30 January 2018

এবার ডিসিরা দেবেন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যেখানে বলা হয়েছে যে, গোয়েন্দা সংস্থা নেতিবাচক রিপোর্ট দিলেই কোন কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে যাবে নাকারও রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির কাছ থেকে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট আনা হবেউপসচিব পদে আসন্ন পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসএসবি (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে২৪তম ব্যাচের পদোন্নতির বিষয়ে সোমবার এসএসবির চূড়ান্ত পর্যায়ের বৈঠক বসেসেখানে মাঠপর্যায় থেকে আনা এ ধরনের বেশ কিছু প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছে

ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে বরাবরই অনেকের আপত্তি ছিলশুধু বর্তমান সরকার নয়, প্রতিটি সরকারের আমলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছেআবার এটাও বলতে হবে যে, সব গোয়েন্দা প্রতিবেদন অসত্য নয়তবে অনেকটা বাস্তবতা হল- অপছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দেয়ার জন্য অনেক সময় দায়সারা গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থিত করে তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়

এছাড়া অভিযোগ আছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তার সপক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য থাকে নাকিন্তু ওই রিপোর্ট আমলে নেয়ার ফলে অনেক মেধাবী ও দলমত নিরপেক্ষ কর্মকর্তাও প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে ছিটকে পড়েনসেজন্য দলমত নির্বিশেষে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ভালোভাবে যাচাই করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনেরজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও প্রায় ২ বছর আগে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেননথিতে কড়া মন্তব্যও লেখেনসেই থেকে সংকটের সমাধান তালাশ করা হচ্ছিলকেউ কেউ বলছেন, এখন সেটি কিছুটা হলেও হালে পানি পাবে

সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে সম্প্রতি কিছু জটিলতা দেখা দেয়একই কর্মকর্তার বিষয়ে দুবার দুরকম রিপোর্ট দেয়ার প্রমাণও মেলেএরকম বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়লে বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে যথাস্থানে অবহিত করা হয়এরপর বিষয়টি নিয়ে এসএসবির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এখন থেকে যেসব গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দেখা দেবে সেসব কর্মকর্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির কাছ থেকে পৃথক প্রতিবেদন আনা হবে

কেননা, তথ্যনির্ভর প্রকৃত রিপোর্ট ডিসির পক্ষে বের করে আনা সম্ভবএ উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন কর্মকর্তার বিষয়ে ডিসিদের কাছ থেকে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট আনা হয়েছেসেক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সঙ্গে কোনো বিপরীত চিত্র বেরিয়ে এসেছে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে নাতবে এতটুকু বলতে পারি, এ ধরনের উদ্যোগ পদোন্নতির ক্ষেত্রে খুব কাজে দেবে

এসএসবিকে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সহায়তা করবেএক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখুন নিখুঁতভাবে কখনও কোনো সরকারের সময়ে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে নাআমরা চেষ্টা করছি এ অভিযোগ থেকে কতটা বেরিয়ে আসা যায়ইতিমধ্যে তার প্রমাণ মিলেছেসাম্প্রতিক সময়ে যে কটি পদোন্নতি হয়েছে সেখানে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ ওইভাবে ছিল নাঅপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করা বর্তমান সরকারের মূল নীতি তাই একজন কর্মকর্তা যতই মেধাবী হোক না কেন তার ভেতরে যদি এর বিপরীত আদর্শ কাজ করে তাহলে তাকে পদোন্নতি থেকে বিরত রাখার জন্য কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট কিংবা পৃথক নীতিমালার প্রয়োজন হবে নাতারপরেও বলব, এসএসবির সদস্যদের পক্ষে সব কর্মকর্তাকে বাহ্যিকভাবে চেনা-জানা সম্ভব নয়সেজন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়

এদিকে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পদোন্নতি প্রত্যাশী বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, এতদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্দের ভালো হলেও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেতারা মনে করেন, যদি ডিসিদের কাছ থেকে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স হিসেবে তথ্য নেয়া কিংবা যাচাই করা হয় তাহলে ভুক্তভোগী অনেকে উপকৃত হবেনঅন্তত প্রকৃত তথ্য জানতে পারবে এসএসবি

তারা বলেন, ডিসি চাইলে একজন কর্মকর্তার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত কম সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে তুলে আনতে পারবেনকেননা তার এ ধরনের ব্যাপক কানেকটিভিটি আছেআর ডিসি পদোন্নতি প্রত্যাশী হলে সে বিষয়ে ডিসির পাশাপাশি বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেয়া যেতে পারে ২০১৬ সালের মে মাসে যুগ্মসচিব পদোন্নতির সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুরু থেকেই একটি বিষয় পরিষ্কার হতে চেয়েছিলেনসেটি হল- যাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে এবং যাকে দেয়া হবে না, তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা উল্লেখ করতে হবেকিন্তু সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে ব্যাখ্যাটি দিতে না পারায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এ সংক্রান্ত কার্যবিবরণী পড়েছিলসবশেষে নানামুখী চাপে মন্ত্রী স্বাক্ষর করলেও সেখানে তিনি তার নৈতিক অবস্থান ঠিকই তুলে ধরেন

সারসংক্ষেপ অনুমোদনের সময় মন্ত্রী তার মতামত তুলে ধরে লেখেন, ‘এসএসবির কার্যবিবরণী সংবলিত সারসংক্ষেপ দেখলামএতে ৭৩ জন কর্মকর্তাকে সরকারের যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছেযেসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করতে না পারার কারণ হিসেবে তার নামের বিপরীতে পদোন্নতি সংক্রান্ত বিধিমালার ৪(২)নং বিধি উল্লেখ করা হয়েছেতা যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে হয় নাএজন্য পরবর্তীকালে এ বিধিটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কর্মকালীন দায়িত্বের গুরুত্ব ও প্রকৃতি এবং ব্যক্তিগত সুনাম সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে

তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘প্রস্তাবিত ৭৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছেপদোন্নতিবঞ্চিতরা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তার ব্যক্তিগতভাবে চেনেন-জানেন এমন কর্মকর্তারাও বাদ পড়েছেনআবার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারের মতাদর্শী কর্মকর্তারাও সুপারিশকৃত হননিতাই এ প্রতিবেদনকে পদোন্নতির সুপারিশের ভিত্তি হিসেবে ভবিষ্যতে গ্রহণ করা না করা কিংবা এ সম্পর্কে বিকল্প চিন্তার অবকাশ রয়েছেগোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে মন্ত্রীর এমন নীতিগত অবস্থানের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাকে সাধুবাদ জানানসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকটা বিলম্ব হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী আশরাফুল ইসলামের চিন্তার প্রতিফলন কিছুটা হলেও পূরণ হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: