![]() |
গত শনিবার
পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম
আলী ফরাজী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম হূসেইন
মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পাটিতে যোগদান করেছেন।
এ নিয়ে অনলাইন অফলাইনে রাজনীতিবিদ,
বুদ্ধিজীবি,
সাংবাদিক,
ছাত্র,
সুধী মহল সহ নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যেই এখন নানা গুঞ্জন ও বিশ্লেষণ!
নানাজনের
নানা মন্তব্যে মঠবাড়ীয়ার আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে উঠে এসেছে জটিল সমীকরণ! যে সমীকরণের
হিসেবও কারো কাছে মিলছে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে কী হতে পারে মঠবাড়ীয়ার নমিনেশন চমক
এবং নির্বাচনী ফলাফল? এ
নিয়ে আজকের পর্ব।
১৯৯৬
সালে জাতীয় পার্টির টিকেটে মঠবাড়ীয়া থেকে এমপি হলেও ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি ত্যাগের
প্রায় দেড় যুগ পর ডাঃ ফরাজী সাহেবের আবারো সেই জাপায় যোগদান অনেকের কাছেই নতুন চমক
মনে হচ্ছে। এ চমকের শেষ কোথায়,
সরাসরি উত্তর নিয়েই যদি আগাই.............
কিছুদিন
আগে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পরলেও অবশেষে তিনি জাপায় যোগ দিলেন।
অনেকেই
মনে করছেন, এতে
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় গ্রীন সিগনাল আছে। তিনি জননেত্রীর ইশারা পেয়েই জাপা'য় যোগ
দিয়েছেন। কেননা তার আওয়ামীলীগে যোগদান অাওয়ামীপন্থী অনেকেই সুনজরে দেখবেনা এটাই স্ববাভাবিক।
এর নানাবিধ কারণও আছে। যেমন,
তিনি সুবিধামত বিভিন্ন দলত্যাগী হিসেবে মঠবাড়ীয়ায় যেমন আলোচিত সমালোচিত, তেমনি
এ বিষয়ে তার বেশ নামঢাকও রয়েছে।
আবার
নিজেদের দলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মত একাধিক যোগ্য নেতা মঠবাড়ীয়া আওয়ামীলীগে থাকতে
দলীয় ভাবাদর্শের বাইরের বহিরাগত কারো উপর হয়তো এই মুহূর্তে আস্থা রাখাও কঠিন ছিলো।
ফলে উপজেলা আওয়ামীলীগের এ ধরনের আভাস পেয়ে কেন্দ্র হতেই তাকে অন্যতম শরীক দলে যোগ দিতে
বলা হয়েছে।
এতে স্থানীয়
আওয়ামীলীগে সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ণয়ে যথেষ্ঠ সুযোগ পাওয়া যাবে। আগামী
নির্বাচনে তিনি মহাজোটের অন্যতম শরীক জাপা'র মনোনয়ন পেলে সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের
কি হবে?
মনোনয়োন
পেলেও আওয়ামীলীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী যে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে না তা
কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। কেননা, এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগ মহাজোটের
অন্যতম শরীক হলেও মঠবাড়ীয়া আওয়ামীলীগে নবীন-প্রবীণ বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় নেতা রয়েছেন
যাদের প্রতি জনসমর্থনও শীর্ষে!
এদিকে
মঠবাড়ীয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং আগামী নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগারদেরকে
বর্তমান অবস্থায় আরো বেশী ভাবিয়ে তুলবে বলেই মনে করি। তাদের এই স্থানীয় কোন্দল সম্পর্কে
প্রধানমন্ত্রী অবহিত হলে আগামী নির্বাচনের মূল হিসেব নিকেশ অপরিবর্তিত রাখতে তিনি মহাজোটের
অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দিতে পারেন। ফলে আওয়ামীলীগে স্বতন্ত্র প্রার্থীতা
দেখা গেলেও ফলাফলের সমীকরণটা কেমন হবে তা আসলেই এই মুহূর্ত ভেবে বের করা কঠিন।
কেননা, তখন আওয়ামীলীগের
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও দলীয় বাধ্যবাধকতা, অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির ভোট, ডাঃ রুস্তুম
ফরাজীর ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক এবং আওয়ামীলীগের স্থানীয় কোন্দল সব কিছুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে
অনেকটাই নাজুকাবস্থায় ফেলে দিবে! অন্যদিকে যদি মহাজোটের পক্ষ হতে ডাঃ ফরাজী সাহেব নমিনেশন
না পান, তখন
এ চমক আরো নতুন রূপে রূপায়িত হবে বলেই আশা রাখি। তখন কি তিনি মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী
হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন?
এ প্রশ্নের
উত্তর পেতে তার রাজনৈতিক জীবনাখ্যান গভীর ভাবে পর্যালোচনার যে প্রয়োজন নেই তা মঠবাড়ীয়ার
দর্শক হিসেবে অবশ্যই জানেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেই বা ফলাফল কী হতে পারে তা আমার মত অরাজনৈতিক
ব্যক্তির বলাটা একটু খটকা বৈকি?
অথচ ২০০১
সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবেও এমপি হয়েছিলেন। সে হিসেবে তিনি মঠবাড়ীয়া বিএনপিতেও
পরিচিত মুখ। অন্যদিকে বর্তমান মঠবাড়ীয়াতে বিএনপিতেও আছে গ্রুপিং। অন্যদিকে তার বিপরীতে
তেমন হেভিওয়েট কোনো নেতা না থাকায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রাথী হিসেবে নমিনেশন পাওয়া
ছিলো তার অনেকটাই অনুকূলে। এতদ্বসত্বেও এ মুহূর্তে বিএনপিতে যোগদান না করে জাপায় তার
যোগদান তার আরেকটি রাজনৈতিক চমকের অংশবিশেষ।
কেউ কেউ
ডাঃ ফরাজীর
জাপায় যোগদানকে রাজনৈতিক প্রথম ভুল হিসেবেও অভিহিত করেছেন। আবার কেউ তার জবাবে আগামী
সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাপাকে মূল্যায়নের শীর্ষে ধরে হিসেব কষছেন। কেননা রংপুর সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল এবং নির্বাচন ফলাফল নিয়ে বিএনপির পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়
স্পষ্ট যে, বিএনপি
স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সে ক্ষেত্রে এরশাদকে জোটে পেতে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের
উষ্ণ দর কষাকষিতে এরশাদের জাপা নতুন মূল্যায়ন পাবে।
অনেকে
তার দল বদলের বিষয়টি সুবিদাবাদ আবার অনেকেই উন্নয়নের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত
হিসেবেই মনে করেন।
মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টিতে ডাঃ ফরাজীর
যোগদানে আওয়ামীলীগের জন্য অনেকেরই পরামর্শ, "প্রতিবেশীর ছাদের তুষার নিয়ে মাথা ব্যাথা
না করে নিজের দরজা কর্দমাক্ত কিনা সেদিকে মনোনিবেশ করাই বুদ্ধিমত্বা।" এই মুহূর্তে
দ্রুততার সাথে স্থানীয় কোন্দল ও বিভাজন মুক্ত হলেই কেবল অাওয়ামী লীগের কল্যাণ বলে মনে
করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকবৃন্দ।
মানুষ
বদলায়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতেই বদলায়। কখনো নিজ স্বার্থেও বদলায়। কারণে অকারণে বদলায়।
পরিবর্তনের জন্যই রাজনীতি। কখনো হয়তো পরিবর্তন আনতেও নিজেকে পরিবর্তিত হতে হয়। এটা
নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। কেননা,
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
লেখকঃ
মুহম্মদ সাদিকুর রহমান, ছাত্র আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো – মিশর।
0 facebook: