14 January 2018

সাবেক ডিআইজি মিজানের তিন কোটি টাকার ‘স্বর্ণকমল’!

স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করাসহ নানা অপকর্মের জন্য প্রত্যাহার হওয়া সিলেটের সাবেক ডিআইজি (বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে

ডিআইজি মিজানুর রহমানের ক্ষমতার দাপটে গত কয়েক বছর ধরে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন তার ছোট ভাই মুহম্মদ স্বপন এবং তিন ভগ্নিপতিমেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের যাবতীয় তদবির বাণিজ্য, আসামি ধরা-ছাড়া, জিডি, মামলা, চার্জশিট সবই হতো ডিআইজি মিজানের ছোট ভাই স্বপন ও তার তিন ভগ্নিপতির ইশারায়এমনকি ডিআইজি মিজানের ছোট ভাই স্বপনের অন্যায় আবদার না রাখায় ২০১৬ সালের মাঝামঝি সময়ে বদলি করে দেয়া হয় মেহেন্দিগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই শাহজাহানকে

স্থানীয়রা জানান, মেহেন্দিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি ফার্মেসি রয়েছে মিজানের ছোট ভাই স্বপনেরওই ফার্মেসিতে বসেই পুলিশের সব বিষয়ে খবরদারি করতেন তিনি

স্থানীয়রা জানান, মেহেন্দীগঞ্জের পৌর শহরের আম্বিকাপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আকবরের দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে তৃতীয় মিজানুর রহমানঅভাব-অনটনে চলতো তাদের সংসারতাদের ছিল ছনের (কাঁচা) ঘরওই ঘরে বৃষ্টির সময় পানি চুয়ে পড়তোতবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজান ছোট বেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী১৯৮০ সালে মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট পিএম স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন তিনি৮২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েথাকতেন স্যার এফ রহমান হলে

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মিজানের পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পরই ভাগ্য খুলে যায় পুরো পরিবারেরদুই হাতে অর্থ কামিয়ে কয়েক বছর আগে মেহেন্দিগঞ্জ পৌর শহরের পাতারহাট-উলানিয়া সড়কের পাশে কালীকাপুর এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন বিশাল বাউন্ডারি ঘেরা বিলাসবহুল দোতালা বাড়ি আমেনা ভিলামেহেন্দিগঞ্জের লোকজনের কাছে ওই বাড়িটি স্বর্ণকমলহিসেবে পরিচিতঢাকার পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে তার একাধিক ফ্লাট-বাড়ি রয়েছে বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেনঅগাধ অর্থ সম্পদের মালিক মিজানের দুই ছেলেসহ স্ত্রী থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়তার দুই ছেলে পড়াশোনা করে সেখানেঅস্ট্রেলিয়ায় তিনি বাড়িও করেছেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন

মেহেন্দিগঞ্জের এক সাবেক সংসদ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শুধু মেহেন্দিগঞ্জে নয়, ঢাকা পুলিশ হেড কোয়ার্টারের যাবতীয় নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিআইজি মিজানঅবৈধ এ বাণিজ্য করে অগাধ টাকার মালিক হন তিনিমেহেন্দিগঞ্জে তেমন একটা আসা-যাওয়া না থাকলেও ঈদে এবং কোরবানির সময় এলাকায় আসতেন তিনিএলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দরিদ্রদের মধ্যে ডিআইজি মিজান অনেক দান-সদকা করতেন বলে জানিয়েছেন ওই সাবেক সংসদ সদস্য

মেহেন্দিগঞ্জের পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খান বলেন, এক সময় ছাত্রলীগ করতেন মিজানপরে পুলিশে চাকরি নেনএলাকায়ও তেমন আসেন নাতবে মেহেন্দিগঞ্জে একটা সুন্দর বাড়ি করেছেনসবাই বলে এসপি সাহেবেরবাড়ি আবার কেউ বলে স্বর্ণকমলসেই হিসেবে মিজানকে নামে চেনেন তিনিমেহেন্দিগঞ্জের একজন সন্তান পুলিশের বড় পদে চাকরি করায় এতদিন তাকে নিয়ে গর্ব করতেন স্থানীয় মানুষকিন্তু ঢাকায় নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় এখন সবাই ছি-ছি- করছেএটা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছেএটা লজ্জার বিষয়

স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই শাজাহান পাতারহাট বন্দরে কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেল আটক করেনডিআইজি মিজানের ক্ষমতাধর ভাই স্বপন মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেনকিন্তু এতে রাজি হননি এসআই শাজাহানডিআইজি মিজানের ভাইয়ের অন্যায় আবদার না রাখায় এসআই শাজাহানকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় বাবুগঞ্জের আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে

ডিআইজি মিজানের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তার ভাই ও তিন ভগ্নিপতিদের দাপটের বিষয়ে ওই সময়ে স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ করা হলে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মিজান ও তার ভাইওই সংবাদের প্রেক্ষিতে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়ে মেহেন্দিগঞ্জের তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা করান ডিআইজি মিজানওই মামলায় বরিশালের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এক কর্মকতার ওপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র পর্যন্ত দাখিল করানোর অভিযোগ রয়েছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধেযদিও পরবর্তীতে ওই মামলার বাদী আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়ায় ডিআইজি মিজানের রোষানল থেকে বেঁচে যান স্থানীয় তিন সাংবাদিক

মিজানের রোষানল থেকে বেঁচে যাওয়া মেহেন্দিগঞ্জের সাংবাদিক সঞ্জয় গুহ জানান, ডিআইজি মিজানের ক্ষমতার দাপটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর ডিআইজি মিজান ও তার ভাই স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেনএর এক সপ্তাহ পর তার অনুগত ইউপি সদস্য মনির চাপরাশীকে দিয়ে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন খোকন, তিনি (সঞ্জয় গুহ) এবং সঞ্জয় দেবনাথের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা করানওই মামলায় আদালত পিবিআইকে তদন্ত প্রতিদেন দেয়ার নির্দেশ দেয়কিন্তু পিবিআইর তৎকালীন পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন সরেজমিন তদন্ত না করেই ডিআইজি মিজানের প্রভাবে বরিশালে বসেই তাদের তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আদালতে প্রতিবেদন দেন


শেয়ার করুন

0 facebook: