25 July 2019

সৌদির আজোয়া জাতের খেজুর এবার দিনাজপুরে, বাড়ির ছাদে


স্টাফ রিপোর্টার॥ বাড়ির ছাদে কমলা, আঙুর, পেয়ারা, আম ইত্যাদি চাষ আমরা কম-বেশি সবাই দেখেছি। কিন্তু মরুভূমির ফসল হিসাবে পরিচিত সৌদি আরবের বিখ্যাত আজোয়া জাতের খেজুর চাষের কথা ক'জন শুনেছি বা দেখেছি। যারা এই দৃশ্য দেখতে চান তাদের আসতে হবে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনার মোড়ে একসময়ের সৌদিপ্রবাসী মুহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ও শামসুন নাহার দম্পতির বাড়ির ছাদে।

তাদের ছেলে মুহম্মদ মাহাবুবুর রহমান প্রাথমিকভাবে বাড়ির ছাদে সৌদির আজোয়া জাতের খেজুর চাষ করে চূড়ান্ত সফলতা পেয়েছেন। বাড়ির ছাদে প্রাথমিকভাবে চাষ করা একটি গাছে থোকায় থোকায় আজোয়া খেজুর ঝুলছে। এখন তিনি পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ায় আজোয়া জাতের খেজুরের চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে বাড়ির ছাদে মাটিতে রোপণ-উপযোগী ৬ শতাধিক চারা প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় ৩ শ বিচি থেকে চারা উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে চূড়ান্তভাবে বড় পরিসরে জমিতে আজোয়া জাতের খেজুর চারা রোপণ ও বিক্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাহবুবুর রহমান। এরই মধ্যে আজোয়া জাতের খেজুর চাষ করে সফল হওয়া দেখে মাহবুবুর রহমানের কাছে গাছের চারা কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন অনেকে।

দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনার মোড় নিবাসী মুহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন আজোয়া খেজুর চারার একটি মিনি নার্সারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির ছাদে অসংখ্য গাছের চারা রয়েছে। রাস্তায় চলাচল যে কারোই নজর চলে যায় বাড়ির ছাদের এক কোণার দিকে। কারণ, বাড়ির ছাদের কোণায় রয়েছে ১টি গাছ। আর সেই গাছটি হচ্ছে সৌদি আরবের বিখ্যাত আজোয়া জাতের খেজুরের গাছ। বর্তমানে গাছটিতে ২টি থোকায় ঝুলছে সবুজ-গোলাপি-হলুদ বর্ণের বড় বড় খেজুর। রাস্তা থেকে যে কারো নজর কাড়ছে খেজুরগুলো।

মাহবুবুর রহমান জানান, মদিনায় আজোয়া জাতের খেজুরের কিছু বিচি সংগ্রহ করেন তিনি। সাধারণত আজোয়া জাতের খেজুর বাংলাদেশে চাষ করা সম্ভব নয়। এর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যদি কেউ প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করে গাছ বড় করতে পারে তাহলে এই জাতের খেজুর চাষ করা সম্ভব। সাধারণত দেশে বিভিন্ন জাতের খেজুর গাছের চারা পাওয়া যায়। সেই চারাগুলো থেকে ১টি গাছ পাওয়া যায়। কিন্তু সৌদি আরবের আজোয়া জাতের চারা যখন গাছে রূপান্তরিত হবে তখন আরো অসংখ্য চারা জন্ম দেয়। এই গাছ বড় হলেই গোড়া থেকে একই জাতের অন্য ছোট চারা জন্ম হতে থাকে। এই আজোয়া জাতের খেজুর গাছের গড় আয়ু প্রায় ১০০ বছর।

তিনি আরো জানান, আজোয়া জাতের গাছের জন্য পরাগায়ন খুবই জরুরি। কোনো বাগানে যদি ২০টি গাছের চারা রোপণ করা হয় তাহলে সেই বাগানে ১টি পুরুষ গাছ রোপণ করতে হবে পরাগায়নের জন্য। প্রথমে ১টি বিচিকে ১টি মাটির পাত্রে রোপণ করতে হয়। তারপর গাছের চারা একই বড় হয়ে ৪ থেকে ৬ ইঞ্জি হলেই অন্য একটি বড় মাটির পাত্রে নিতে হয়। ভবিষ্যতে দিনাজপুর শহরকে একটি খেজুতের শহরে পরিণত করার চিন্তা রয়েছে তাঁর।

তিনি জানান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় অনেক চাষি এই আজোয়া জাতের খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন এবং তারা বিশাল বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন। সেই রকম বিশাল বাগান গড়ে তোলার চিন্তা করছেন তিনি। আর সে কারণে সে সব দেশের বাগানিদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে চলেছেন তিনি। বর্তমানে তার বাড়ির ছাদে ৬ শতাধিক রোপণ-উপযোগী চারা রয়েছে। এ ছাড়াও বিচি থেকে চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে আরো ৩ শতাধিক। ১টি গাছ বিচি থেকে রোপণ-উপযোগী করতে তার ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এরই মধ্যে অনেকে তার সাথে যোগাযোগ করেছে গাছের চারার জন্য।

তিনি আরো জানান, বাবা যখন মদিনা থেকে প্রথম আজোয়া জাতের খেজুরের বিচি আনেন তখন মা শামসুন নাহার নিজ হাতে ১টি মাটির পাত্রে বিচি রোপণ করেছিলেন। আজোয়া জাতের গাছ সব সময় পরিচর্যা পছন্দ করে। যত ভালো পরিচর্যা করা হবে তত ভালো থাকবে গাছটি। গাছটি মাটিতে রোপণের প্রায় ৪ বছরের মাথায় প্রথম ফল দেবে। সাধারণ ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে গাছে ফুল আসে। তখন পুরুষ গাছ থেকে পরাগায়নের জন্য পাউডার সংগ্রহ করতে হয়। যা পরায়গনের বিশেষ সময় পাউডারগুলো ফুলে ছিটিয়ে দিতে হয়। তাহলে গাছে খেজুরের ফলন ভালো হয়। যে দিন গাছে প্রথম ফুল আসে সে দিনই ৩ থেকে ৪ বার পাউডার ছিটাতে হয়। বর্তমানে যে গাছের ২টি থোকায় খেজুর ধরেছে তাতে আনুমানিক ১৫ কেজি খেজুর পাওয়া যেতে পারে। তবে এরপরের বছর এর থেকে তিনগুণ বেশি খেজুর পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। খেজুরগুলো সব সময় নেট দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়।

সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আগামীতে খুব বড় পরিসরে এই বিখ্যাত আজোয়া জাতের খেজুরের চাষ শুলু করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: