স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মালদ্বীপে রাজনৈতিক
সঙ্কট ঘিরে নানা ধরনের অস্থিরতা থাকায় নিজ নিজ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপে
যাত্রায় সাধারণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত ও চীন। কারন গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে
পড়েছে মালদ্বীপ। সোমবার এই দ্বীপরাষ্ট্রে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। সাবেক
প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম এবং প্রধান বিচারপতিসহ কয়েকজন বিচারপতিকে আটক করা
হয়েছে।
সম্প্রতি চীনের
সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলে মালদ্বীপের উপর ক্ষুব্ধ হয় ভারত আর ইয়ামিন বিবেচিত
হন চীনপন্থী হিসেবে। অন্যদিকে পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বিবেচিত হন ভারতপন্থী
হিসেবে।
সোমবার, ১৫ দিনের
জরুরি অবস্থা জারি করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। এদিন
প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে সরকারি টিভি চ্যানেলে এই ঘোষণা করেন তার সহযোগী তথা দেশের
আইনবিষয়ক মন্ত্রী আজিমা সোখুর। অর্থাৎ, দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নিলেন
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন। সামরিক বাহিনীর হাতে পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হলো, তারা
যে কোনও সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার ও আটক করতে পারে।
কয়েক বছর ধরেই
মালদ্বীপে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। তবে মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে
রাজবন্দিদের মুক্তির নির্দেশ দিলে উত্তেজনা সঙ্কটে রূপ নেয়। সরকার সুপ্রিম কোর্টের
এই সিদ্ধান্ত মানেনি। যাদেরকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের
মধ্যে ১২ জন এমপি রয়েছেন। তারা পার্লামেন্টে যোগ দিতে পারলে ইয়ামিনের ক্ষমতাসীন দল
পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। ফলে ইয়ামিনের পক্ষে দেশ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনকি
তাকে ইমপিচমেন্ট করা হতে পারে বলেও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।
এই বিষয়টি বুঝতে
পেরেই তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাতিল করে দেন ইয়ামিন। উল্টা সুপ্রিম
কোর্টের সমালোচনা করেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট
তার এক্তিয়ার-বহির্ভুত কাজ করেছে। ইয়ামিনের দফতরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়,
সর্বোচ্চ
আদালতের নির্দেশ মানা হবে না।
সাধারণত, দেশে
জরুরি অবস্থা জারি করার অন্তত ২ দিন আগে পার্লামেন্টকে জানাতে হয়। কিন্তু
এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি পার্লামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি করে দেন প্রেসিডেন্ট।
শুধু তাই নয়। পার্লামেন্টের বাইরে মোতায়েন করা হয় সামরিক বাহিনীকে। যাতে কোনো এমপি
ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন।
এই নিয়ে দুবার
জরুরি অবস্থা জারি করলেন ইয়ামিন। এর আগে ২০১৫ সালে তার ওপর প্রাণঘাতী হামলার
অভিযোগ ওঠার সময়ও তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। সেবারও মালদ্বীপে রাজনৈতিক
অস্থিরতা হয়েছিল। এবারও, সেদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করল বলেই
মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
দেশটিতে ইয়ামিন বিবেচিত
চীনপন্থী হিসেবে। সম্প্রতি তিনি চীনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলে ভারত
ক্ষুব্ধ হয়। পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ভারতপন্থী হিসেবে বিবেচিত। তিনি
ইয়ামিনের পদত্যাগ চাইছেন। ইয়ামিনের সৎ ভাই ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল
গাইয়ুমও এখন নাশিদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, আসন্ন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কারাদণ্ড হওয়ায় নাশিদ ওই
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গাইয়ুমের মেয়ে জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তার
বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। বিবিসি জানিয়েছে, ভোর রাতের দিকে
প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোটের আরো কয়েকজন বিচারপতিকে আটক করা হয়।
এদিকে সাম্প্রতিক
সময়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ একাধিক রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি নিয়ে ইয়ামিনের
ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিল ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক
মহল।
ইতিমধ্যেই সেদেশে
যাওয়ার বিষয়ে ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি (নিষেধাজ্ঞাস্বরূপ নির্দেশিকা) জারি করেছে ভারত
ও চীন। উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদাভাবে বলা হয়েছে, একান্ত
প্রয়োজন ছাড়া মালদ্বীপ যাত্রা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। পাশাপাশি, মালদ্বীপের
ভারতীয় দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের সুরক্ষা
ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: