স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বিএনপি
চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির
দাবিতে বিএনপির বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করবে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ
কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির
দাবিতে বিএনপির বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হবে।
রিজভী বলেন,
গত কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমে জানতে পারলাম- আবারো গ্যাস ও
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের
ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর চালের মূল্য বর্তমানে আবারো ৫০ থেকে ৭০ টাকা। বর্তমানে সাধারণ মানুষ কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। গরীব মানুষরা পেট ভরে ভাত খেতে
পায় না। বিদ্যুতের অভাবে এই সেচ মৌসুমে
কৃষি কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তার ওপর সরকার গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা শুধু
ধ্বংসাত্মক নয়, গরীব মানুষকে পথে বসিয়ে দেয়ার
ষড়যন্ত্র। সরকারের এই গণবিরোধী ও
জনস্বার্থবিরোধী এবং রক্তশোষণের নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলেই বাক স্বাধীনতা,
মানুষের মৌলিক-মানবাধিকার তথা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতীক
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। ভয়ঙ্কর এক খেলায় মেতেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাবন্দি
করা যেন শেখ হাসিনার বহুদিনের মনের আশা। সেটি পূরণ করতে পেরে তিনি এখন আরও আদিম উল্লাসে বেপরোয়া। : ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের
সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল বলেছেন- দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সরকার হটানোর
ষড়যন্ত্র করছে। আমি বলতে চাই- রাষ্ট্রক্ষমতা
দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করতে নীল নকশা করছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা ও জাল নথির মাধ্যমে
সাজানো মামলায় কারাগারে পাঠানো সেই নীল নকশারই অংশ।
বিএনপি
চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায়
সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা ঘোষণাসহ বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বানোয়াট মামলায়
জড়ানো, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
ন্যক্কারজনক হামলা এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে সুযোগ না দিয়ে নিজেরা আগামী একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকারী খরচে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো ইত্যাদি
কর্মকান্ড প্রমাণ করে বিএনপি নয় বরং আওয়ামী লীগই ক্ষমতা ধরে রাখতে সুপরিকল্পিত
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং সরকারই তো ষড়যন্ত্রের হেড মাস্টার, যারা ক্ষমতা জোর করে ধরে রেখে, গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে,
বিরোধী দলকে রাজপথে লাঠিপেটা করে, ব্যাংক বীমাসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদরপূর্তি করে গুহায়
বাসকারী দস্যু দলের মতো দেশ চালাচ্ছেন,্ তারাই বলছেন
ষড়যন্ত্রের কথা। সত্যিই উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। : তিনি বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে
সমাদৃত ও জনপ্রিয় নেত্রীকে প্রতিহিংসার জেদে আটকিয়ে রাখার পরিণতি তিনি টের পাচ্ছেন
না। পতনের হাতছানি শেখ হাসিনা
অনুধাবন করতে পারছেন না। শেখ হাসিনা যে গুন্ডাশাহী কায়েম করেছেন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তিনি সহ্য করবেন
কেন? সেইজন্যই তিনি বিএনপির ওপর জলকামান, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট, গরম ও রঙ্গিন পানি এবং বেধড়ক লাঠিচার্জের যথেচ্ছ ব্যবহার
করছেন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারও
এখন কারাবন্দি। অপশাসনের মারাত্মক বিভীষিকায়
সারাদেশের জনগণও যেন বন্দি শিবিরে আটকানো। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের এ
ধরনের গণবিধ্বংসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে
মানুষের রক্তচোষা এই উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে
রিজভী বলেন, লুটপাট, বেপরোয়া
দুর্নীতি ও বিরোধী মত দমনসহ নিজেদের অনাচার ঢাকতে সরকার প্রধানের সারবত্তাহীন
হুংকারসর্বস্ব বক্তৃতা, তার মিথ্যা আশাবাদ, লোক দেখানো উন্নয়নের নামে নিজেদের লোকজনের ব্যাপক
চৌর্যবৃত্তির সুযোগ এবং বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর মধ্য দিয়েই এরা দিন পার করছে। সেজন্য পুলিশ দিয়ে ক্ষমতা ধরে
রেখেছে। এই দেশকে বাঁচাতে হলে
ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্নীতিবাজ সরকারের মূলোৎপাটন ঘটাতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির
সদস্য ও যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নি গতকাল
হাইকোর্ট থেকে মিথ্যা মামলায় জামিন নিয়ে বিমানযোগে যশোর গেলে পুলিশ তাকে যশোর
এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে সাবিরা নাজমুল মুন্নিকে জামিন লাভের পরও গ্রেফতারের ঘটনায়
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
এছাড়া কুষ্টিয়া
জেলা বিএনপি নেতা আবদুল করিম এবং গোলাম রাব্বানীকে গতরাতে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করলেও
তারা বিষয়টি স্বীকার করছে না। আমি দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে বিএনপি নেতা আবদুল করিম এবং গোলাম রাব্বানীকে
জনসমক্ষে হাজির করার করার দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল
ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী
কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা
দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ।
0 facebook: