স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দেশপ্রেমিক
সেনাবাহিনীর হাতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপ। দেশের সীমানা পেরিয়ে
আন্তর্জাাতিক অঙ্গনেও এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তাল খর স্রোত মেঘনা ও দুর্ধর্ষ
দস্যু বাহিনীর পরাজয়ের পর সেনাবাহিনী দূর্গম চরটিকে স্বর্ণদ্বীপে পরিণত করায় দেশের
খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে । এ যেন রুপকথাকেও হার মানায়। স্বর্ণদ্বীপে সামরিক প্রশিক্ষণ
কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ এলাকায় বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।
শত্রুর হাত থেকে
প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষাকল্পে এখানে এশিয়ার বৃহৎ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
করা হয়। গত বছরের ৭ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বর্ণদ্বীপ পরিদর্শন করেন।
এসময় তার সৌজন্যে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং ১১ পদাতিক ডিভিশন
কর্তৃক সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত
বহুমুখী প্রকল্প পরিদর্শন করেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ গত ১৪ জানুয়ারী
স্বর্ণদ্বীপ পরিদর্শনে যাবার কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিশেষ করে ঘন কুয়াশার
কারণে সফর স্থগিত করা হয়। উল্লেখ্য, আশির দশকেও এ পথে মালবাহী কার্গো,
অয়েল
ট্যাংকার ও ভারী ট্রলার চলাচল করে। নব্বইয়ের কোন একসময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার
কবলে পড়ে একটি কার্গো জাহাজ নিমজ্জিত হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা জেগে উঠা চরের
নামকরণ করে জাহাইজ্যার চর। এক সময় জাহাইজ্যার চরের কুখ্যাতি ছিল। চট্রগ্রাম থেকে
দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী পণ্যবাহী নৌ-যান এবং হাতিয়া- চরমজিদ রুটের শত শত
মালবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান ডাকাতের কবলে পড়ে। সংঘবদ্ব দুর্ধর্ষ জলদস্যু চক্রটি
উপকূলীয় ও মেঘনার পাঁচ হাজার কিলোমিটার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তখন আইন
শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত একাধিবার জলদস্যু বাহিনী কর্তৃক নাস্তানাবুদ হয়। ২০১০ সালে
জাহাইজ্যার চরের বনদস্যু সর্দার বাসার মাঝি ও পরবর্তীতে নাসির বাহিনী প্রধান নাসির
র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হবার পর দুস্য বাহিনী জাহাইজ্যার চর ত্যাগ করে ।
২০১৩ সালে
সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাইজ্যার চরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখনকার ৩৬০ বর্গকিলোমিটার
আয়তনের স্বর্ণদ্বীপের আয়তন এখন ৪৫০ বর্গকিলোমিটারে এসে পৌছেছে। স্বর্ণদ্বীপ ৩৩ পদাতিক
ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে ন্যস্ত করা হয়। জাহাইজ্যার চর থেকে স্বর্ণদ্বীপ নামকরন
করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এখানে সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পাশাপাশি বিশাল
অঞ্চলটিকে বহুমুখী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী। স্বর্ণদ্বীপের
দক্ষিন পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে সন্ধীপ, পশ্চিমে হাতিয়া
উপজেলার হরণী, চানন্দী ইউনিয়নসহ চেয়ারম্যান ঘাট এবং উত্তরে
সূবর্ণচর উপজেলা। অপরদিকে দক্ষিন-পূর্বে ঠেঙ্গারচর পেরিয়ে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর ।
সরকার
স্বর্ণদ্বীপকে আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। এখানে একই সাথে
আড়াই হাজার সেনা সদস্যের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে । ২০১৪ সাল থেকে এখানে ১৫টি
গ্রুপ বৃহৎ পরিসরে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। এছাড়া নয়নাভিরাম স্বর্ণদ্বীপে ৬০ হাজার
ঝাউগাছ, ভিয়েতনাম থেকে সিয়াম জাতের ১৫শ’ নারিকের চারা, ২হাজার
ফলদ গাছ রোপন করা ছাড়াও গরু, মহিষ, হাঁস, ভেড়া, মুরগি
ও মৎস খামার রয়েছে। এখানে মহিষের দুধ থেকে উৎপাদিত পনির বাইরে সরবরাহ হচ্ছে। স্বর্ণদ্বীপ
রক্ষায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি মাল্টিপারপাস
সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে। আগামীতে আরো ৩ টি শেল্টার নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে
নির্মিত ২টি সাইক্লোন শেল্টারের প্রতিটিতে ২০ হাজার গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন
রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন
সময় প্রতিটি শেল্টারে ৫শ’ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা
গেছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষনে এখানে ২টি লেক খনন করা হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য ১ হাজার
মিটার গভীর সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প খনন এবং বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ
করা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক
দুর্যোগ তৎসহ নদীভাঙ্গন রক্ষাকল্পে ৭২ হাজার একর ভূমিতে বনায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ
করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার ঝাউগাছ চারা রোপন করা হয়েছে এছাড়া হেলিকপ্টার থেকে
সিড বোম্বিংয়ের মাধ্যমে ২ টন কেওড়া বীজ বপন করা হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপে চাষাবাদ ও
বিভিন্ন খামারে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এত করে ১৭ হাজার স্থানীয়
অভিবাসী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপের
বদৌলতে নোয়াখালী জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী সূদুর স্বর্ণদ্বীপ পর্য্যন্ত
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। স্বর্ণদ্বীপের ১৮কিলোমিটার দক্ষিণে
ভাষান চরের অবস্থান। চরটিতে নৌবাহিনীর সার্বিক তত্বাবধানে রোহিঙ্গা পূর্ণবাসনের
লক্ষে অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন দমার চরে নৌবাহিনীর একটি
স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত
নোয়াখালীর উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা কাজে আসছে।
খবর বিভাগঃ
অন্যান্য সংবাদ
জেলা সংবাদ
0 facebook: