20 December 2017

জোটবদ্ধ হয়ে জামায়াতের নির্বাচন ঠেকাতে ইসিতে আবেদন


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ নিবন্ধন বাতিল হওয়া স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত নেতারা যেন জাটবদ্ধ হয়ে অন্য দলের প্রতীকে বা অন্য দলে যোগ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন-এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তিনটি বাম দল।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে এই অনুরোধ জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

দলগুলোর নেতারা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন সিইসির সঙ্গে। এ সময় তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ১৮টি দাবি তুলে ধরেন। এই দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল জামায়াতের ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া।

একটি ধর্মভিত্তিক দলে আবেদনের পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে উচ্চ আদালত। এই রায়ের পর দলটি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তবে দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

আবার জাতীয় নির্বাচনে অনিবন্ধিত দলের কোনো নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হিসেবে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ আছে। জামায়াত যেহেতু বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ তাই বিএনপির ধানের শীষ বা জোটের অন্য কোনো নিবন্ধিত শরিকের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ আছে জামায়াতের। আর এই সুযোগটাই বন্ধ করে দিতে চাইছে সিপিবিসহ তিন দল।

বৈঠক শেষে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হাইকোর্টের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু দলটির নেতারা যেন অন্য দলে যোগ দিয়ে সে দলের নমিনেশন না নিতে পারে। এ কথাটি আমরা জোর দিয়ে বলেছি।
সেলিম বলেন, ‘আমরা ইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হতে হলে কোন ব্যক্তিকে কমপক্ষে পাঁচ বছর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। এ ব্যবস্থা যেন ইসি করে।

নির্বাচনের আগে কেউ একটি দলে যোগ দিল আর সে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করল- এমন যেন না হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জামানতের পরিমাণ সার্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা করারও দাবি জানায় তিন বাম দল। সেলিম বলেন, ‘জামানতের পরিমাণ বেশি থাকলে সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। শুধু যাদের টাকা আছে তারাই অংশ নিতে পারে। যেটা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার তাগাদাও দেন বাম নেতারা। সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘কেউ অভিযোগ করুক আর না করুক ইসির দায়িত্ব হলো ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। নির্বাচনকালীন সময় কমিশনকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ সময় নির্বাহী ক্ষমতার একটা প্রধান অংশ ইসির অধীনে থাকে। অর্থাৎ প্রচলিত সরকারের হাতে আর এ ক্ষমতা থাকে না।

সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। এর জন্য একটা শক্তিশালী আন্দেলন দরকার হবে। আমরা সেই আন্দোলন অগ্রসর করে নিয়ে যাব।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ইসি চলছে কি না সেটাও আমরা দেখব। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা দেখব তাদের ইচ্ছের প্রতিফলিত হচ্ছে কি না। যদি না হয় প্রয়োজনে আমরা ইসি ঘেরাও করব।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যয়সীমার অতিরিক্ত খরচ করছেন অভিযোগ করে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোরও তাগিদ দেন বাম নেতারা।
নির্বাচন কমিশনে তিন বাম দলের ১৮ প্রস্তাব
১. সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী জামানত পাঁচ হাজার টাকা করতে হবে।
২. ভোটার তালিকার সিডি বিনামূলে দিতে হবে।
৩. সকল প্রর্থীর টিআইএন বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে আয়করযোগ্যদের টিআইএন বাধ্যতামূলক করা।
৪. অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের সুবিধা।
৫. তফসিল ঘোষণার পর বেসমারিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে চলবে।
৬. রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হলে কমপক্ষে পাঁচ বছর দলে সক্রিয় সদস্য হতে হবে।
৭. মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
৮. প্রতি এলাকায় ইসি প্রার্থীদের পরিচিত সভা করবে।
৯. প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
১০. প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং করতে হবে।
১১. নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের হিসাব ভোটের সাত দিনের মধ্যে দিতে হবে। নয়ত নির্বাচিতদের শপথ বন্ধ করতে হবে।

১২. নির্বাচনে যেকোন ধরনের পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
১৩. নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
১৪. প্রাচারণ যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আচরণ বিধি লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।
১৫. সীমনা নির্ধারণ স্বচ্ছ করা এবং ভোটারের সম সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করা।

১৬. ভোটকেন্দ্রের তালিকা নির্বাচনে দুই সপ্তাহ আগে প্রার্থীদের দিতে হবে।
১৭. ইভিএম চালু না করা।

১৮. আরপিওর অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকধারা বাতিল করা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বিধান বাতিল করতে হবে।


শেয়ার করুন

0 facebook: