30 December 2017

বান্ধবিকে বিস্বাস করে ধর্ষিত তো হলো সাথে প্রান ও দিতে হলো

স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মুন্নির অনুরোধ ফেলতে পারে না মালাপ্রিয় বান্ধবীর ছোট্ট অনুরোধ কী করেই বা ফেলেএতকরে বলছে যখন, আজ রাতে থাকবে ওদের বাসায়তা ছাড়া স্কুলের আরও বান্ধবী শেলী, মুক্তা আসবেসারা রাত আড্ডা দিবেসকালে স্কুলে না গিয়ে ফাঁকি দিবেসিনেমা দেখবেঅনেক দিন পর বান্ধবীরা সব এক হবে

উপরে উপরে মালা আমতা আমতা করলেও ভিতরে সে বেজায় খুশিবাবাকে রাজি করাতেই হবেবকা খেলে খাবেতবুও মুন্নির বাসায় আড্ডাটা ছাড়া যাবে নামুন্নি সেই দুপুরে এসে বলে গেছেনানা কিছু ভেবে মালা তার বাবাকে রাজি করালসন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে গেল মালামুন্নিদের বাসার কাছেইহেঁটেই পৌঁছে গেল

কিরে মুন্নি! মুক্তা শেলী এখন তো আসল না! রাত তো অনেক হলোকখন আসবে ওরামালার এমন প্রশ্নে থতমতো খায় মুন্নিবলে, কী জানি বুঝতে পারছি নাকেন যে আসল নাথাক, না আসলেই বা কীদুই বান্ধবী মিলে আড্ডা দিবকতদিন একসঙ্গে বসে দুটো কথা বলিনিআয় আমরা ভাত খেয়ে নেইতারপর রুম আটকে আড্ডা দিবরাত তো ১০টা বেজে গেলমুন্নির এমন কথাবার্তায় বিরক্ত মালাপ্রকাশ করে না

সব কাজ শেষে রাত ১১টায় রুমে গিয়ে দুজনে কথা বলতে থাকেমুন্নি তার জীবনের কিছু অজানা কথা বলতে বলতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়মালার মন খারাপ হয়ভাবে, উপর থেকে মানুষ বোঝা যায় নামুন্নির ভিতরে এত কষ্ট বোঝা যায়নিমুন্নির জন্য মায়া হয় তার

হঠাৎ মুন্নি বলে, চল আমরা বাড়ির বাইরে যাইখোলা মাঠটায় গিয়ে বসিমালা বলে, এত রাতে কীভাবে? কিছু হবে নাঅভয় দেয় মুন্নিমুন্নির এই মনের অবস্থার মধ্যে তার কথা ফেলতে পারে নাদুজন বাসা থেকে বেরিয়ে মাঠটায় গিয়ে বসেঅন্ধকার চারদিকসামনে কিছু দেখা যায় না

রাত তখন ১২টাদুজন কথা বলছেমুন্নি কেমন যেন করছেআশপাশ মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেকী রে, কিছু খুজছিস নাকি মুন্নি? মালার প্রশ্নে সম্ভিত ফিরে পায় মুন্নিকই কিছু না তো! কী আবার খুঁজব? কেমন যেন রাগ হয়ে পালটা প্রশ্ন মুন্নিরমালা হতবাকঠিক ওই সময়েই অন্ধকারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসল তিন যুবকমুন্নির ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ায়বুক কেঁপে ওঠে মালার

এই আপনারা কারা? কী চান এখানে? মালা প্রশ্ন রাখেমুন্নি এবার পেছন ঘুরে তাকায়? কিন্তু কিছু বলে নাযুবকদের চেহারা অন্ধকারের মধ্যে চেনা যাচ্ছিল নাকিন্তু মুন্নির চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছেওর মুখে হাসিযে হাসির সঙ্গে পরিচয় নেই মালারভয় পায় মালাকী রে মুন্নি, কথা বলছিস না কেন? মুন্নি মুখ খোলেবলে, আরে তুই চিনিস না! ভালো করে তাকিয়ে দেখ, চিনবি

মালা আবার ভালো করে তাকায়! কী ব্যাপার চিনতে পারছ না! এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলা! তিনজনের একজন কথা বলেমালা এই কণ্ঠটা চেনেআঁতকে ওঠে মালাতাহলে কী হারুনযে কিনা তাকে কয়েক বছর ধরে প্রেম বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছেকিন্তু সে তো তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলেও ভয় দেখিয়েছেতবে কী মুন্নি বিপদে ফেলতে চাইছে তাকে?

মালা ভয় পায়মালা উঠে দাঁড়ায়যুবকটি এবার মালার সামনে এসে দাঁড়ায়হ্যাঁ সেই তো! হারুন! সঙ্গে বুলেট আর জুয়েলএখন কী করবে! চারদিকে অন্ধকারদৌড় দিবে! যদি আশপাশের লোকজন চলে আসে, সেটিও কেলেঙ্কারি হবেভাবছে মালা এমন নানা কথা

মুন্নির হাত ধরে মালাকিন্তু ছাড়িয়ে নেয় মুন্নিমুন্নি বলে,”হারুন আমার কাজ শেষতুমি তোমার জিনিস বুঝে পেয়েছ? এবার আমি যাইঘুম পাইছে আমার

হারুন বলে, ওকে, তুমি যাওআমার হিসাব আমি নিব! এমন কথাবার্তায় মালার কান্না আসেমুন্নির দিকে তাকিয়ে থাকেকিছু বলতে পারছে নামুন্নি নিজের বাসার দিকে হাঁটতে থাকেমালা দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করেজাপটে ধরে ফেলে হারুনমুখ চেপে ধরেতারা মালাকে নিয়ে যায় পাশের একটি নির্জন পুকুরপাড়ে

হারুন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়মালার জবাব, রাজি নাক্ষুব্ধ হয় হারুনসেখানেই তিনজনে মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে মালাকেচিত্কার করায় তার মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়রক্তাক্ত মালা তখন বলে, সব কথা বলে দিবে সেথানা পুলিশ করবেকাউকে ছাড়ব না কথা শুনে হারুন আরও ক্ষুব্ধশিমুল গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে মালাকে বেঁধে ফেলেএরপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্ষকরা

রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে মালার গগন বিদারি চিত্কার আশপাশের লোকজনের কানে পৌঁছে যায়ছুটে আসে লোকজন, আসে মালার বাবাততক্ষণে লাপাত্তা তিন ধর্ষকমালাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালেকিন্তু পরদিন মারা যায় মালা

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রংপুরের সদর উপজেলার পালিচরা গ্রামে মধ্যযুগীয় কায়দায় ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয় মালাকেতার বাবা দিনমজুর মজিবর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন

পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেপুলিশ জানতে পারে মুন্নির কথাগ্রেফতার করে মুন্নিকেবসানো হয় থানার টেবিলের সামনেজেরা শুরুকিন্তু মুন্নি তার বান্ধবী মালাকে চেনে না বলে দাবি করেকিন্তু জেরার মুখে আর কতক্ষণ অস্বীকার করে থাকবে মেয়েটিযখন বলা হলো, স্বীকার করলে তাকে মামলায় জড়াবে না, তখনই সব ফাঁসঘটনার আদ্যোপান্ত বলে দেয়হারুনের অনুরোধ রাখতেই মালাকে সে তার বাসায় আসতে বলে

এখন পুলিশ খুঁজতে থাকে হারুন, বুলেট আর জুয়েলকেকিন্তু ওরা তো লাপাত্তাপাওয়া যায় না কোথাওপুলিশ চেহারাও চিনে নাবিভিন্ন জায়গায় সোর্স নিয়োগ করে পুলিশবেশ কিছুদিন পর পুলিশের কাছে খবর আসে, হারুনকে দেখা গেছে পাশের একটি গ্রামের বাজারেপুলিশ ছুটে যায়

কিন্তু কে হারুন! বিরাট একটা সমস্যায় পড়ে পুলিশকাকে ধরবে? অনেক লোকজন সেখানেচেহারার সঙ্গে মিল পাচ্ছে না কারওএক সোর্স খবর দিল, হারুনের একটা বদঅভ্যাস আছেমাথা একটু পর পর ডান দিকে ঝাঁকায়পুলিশ তীক্ষ নজরে দেখছেহোটেলের একটা চেয়ারে বসা যুবকের দিকে লক্ষ্য করে

সন্দেহ হলেও এই যুবকের দাড়ি গোঁফ আছেকিন্তু হারুনের ছিল নাহঠাৎ মাথা ডান দিকে ঝাঁকাচ্ছে! পুলিশ তখন উত্তেজনায়আরে পাওয়া গেছে শিকারযুবকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়চল, আর খেতে হবে নাখেয়েছিস অনেকদাড়ি গোঁফ রেখেছিস, তোর বদঅভ্যাস পাল্টাতে পারিসনিবলে পুলিশ

যুবকটি আসতে চায় নাহ্যান্ডকাফ পরিয়ে সোজা থানায়এরপর ছোটদের নামতার মতো পুরো ঘটনা পুলিশ বলে যায় হারুনকে সামনে বসিয়েঅস্বীকার করার কোনো আর পথ থাকে নাতার দেওয়া তথ্যে পাওয়া যায় বুলেটকেকিন্তু অধরা জুয়েল

২০০২ সালের অক্টোবরে রংপুর নারী শিশু নির্যাতন আদালত এই তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেয়আর মুন্নিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন দণ্ড

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


শেয়ার করুন

0 facebook: