স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ কী
হবে বাবুল আক্তারের দুই শিশু সন্তানের? চট্টগ্রামের অলিতে-গলিতে
সাধারণ থেকে অসাধারণদের আড্ডায় আবারও ফিরে এসেছে এই প্রশ্ন। আবারও উঠেছে সমবেদনা
আর তর্ক-বিতর্কের ঝড় । এর কারণ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক এই জনপ্রিয় পুলিশ
সুপারের পোস্ট করা একটি কভার ফটো। দুই শিশু সন্তানের ওই ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “গত নভেম্বরে আমার মা মারা যাবার পর ওরা আবার আশ্রয়হীন হলো”।
বিগত
২০১৬ সালের ৫ জুন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তদানীন্তন পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন
পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে
নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এদিন সকাল সোয়া ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে মোটরসাইকেলে
করে এসে তিন দুর্বৃত্ত মিতুকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তারপর কিছুদিন ধরে
দুই শিশু সন্তানের বাবাও ছিলেন তিনি, মা-ও ছিলেন তিনি। দুই শিশুকে খাবার খাওয়ানোসহ
বাবা-মায়ের সকল কাজ একাই করেছেন বাবুল আক্তার। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের
পর অবসরে যান বাবুল। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের
জেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এসময় দুই সন্তানকে নিয়ে ওঠেন শ্বশুর বাড়িতে।
গোয়েন্দা
পুলিশ তার দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়লে এক পর্যায়ে শ্বশুরের বাসা ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে
বাবুল চলে যান মায়ের কাছে। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সবাই বিচারক,
আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’ শিরোনামে বাবুল আক্তারের একটি লেখার প্রেক্ষিতে তার শ্যালিকা
শায়লা মোশাররফ বলেন, ‘নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বাবুল। মিতু হত্যার পর তাদের
বাসায় থেকে নাটক করেছিলেন।’ এরপর শুরু হয় নতুন গুঞ্জন, বাবুলের বিরুদ্ধে ওঠে
পরকীয়ার অভিযোগ।
নানা
অপরাধকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অপরাধী পাকড়াওয়ে সাহসী ভূমিকা রাখা এসপি বাবুল তার বর্তমান
ট্র্যাজেডি টাইপ জীবনযাপনের মধ্যেই গত নভেম্বরে হারান বৃদ্ধা মাকে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর
শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির পর তার শিশু সন্তানদের আশ্রয় ছিলেন তিনিই। তাই মায়ের মৃত্যুতে
দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাবুল আক্তার,
আর আশ্রয়হীন হলো তার দুই শিশু সন্তান।
সাবেক
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের জন্ম ১৯৭৫ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনপুর গ্রামে। বাবা আবদুল ওয়াদুদ
মিয়া ও মা শাহিদা বেগম। ২০০৪ সালে মাহমুদা আক্তার মিতুর সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন। দুই সন্তান আক্তার
মাহমুদ মাহির ও আক্তার তাবাচ্ছুম তানজিলা।
২০০৫
সালে পুলিশে যোগ দেন বাবুল আক্তার। সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে র্যাব-২-এ তার কর্মজীবন
শুরু। যোগদানের পরের বছর এই পুলিশ কর্মকর্তা পুরান ঢাকা থেকে নানা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার জাল সনদ উদ্ধার, সনদ তৈরির কারখানা
শনাক্ত এবং অপকর্মের দুই হোতাকে আটক করেন। ২০০৭ সালে কাঁধে নেন নরসিংদীর ভেলানগরের ছয় খুনের রহস্য উন্মোচনের
দায়। ঢাকা,
কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ঘুরে গ্রেপ্তার
করেন বীরুকে। হত্যারহস্য উন্মোচন করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে। বিচার শেষে আসামিদের
ফাঁসির রায় দেন আদালত।
এছাড়া
স্কুলশিক্ষিকা তানিয়া হত্যারহস্য উদ্ঘাটন; ১৪ বছরের কিশোর জাভেদকে
অহরণকারীদের হাত থেকে অক্ষত উদ্ধার ও অপহরণরহস্য উদ্ঘাটন; গৃহকর্মী রুমাকে হত্যার পর পুড়িয়ে সব আলামত নষ্টের পরও সূত্রহীন
সেই হত্যাকাণ্ডের সূত্র উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেপ্তার; রাউজানের বেসরকারি ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা
চুরির হোতা গ্র্যাজুয়েট চোরচক্রকে গ্রেপ্তার; চট্টগ্রামে ডাকাত সর্দার
খলিলকে ৯ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার, অজ্ঞান-মলমপার্টি-মোটরসাইকেল
চোরচক্র গ্রেপ্তার, ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় রকেট লঞ্চার, ছয় অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার, দুর্ধর্ষ ক্যাডার বিধান বড়ুয়ার কাছ থেকে জি-থ্রি রাইফেল উদ্ধার; চট্টগ্রামের কাদের ডাকাত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ত্রাস কিলার
ওসমানকে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করেছেন বাবুল আক্তার। সিএমপিতে যোগ দিয়েই
সর্বশেষ পুলিশ মার্ডার মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও খুনের কাজে ব্যবহৃত ‘কাটনি’
উদ্ধার করে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।
এসব
সাফল্যের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পেয়েছেন- রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা) (২০০৮), ২০০৯ পিপিএম (সাহসিকতা), ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ
মেডেল (সাহসিকতা)। সর্বশেষ বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা)
পুরস্কার লাভ করেন বাবুল আক্তার। আর এর মধ্যে চার-চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা
সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।
খবর বিভাগঃ
রংপুর বিভাগ
সারাদেশ
0 facebook: