ছবিঃ বাসস |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো বৈশ্বিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটেনের বৈদেশিক দফতর ও কমনওয়েলথ কার্যালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এমপি রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে রোহিঙ্গা তরুণদের কাজকর্ম না থাকা এবং তাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় হতাশা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ওই এলাকায় একটি বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কেননা সংখ্যায় তারা স্থানীয় জনসাধারণকে ছাড়িয়ে গেছে। কাজেই স্বার্থান্বেষী মহল তাদের মধ্যে বিদ্যমান হতাশাকে খারাপ উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষাকালে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। অবশ্য সরকার তাদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য একটি দ্বীপকে উন্নত করে গড়ে তুলছে। সফররত যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা আখ্যায়িত করে তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সরকারের কাছে জানতে চান। এ সময় যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জনের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক লাভের স্বার্থেই বাংলাদেশে আরও ব্রিটিশ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। তিনি এ সময় ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের আরও বেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। মার্ক ফিল্ড বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ করে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে ব্রিটেনের অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুর ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই দেশের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করে বেসরকারি মালিকানাধীন বেশকিছু টিভি চ্যানেল অনুমোদনের কথাও জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম এখন সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। বৈঠকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটেনের আরও সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার চ্যাটারটন ডিকসন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় : ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড রোববার গুলশানে হোটেল আমারিতে তার সফর সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, এটা আমার তৃতীয় বাংলাদেশ সফর। এবারের সফরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সন্ত্রাস দমন প্রভৃতি নানা বিষয়ে আলোচনা করেছি। ব্রেক্সিটের পরও বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মর্যাদার সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাবে বলে আশা করি। পাশাপাশি কেউ স্বেচ্ছায় ভাসানচরে গেলে তাদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষাকাল রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রোহিঙ্গা ইস্যুর সুরাহা করায় ভূমিকা পালন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ আছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য গণতন্ত্র ইতিবাচক। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন বলে জানান তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে কী জবাব দিয়েছেন তা বলেননি।
মার্ক ফিল্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, পোশাক শিল্প, জ্বালানি, অবকাঠামো, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমানকে ফেরত দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির অভিবাসন স্ট্যাটাস প্রকাশ না করা ব্রিটিশ নীতি। তাই তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে বলেন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতরের বিবেচনাধীন।
ইতালির রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চামড়া খাতের উন্নয়নে ইতালির সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চামড়া খাতে আপনাদের সহযোগিতা চাই যেহেতু আপনাদের চামড়াজাত পণ্য গুণে ও মানে সেরা।
বাংলাদেশে ইতালির নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা রোববার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ইতালির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তার দায়িত্ব পালনকালে সরকারের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশকে তিনি নিজেই তার কাজের ক্ষেত্র হিসেবে পছন্দ করেছেন উল্লেখ করে ইতালির রাষ্ট্রদূত এররিকো নুনজিয়াতা বলেন, তিনি দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করবেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, সহযোগিতার এই ক্ষেত্রগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি এ সময় বাংলাদেশে বস্ত্র এবং অন্যান্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে তার দেশের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতালীয় দূত বলেন, তিনি পৃথিবীর বহু দেশের প্রেরণার উৎস। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
0 facebook: