নয়ন চ্যাটার্জীঃ বাংলাদেশের, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের ইউনিট চালায় কে? এদের প্রত্যেকের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটুকু অবগত? এরা যে মাঝেমধ্যেই আমেরিকারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রেনিং আনতে যায়, তখন ঐ দেশের এজেন্ট/এজেন্সী তাদের মধ্যে ঢুকে যায় কি না?
বিষয়গুলো আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, কারণঃ আমেরিকার হইলো দুই হাত, তার এক হাত নিজেই জঙ্গী এবং অন্য হাত দিয়ে সে জঙ্গী দমন করে। এই দুইহাতের কারসাজির মাঝখানে কোন দেশকে ফেলে তার জীবন শেষ করে।
বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দরকার আছে, আমি তা অস্বীকার করতেছি না কিন্তু তাদেরকে মনিটরিং করার মত সরকারের আলাদা কোন নিরপেক্ষ সেল থাকা উচিত।
এমনও তো হতে পারে, বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট নিজেই আমেরিকার এক হাত হয়ে, অন্য হাতকে ডেকে আনার পথকে সুগম করতে পারে, তাই সাবধান থাকা ভালো।
বিষয়গুলো বেশি সন্দেহজনক, কারণ বিভিন্ন সময় তারা যে সব কথিত উগ্রবাদী ইনডিকেটর ছড়ায়, সেগুলো দেখলে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, আদৌ কি তাদের উদ্দেশ্য জঙ্গী দমন, নাকি আমেরিকার এক হাত হয়ে জঙ্গী প্রোপাগান্ডা তৈরী করা?
কারণ সরকারের মূল পলিসি হলো বার বার প্রচার করা, “বাংলাদেশে জঙ্গী নাই”, সেখানে এই গ্রুপটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের বিভিন্ন লক্ষ্যণকেই জঙ্গিবাদী বলে প্রচার করছে, আশ্চর্য!!
আমি আগের এক পোস্টে বলেছিলাম- সরকারের উচিত এ অঞ্চলে কথিত জঙ্গীবাদী কার্যক্রমের দিকে খেয়াল করে, কথিত জঙ্গীবাদীদের ধর্মীয় পরিচয় বাদ তাদের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে যাওয়া।
বিশেষ করে- এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রক্সিওয়ার যত দৃঢ় হবে, তত এ অঞ্চলে মার্কিন জঙ্গী জঙ্গী নাটক বৃদ্ধির সম্ভবনা আছে। এ অবজ্ঞায় মার্কিনপন্থীদের মূল উদ্দেশ্য হবে চীনের সম্ভাব্য প্রভাব যে কোন উপায়ে ঠেকানো। এই ঠেকানোর কাজটি সে অনেকগুলো আর্টিফিসিয়াল ফেসে করতে পারে। এরমধ্যে একটি জঙ্গীবাদী ফেস হতে পারে, কিন্তু এটাই একমাত্র ফেস নয়, এরকম আরো ডজনখানের ফেস আছে। এক্ষেত্রে সহজ হতো, যদি কথিত জঙ্গী নামক ধর্মীয় ফেস বাদ দিয়ে, যারা তাদেরকে চালাচ্ছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল করে তাদের রিয়েল ফেস উন্মুক্ত করা, তাহলে সরকারের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যেতো এবং যেহেতু ৯৫% জনগণ মুসলমান, যেহেতু সরকারকে জঙ্গীবাদ দমনের নামে ৯৫% জনগণের সাথে দ্বন্দ্ব লাগানোও আমেরিকার পলিসির অংশ হতে পারে, সে ফাঁদে সরকারকে পা দিতে হতো না।
যাই হোক, বিভিন্ন সময় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট উগ্রবাদী ইনডিকেটর বলে যে সমস্ত লক্ষণ প্রচার করছে, সেই সব লক্ষণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অনেকের মধ্যে থাকতে পারে। এবং এই থাকাটাই তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র এবং স্বাধীনতার অংশবিশেষ। কিন্তু সেটাকে জঙ্গীবাদী লক্ষণ বলে প্রচার করে দেশের একটা বড় অংশকে জঙ্গীবাদী ট্যাগ দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ধরনের প্রচার যে ক্ষতিগুলোর জন্ম দিবে-
১) দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপানো হবে। এবং সুযোগ বুঝে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে ঐ গোষ্ঠীটিকেই আমেরিকা ব্যবহার করবে।
২) সরকারী সংস্থার ব্যানারে কথিত জঙ্গীবাদী ইনডিকেটরের নামে বিভিন্ন সময় যে লক্ষণগুলো প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোকে পরবর্তীতে ব্যবহার করে সম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশে কোন জরিপ পরিচালনা করতে পারে এবং কথিত ইনটিকেটরকে পূজি করতে তারা দাবী করবে বাংলাদেশের ৮০% মানুষ জঙ্গী বা জঙ্গীভাবাপন্ন। এ ধরনের জরিপ দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
৩) বাংলাদেশে কথিত জঙ্গীবাদ নামক বেলুন করে বড় করে, সেদিকে সবার লক্ষ্য নিয়ে যাওয়া। আর সে সুযোগে চীনকে দমনে মার্কিনীদের অন্য হাতগুলোকে আরো শক্তিশালীভাবে অগ্রসর করা এবং দেশে বড় অরাজকতা তৈরী করবে।
৪) যেহেতু ভারতে উগ্র জাতীয়তাবাদ বিদ্যমান, সেহেতু তার প্রভাবে বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধচারণ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মানুষ আচার-আচারণে মধ্যপন্থী। তাই সেই বিরুদ্ধচারণটা মধ্যপন্থার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে, এর বেশি হওয়ার সম্ভবনা নেই। কিন্তু আচারণগুলো যদি জঙ্গীবাদী ট্যাগ দিয়ে চেপে ধরা হয়, তখন সেখানে বিষ্ফোরণসহ বৃদ্ধি ঘটতে পারে, তখন একটা বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সরকারের উচিত মানুষের স্বভাব-রীতির স্বাভাবিক আচরণগুলো সফটলি হ্যান্ডেল করা। কিন্তু কাউন্টার টেরোরিজম যে হার্ডলাইনে যাচ্ছে, তাতে ভালোর থেকে মন্দ আসা স্বাভাবিক।
কাউন্টার টেরোরিজম তো জঙ্গী ইনডিকেটর প্রকাশ করেছে - আর আমার ব্রেইন মেসেজ দিচ্ছে - কাউন্টার টেরোরিজমে মার্কিনব্লকের লোক ঢুকেছে। এটা যদি হয়, তবে খুব ভয়ঙ্কর হবে। খুনি মোশতাক মার্কিন ব্লকের হওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধু তাকে বিশ্বাস করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দিয়েছিলেন, তার প্রতিদান বঙ্গবন্ধু পেয়েছেন। শেখ হাসিনাও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের মত গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় মার্কিনব্লকের লোক ঢুকায় তার পিতার ভাগ্যের দিকে হাটছেন কিনা, সেটাই এখন আশঙ্কা হচ্ছে।
খবর বিভাগঃ
দেশ বিরোধী চক্রান্ত
ধর্ম ও জীবন
ধর্মীয় বিদ্বেষ
0 facebook: