে আটকে নির্যাতন

প্রতিকি ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ১৯ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমবিনিময়ে শুধু দুবেলা কোনো ভাবে ক্ষুধা মেটানোর মতো খাবাররাত কাটানো আরও ভয়ঙ্করছোট্ট একটি চালাঘরে গাদাগাদি করে ৫০-৫২ জনবাহির থেকে তালাবন্ধভেতরের এক কোণে একটি গর্তটয়লেটের ব্যবস্থা সেটাইবাইরে প্রহরায় চার রক্ষীকাজে ফাঁকি বা পালানোর চেষ্টা করলেই জুটত চাবুক দিয়ে নির্মম প্রহারআর নারীদের যৌন অত্যাচার

মধ্যযুগীয় দাসপ্রথাকেও কার্যত হার মানানো হাড় হিম করা নির্যাতনের এই ঘটনা ভারতের কর্নাটকের হাসান এলাকার৫২ জন আদিবাসী ও দলিতকে উদ্ধারের পর পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদেরও কার্যত চোখ কপালে উঠেছেউদ্ধার ৫২ জনের মধ্যে ১৬ জন নারী এবং চার জন শিশুও রয়েছেবেশিরভাগই কর্নাটকের বাসিন্দা হলেও কয়েক জনের বাড়ি সংলগ্ন রাজ্য তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশেসবচেয়ে প্রবীণ বৃদ্ধার বয়স ৬২ বছরআর সবচেয়ে ছোট বছর ছয়েকের দুই শিশুকেউ তিন বছর, কেউ বা তার কম সময় ধরে নির্যাতনের শিকার

ঘটনা সামনে এসেছে নাটকীয় ভাবেওই শেডে বন্দি এক শ্রমিক কোনো মতে রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ১২ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালানথানায় গিয়ে আর্জি জানান সাহায্যেরপরে রবিবার পুলিশ ওই খামারবাড়িতে অভিযান চালায়উদ্ধার হয় ওই ৫২ জনতারপরই গোটা ঘটনা জানতে পারে পুলিশভারতীয় দণ্ড বিধির ৩২৩, ৩২৪ (বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখা), ৩৪৪ (চুরি) এবং ৩৫৬ ধারার (যৌন নির্যাতন) পাশাপাশি দাস প্রথা অবলুপ্তি আইন, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সুরক্ষা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের আশঙ্কা, ওই এলাকায় আরও কোনও জায়গায় এরকম দাসপ্রথা চলতে পারেসেই কারণেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে মুনেশা, কৃষ্ণগৌড়া, বাসবরাজা, প্রদীপ এবং নাগরাজা নামে পাঁচ জনের নামযে জমির উপর খামারবাড়িটি, তার মালিক কৃষ্ণগৌড়া বেঙ্গালুরুর বাসিন্দাআর গোটা অপারেশন চালাত মুনেশাতদন্তে নেমে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশতবে মূল অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেনদুটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছেওই গাড়ি দুটি শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার কাজ চলত

কীভাবে অপারেশন চলত, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাসান এলাকার এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেছেন, ‘দুজন অটো চালক সেজে স্থানীয় রেল স্টেশনে ঘোরাফেরা করতকাজের খোঁজে কেউ এলেই, তাদের টার্গেট করত তারানিয়ে যাওয়া হত সেই খামারেসেখানে ঢোকার পরই জামা-কাপড় সহ জিনিসপত্র, মোবাইল, পরিচয়পত্র সব কেড়ে নেওয়া হতকাউকে আবার দিনে ৬০০ টাকার কাজের টোপ দিয়ে তুলে নিয়ে যেত দুই অটো চালকটার্গেট করা হত মূলত ভিন রাজ্য বা অন্য এলাকা থেকে কাজের খোঁজে আসা শ্রমিকদের

আর এভাবে একবার ভেতরে ঢোকাতে পারলেই দাসহয়ে যেতেন এই সব আদিবাসী-দলিতরাপুলিশ জানিয়েছে, চাষের জমি, ইটভাটা, নির্মাণ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক সরবরাহের বরাত নিত অভিযুক্তরাগাড়িতে গাদাগাদি করে চাপিয়ে ভোর রাতে নিয়ে যাওয়া হত জমিতে, ইটভাটায় কর্মস্থলেআবার সন্ধ্যার পর সেভাবেই ফিরিয়ে আনা হত খামারবাড়িতেখাবার বলতে কর্মস্থলেই দুবেলা সামান্য যা জুটত, সেটাইমাঝে মধ্যে দেওয়া হত দেশি মদের পাউচ

এতদিন ধরে এরকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও শ্রমিকদের কেউ মুখ খুলতে পারেননিকারণ হিসেবে তদন্তকারীর বলছেন, কেউ পালানোর চেষ্টা করলে বা কাজে আপত্তি বা অন্য কোনও অপরাধকরলে সবার সামনেই জুটত বেধড়ক মারধরঘোড়ার চাবুক দিয়ে পেটানো হতবন্ধ করে দেওয়া হত খাবারনারীদের ক্ষেত্রে ছিল অকথ্য যৌন নির্যাতনচোখের সামনে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা দেখে আর প্রতিবাদ করার সাহস পেত না কেউশ্রমিকদের বাধ্যরাখতে এটা ছিল অভিযুক্তদের কৌশল

ওই খামারবাড়ি পরিদর্শন করেছেন ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশনের সদস্য এম প্রতিমাতিনি বলেন, ‘রাতে একটি ঘরে তাদের আটকে রাখা হতআগে টয়লেটও ছিল নাকয়েক জন এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় শেষমেষ ওই ঘরেরই এক কোণে একটি পাইপ বসিয়ে দেওয়া হয়সেটাকেই বাথরুম হিসেবে ব্যবহার করতে হতমহিলারা গেলে কোনো পুরুষ শ্রমিক গামছা-তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে আড়াল করে রাখতেনএমনই অমানবিক দাসপ্রথার শিকার হয়েছেন ওই আদিবাসীরা


শেয়ার করুন

0 facebook: