02 November 2018

ভারতের চাকরিক্ষেত্র থেকে মুসলিম অপসারণে প্যাটেলের ভূমিকা ও নরেন্দ্র মোদির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (১)


গত কয়েকদিন ধরে পাশ্ববর্তী ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মূর্তিউদ্বোধন করা নিয়ে মিডিয়া ও অনলাইনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি নিজে বিজেপির সদস্য হয়েও কেন বল্লভ প্যাটেলের মতো কংগ্রেস নেতার মূর্তি উদ্বোধন করলেন, এই প্রশ্নই সেদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে ঘোরপাক খাচ্ছে। কিন্তু উত্তর কেউই সঠিকভাবে দিতে পারছে না, কিংবা ইচ্ছা করেই দিচ্ছে না।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস সবসময়ই ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশে আগ্রাসী মুসলিমবিদ্বেষী নীতি বাস্তবায়ন করে এসেছে। বিহার দাঙ্গা, কিংবা শিখদের উস্কানী দিয়ে পাঞ্জাবে যে দাঙ্গা হয়েছিল সাতচল্লিশে কংগ্রেসী হিন্দুদের দ্বারা, তার কাছে মোদির গুজরাট দাঙ্গা নেহায়েত শিশু। সাতচল্লিশে কংগ্রেস ক্ষমতা নেয়ার পর ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে অনেকরকম পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল, যার অন্যতম ছিল চাকরিক্ষেত্র থেকে মুসলিম অপসারণ। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় ইতিহাসবিদ গোলাম আহমাদ মোর্তজা তার ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়বইতে সাংবাদিক গৌতম রায়ের বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ- একদা কংগ্রেস আমলে উত্তরপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে মুসলমান নিয়োগ বন্ধ ছিল। তৎকালীন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (উত্তরপ্রদেশের) রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য স্বীকার করেছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী মহাবীর ত্যাগী সংসদে স্বীকার করেছিল, স্বাধীনতার পর রেল, যোগাযোগ, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বিভাগে মুসলমানদের অনুপাত ৩২ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। বল্লভ প্যাটেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সার্কুলার জারি করেছিল, প্রশাসনের মূল এবং নিয়ন্ত্রক ক্ষেত্রগুলিতে যেন মুসলমানদের প্রবেশ না ঘটে।

বল্লভ প্যাটেল এই যে সার্কুলারজারি করেছিল প্রশাসনের মূল ও নিয়ন্ত্রক ক্ষেত্রগুলো থেকে মুসলমান অপসারণের লক্ষ্যে, তার অনুলিপি রামচন্দ্র গুহের গাঁধী উত্তর ভারতবর্ষবইতে দেয়া হয়েছে। সার্কুলারে ভারত সরকার কর্তৃক কাশ্মীর ও হায়দারাবাদে দমনমূলক নীতি অবলম্বন করার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতেই প্যাটেল তার সার্কুলারে লিখেছিল যেঃ- কাজেই কোনওরকম গোপন ও অপ্রকাশ্য কাজের ভার মুসলমানদের না দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে মুসলমান না বসানোটা অত্যন্ত জরুরী। আগ্রহীরা বইটির ৩২৯ পৃষ্ঠায় সার্কুলারটি দেখতে পারবে। (http://bit.ly/2qlL3fg)

একদা মুসলিমশাসিত ভারত যে বর্তমানে হিন্দুপ্রধান একটি রাষ্ট্র, এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সেদেশের প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে মুসলমানের অনুপস্থিতি। সাতচল্লিশের পরপরই প্রশাসন থেকে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম অপসারণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বল্লভ প্যাটেল, যা কিনা বর্তমানে মোদির উগ্র হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। একারণেই সন্ত্রাসী মোদি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ প্যাটেলের এমন মূর্তি বানিয়েছে, যা কিনা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ (এমনকি সবচেয়ে কুৎসিতও বটে)।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাকিস্তান গঠনের পর হিন্দু বিতাড়ণের অনুরূপ কোনো পদক্ষেপই অসাম্প্রদায়িক মুসলিম নেতারা নেননি। যে কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষক দ্বারা মুসলিম ছাত্রী ধর্ষণ করা হয়, অনলাইনে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা হয়, দেবোত্তর সম্পত্তির নামে মুসলমানদের জমি দখল করে নেয়া হয়। তবে প্যাটেলের আরো একটি প্রধান ভূমিকা রয়েছে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর, তা হলো মুসলিমপ্রধান নয়াদিল্লী শহরটিতে দাঙ্গা করে মুসলমান অপসারণ সেখানে পাঞ্জাবী রিফিউজি হিন্দু আর শিখদের জায়গা করে দেয়া। এই কারণেই নয়াদিল্লী শহরটি সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়ে হিন্দুশাসিত ভারতরাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠে, যে সম্পর্কে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে।

লিখেছেনঃ ধর্ম, রাজনীতি, ইতিহাস গবেষক, আমেরিকা প্রবাসীঃ গোলাম মোরশেদ।


শেয়ার করুন

0 facebook: