28 January 2018

আওয়ামীলীগই আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ এখন


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনেক কৃতিত্ব ও পরিচিত অর্জন করেছেন নিজেদের দলের ভেতরকার ময়লা বাইরে ফেলার জন্য

এদিক দিয়ে তার সর্বশেষ কীর্তি হচ্ছে, ২৬ জানুয়ারি মানিকগঞ্জে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তার নানা বক্তব্য তিনি সেই সভায় আওয়ামী লীগের লোকজনকে সম্বোধন করে বলেন, ‘দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছেআপনাদের খারাপ ব্যবহারের কারণে দলের সুনাম ম্লান হয়ে যায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুনজনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান

এ ছাড়া তিনি নেতাকর্মীদের গ্রামে গিয়ে ঘরে ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দেখুন কে কোন্ পার্টি করেতার তালিকা করুননিরপেক্ষদেরও তালিকা তৈরি করুন।... ঘরের মধ্যে ঘর বানাবেন না দলের নেতাদের সম্পর্কে অপপ্রচার বন্ধ করে উন্নয়নের কথা জনগণকে বলুনআওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগঘরে ঘরে কলহদলের মধ্যে আরেক দলএসব কলহ, কোন্দল আর সহ্য করা হবে না’ (যুগান্তর ২৬.০১.২০১৮)

এসব যে খুব মজার মজার কথা এতে সন্দেহ নেইএতে মজা বেশি এ জন্য যে, এসব কথা খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখনিঃসৃত! এসব মজার কথার শানে নজুল হচ্ছে- আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন ভালো নেই তারা অন্য কথা বাদ দিলেও সাংগঠনিকভাবেও এক গভীর সংকটে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেবোঝা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের নানা অপকীর্তির সমালোচনা যে শুধু বিরোধী দলগুলোই করছে তা নয়তাদের অপকীর্তি এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যাতে দলের লোকরাও এখন এসব নিয়ে চুপ নেইতারাও মুখ খুলেছেদলের নেতাদের সম্পর্কে অপপ্রচার বন্ধ করার নির্দেশও মন্ত্রী তার দলের লোকদের দিয়েছেনএটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তাদের নিজেদের লোকরা কোনো কারণ ছাড়াই নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারচালাচ্ছেনতারা যা বলছেন এটা অপপ্রচারকখনোই হতে পারে না, যদি দলের নেতানেত্রীরা ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে থাকেনবাইবেলে আছে- Physician heal thyself, অর্থাৎ চিকিৎসক, আগে নিজের চিকিৎসা কর

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত নেতাকর্মীদের দলের নেতাদের সম্পর্কে অপপ্রচারবন্ধ করতে এবং জনগণকে দেশের উন্নয়নের কথা বলতে বলেছেনএটা ঠিক যে, দেশে এখন কিছু উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু এই উন্নয়নের অর্থ কী? এর কোনো ফল কি কোটি কোটি জনগণের, গরিব শ্রমজীবী মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে? আসলে তাদের অবস্থা আগে যা ছিল, তার থেকে এখন অনেক খারাপ হয়েছে

শিক্ষা, চিকিৎসার দুর্দশার কথা বাদ দিলেও, এখন তাদের খাওয়ার পাত থেকে মাছ, গোশত তো দূরের কথা, শাকসবজি পর্যন্ত উঠে গেছেএ কথা কে না জানে? বিশেষ করে জনগণের থেকে এটা বেশি আর কে জানে? দেশে যত উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে এখানে উন্নয়নেরঅন্য দিকের কথা বাদ দিয়ে সড়ক ও সেতুর কথা যদি ধরা যায়, তাহলেও বিষয়টি পরিষ্কার হবেদেশে অনেক সড়ক তৈরি হয়েছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরে অনেক উড়াল পুল হয়েছে

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, এই উড়াল পুলগুলোর খরচ বাংলাদেশে হচ্ছে চীনে যা হয়ে থাকে তার চার গুণ, ভারতের তিন গুণ এবং পাকিস্তান ও নেপালের দ্বিগুণ! এই বাড়তি খরচের টাকা কোথায় যাচ্ছে? এটা কি চরম এবং বেপরোয়া চুরি, দুর্নীতি লুটপাটের কারণে হচ্ছে না? আর এটা ঘটছে খোদ সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়েই

শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী ও আমলারা এই চুরি, দুর্নীতি, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই যে এটা হচ্ছে, এতে সন্দেহ কার আছে? এসব দুর্নীতির টাকা কি জনগণের, এমনকি আওয়ামী লীগের ছোট ও মাঝারি নেতাদের পকেটে পড়ছে? সেটা যদি হতো, তাহলে এই ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেনিযুক্ত হতে পারতেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যখন নিজেদের দলের নেতাকর্মীদের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারবন্ধ করার নির্দেশ দেন, তখন এসব প্রশ্ন কি অবান্তর?

অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি সাধারণ সম্পাদকের একটি নির্দেশ উল্লেখযোগ্যতিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছেন- গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে গিয়ে কে কোন্ পার্টি করছে, এমনকি যারা নিরপেক্ষ, তাদেরও তালিকা প্রস্তুত করতে এ ধরনের কর্মসূচির কথা বলা শুধু উদ্ভটই নয়, চরম অগণতান্ত্রিকনিজেদের অপকর্মের পরিবর্তে এভাবে তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশের অর্থ- যারা বিরোধী দল করে, এমনকি যারা নিরপেক্ষ তাদেরও হিসাব করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সবরকম দমন-পীড়নের পাঁয়তারা করা

এই দমন-পীড়ন মানুষের সহ্যসীমার বাইরে ইতিমধ্যে চলে গেছেকিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে আরও বৃদ্ধি করার মতলবেই যে এ তালিকা প্রস্তুত করার প্রয়োজন তাদের হচ্ছে, এ বিষয়ে মূর্খ অথবা মতলববাজ ছাড়া আর কার সন্দেহ থাকতে পারে? দেশে এখন সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্দশার শেষ নেইমানুষের জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত ভয়াবহভাবে বিপন্নখুন, গুম, ধর্ষণ- ছাত্রলীগ-যুবলীগ ইত্যাদির ব্যাপক গুণ্ডামির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবন ও মান-ইজ্জতের নিরাপত্তা বলতে আজ আর কিছু নেই

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীরও এ কথা বলতে অসুবিধা হয় না যে, তাদের শাসনে বাংলাদেশের মানুষ এখন সুখে-শান্তিতে আছে, তাদের জীবনে নিরাপত্তা আছে, যা ক্ষমতায় এলে অন্য কোনো দলের পক্ষে জনগণকে দেয়া সম্ভব নয়! কাজেই আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় আসা দরকারতবে বুঝতে অসুবিধা নেই, নিজেদের জন্য ক্ষমতায় ফিরে আসা তাদের দরকার

জনগণের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই, এ কথা বলা যে এক হাস্যকর ব্যাপার এতে সন্দেহ নেই সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগঘরে ঘরে কলহ! দলের মধ্যে আরেক দলতাদের এই স্বীকৃতির অর্থ কি এই নয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুধু বিরোধী দলগুলোর দ্বারাই হচ্ছে তাই নয়, শীর্ষ নেতাদের চুরি-দুর্নীতি, লুটতরাজের কোনো বখরা বা ফায়দা নিচের স্তরের নেতাকর্মীরা না পাওয়া এবং সেটা শুধু নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার ফলেই আওয়ামী লীগ এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছে? এর অর্থ কি এই নয় যে, আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে আওয়ামী লীগ সংগঠনের মধ্যে ভালোভাবেই ভাঙন ধরেছে? আর এই ভাঙন বা সংকট সামাল দেয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়েই এখন তারা ঘরের ময়লা বাইরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন?

এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র একেবারেই শিকেয় তুলে আওয়ামী লীগ নিজেকে রক্ষার জন্য আরও ব্যাপক আকারে দমন-পীড়নের উদ্দেশ্যে যে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও সমগ্র প্রশাসনকে ব্যবহারের চেষ্টা করবে এতে সন্দেহ নেই বিরোধী দলের সবরকম গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ণ হরণ করে তাদের বিরুদ্ধে জেলজুলুম ছাড়াও নানা ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করে নির্বাচনে জয়লাভের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ সরকার এখন মরিয়া হয়েছে

২০১৪ সালে তারা এভাবেই একটি ভুয়া নির্বাচন করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় ফিরে এসেছিলকিন্তু এবার সে চেষ্টার পুনরাবৃত্তি করলে আওয়ামী লীগের জন্য যে তা সুফল বয়ে আনবে, এটা মনে করার কারণ নেই


শেয়ার করুন

0 facebook: