প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের ৭৩তম অধিবেশনের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাপী মানবতার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক সময় সন্ধ্যা ৭টার পর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভাকক্ষে সবুজ মারবেল পাথরের সামনে ইতিহাস সৃষ্টি করতে ১৩তম বারের মতো দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। এসময় দর্শক সারিতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মুহুর্মূহু করতালিতে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। যথারীতি বাংলা ভাষায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। সাথে সাথে ১৮টি ভাষায় ভাষান্তর হতে থাকে তার বক্তব্য।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের ৭৩ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ নারী হিসেবে সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় মারিয়া ফারনেন্দা গার্সেসকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্যের মূল পর্বে প্রবেশ করেন।
বক্তব্যের শুরুর দিকে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুয়াল্লিশ বছর আগে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন: ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সকল নর-নারীর গভীর আশা-আকাক্সক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে। এই দুঃখ-দুর্দশা ও সংঘাতপূর্ণ বিশ্বে জাতিসঙ্ঘ মানুষের ভবিষ্যৎ আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রস্থল’।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। দেশের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের জনগণের। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একইসাথে তারা আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা, আমার তিন ভাই, যাদের মধ্যে ছোট ভাইটির বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর, নবপরিণীতা দুই ভ্রাতৃবধূসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করে। আমি ও আমার ছোটবোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে যাই। কিন্তু আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। সে সময়কার ক্ষমতা দখলকারী সামরিক একনায়ক ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এই নৃশংস হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত হারিয়েছিলাম।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উপস্থাপন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে বিবরণ জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাতে আমরা হতভম্ব। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ভূমিকায় হতাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশাহত হয়েছি, কেননা আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই আমরা তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে, মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময়ই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।
বাংলাদেশে অবস্থানরত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সহযোগিতা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন রোহিঙ্গারা যতদিন তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে না পারবেন, ততদিন সাময়িকভাবে তারা যাতে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, সে জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে আমরা নতুন আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে যেতে পারেন তার জন্যও আমি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোর আরোপ করে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। জাতিসঙ্ঘের সাথে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদসহ সকল সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ভূখন্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমরা পরিচালিত হতে দেব না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সহিংস উগ্রবাদ, মানবপাচার ও মাদক প্রতিরোধে আমাদের সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার নীতি বিশেষ সুফল বয়ে এনেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গৃহীত গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন দ্য ড্রাগ প্রবলেম-এর সাথে বাংলাদেশ একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সময়োপোযোগী সহায়তা অব্যহত রাখার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে তিনটি মৌলিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তা হলÑ শান্তি, মানবতা ও উন্নয়ন। তাই মানবসমাজের কল্যাণে আমাদের মানবতার পক্ষে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব কর্তৃক হাইল লেবেল প্যানেল অন ডিজিটাল কোঅপারেশন প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানাই। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূল দর্শন হল জনগণের কল্যাণ। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ব্যাপক প্রচলনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবরূপ ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আমরা মহাকাশ প্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করেছি। বস্তুত এটি ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ভূ-কেন্দ্র স্থাপন করার মাধ্যমে তিনি যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত হয়েছে।
আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিগত নয় বছরে বাংলাদেশ চমক সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের বিবেচনায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছরে ছিল শতকরা ৭.৮৬ ভাগ। মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৫.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের শতকরা ৪১.৫ ভাগ থেকে শতকরা ২১.৮ ভাগে হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে হত দরিদ্রের হার ২৪ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারি বিনিয়োগ ২০০৯ সালে ছিল শতকরা ৪.৩ ভাগ। ২০১৮ সালে তা ৮.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালের ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হতে ২০১৮ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কয়লাভিত্তিক সুপারক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। সঞ্চালন লাইনবিহীন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঁচ দশমিক পাঁচ (৫.৫) মিলিয়ন সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করছি যা প্রায় দশ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূত উন্নয়ন সাধন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি বছর তেতাল্লিশ দশমিক সাত-ছয় (৪৩.৭৬) মিলিয়ন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনশ চুয়ান্ন দশমিক নয়-দুই (৩৫৪.৯২) মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয়েছে। দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের মাতৃভাষার বই দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রায় কুড়ি দশমিক শূন্য-তিন (২০.০৩) মিলিয়ন শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। চৌদ্দ (১৪) মিলিয়ন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মায়েদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষার হার গত সাড়ে ৯ বছরে শতকরা ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বায়াত্তর দশমিক নয় (৭২.৯) শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নজির স্থাপন করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংসদই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, স্পীকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা নারী। বর্তমান সংসদে ৭২ জন নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি, সেবা ও শিল্পখাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন নারী কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সর্ববৃহৎ উৎস তৈরি পোশাক খাতে প্রায় চার দশমিক পাঁচ (৪.৫) মিলিয়ন কর্মীর ৮০ শতাংশই নারী। নারী উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়াই ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ব্যাংক ঋণের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তহবিলের ১০ শতাংশ এবং শিল্প প্লটের ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনাবেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীর অনুপাত ৫৩-৪৭। ২০০৯ সালের শুরুতে যা ছিল ৩৫-৬৫।
প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোতে তার সরকারের সাফল্য গাঁথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, গত সাড়ে নয় বছরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। যে বাংলাদেশকে বলা হত দুর্যোগ, বন্যা-খরা-হাড্ডিসার মানুষের দেশ, তা এখন বিশ্বশান্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদের ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের পথচলা এখনও শেষ হয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি চলমান নির্যাতনে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন আজো অব্যাহত রয়েছে যা আমাদের মর্মাহত করে। এ সমস্যার আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন। ওআইসি-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে আমরা ওআইসি-র মাধ্যমে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাব।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টা পাল্টি বিক্ষোভ
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসঙ্ঘে ভাষণকে কেন্দ্র করে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের সামনে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসঙ্ঘে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসঙ্ঘে ‘না’ বলতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন ও মহিবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ স¤্রাট, সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহম্মেদ, সাবেক সেক্রেটারি জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সহ-সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ মালেক প্রমূখ।
এছাড়াও দেশে মানবাধিকার হনন, গুম, খুন হত্যার বিষয়টি বিশ্বনেতৃবৃন্দের দৃষ্টিতে আনতে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশি আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ ও কোবা। এসময় তাদের হাতে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, ব্যারিস্টার আমান আজমী, ব্যারিস্টার আরমানসহ বেশ কয়েকজন গুম হওয়া ব্যক্তির ছবি দেখা যায়। এছাড়াও আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: