23 July 2019

জানাযার গোসল, কাফন, নামাযের নিয়ত, নিয়ম, দোয়া ও দাফনের তরীকা

প্রতীকী ছবি
ধর্মীয় ডেস্ক জানাযার নামায ফরযে কেফায়াকিছুলোক মিলিত হয়ে মৃতের জানাযা-নামায ও তার কাফন দাফন সম্পন্ন করে নিলে এলাকার সবাই দায়মুক্ত হবেঅন্যথায় সবাই গুনাহ্‌গার হবেএর ফরয হওয়াকে যে অস্বীকার করে, সে কাফির

মাসআলাঃ জানাযার নামাযের জন্য জমাআত পূর্বশর্ত নয়এক ব্যক্তিও যদি পড়ে নেয়, তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে [আলমগীরী]

জানযার নামাজের নিয়তঃ [نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ]
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ তাকবীরাতি ছলাতিল জানাযাতি ফারদ্বিল কেফায়াতি আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীইয়্যি ওয়াদ্দোয়াউ লিহাযাল মাইয়্যিতি (আনা ইমামুন লিমান হাদ্বারা ওয়ামাই ইয়াহদ্বুরু) (ইক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম) মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

অনুবাদঃ আমি মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে (এই মাইয়্যেতের) জানাযা চার তাকবীরে ফরযে কেফায়া নামাজের জন্য কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা মহান আল্লাহু তায়ালা উনার ও প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ) আল্লাহ মহান।

নিয়তের মধ্যে অন্যান্য জামাতের নামাযের নিয়তের ন্যায় ইমাম তাহার অতিরিক্ত খাছ কালাম (আনা ইমামুন লিমান হাদ্বারা ওয়ামাই ইয়াহদ্বুরু) এবং মোক্তাদিগণ তাহাদের অতিরিক্ত খাছ কালামটি পাঠ করিলে। (কতেদাইতু বেহাযাল ইমাম) আর নিয়তের লিহাযাল মাইয়্যিতিশব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে, কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে লিহা-যিহিল মাইয়্যিতিবলিতে হইবে।

জানাযার নামাযের নিয়ত করে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত নামিয়ে যথারীতি নাভীর নিচে বেঁধে নেবে এবং নিম্নলিখিত সানা পড়বেঃ-

নিয়তের পরে ছানাঃ [سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ]
উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

এরপর হাত না উঠিয়ে একবার আল্লাহু আকবরবলবে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে ওই দুরূদ শরীফ পড়া উত্তম, যা নামাযে পড়া হয়অবশ্য, সম্ভব হলে আল্লাহুম্মা ছল্লির পর ওয়া সাল্লিমবর্দ্ধিত করে পড়বেতখন কামা-ছল্লাইতার সাথে ওয়া ছাল্লামতা বৃদ্ধি করবে

অনুবাদঃ হে মহান আল্লাহ পাক আমরা আপনার পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। আপনার নাম মংগলময় এবং আপনার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ, আপনি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই। ছানার পরে তাকবীর বলিয়া তাশাহুদের পরের দরূদ পড়িতে হয়।

দুরুদ শরীফঃ [اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ]
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ল্লিআলা মুহাম্মাদিঁওয়াআলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়াআলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিকআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়াআলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

অনুবাদঃ যে মহান আল্লাহ! পাক মুহম্মদ (ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং উনার বংশধরগণের উপর ঐরূপ শান্তি বর্ষণ করুন যেইরূপ শান্তি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার বংশধরগণের উপর নাজিল করিয়াছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি সকল প্রশংসা হক্বদার এবং মহামহিম। হে মহান আল্লাহ! পাক মুহম্মদ (ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং উনার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ করু যেরূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং উনার বংশরগণের উপর করিয়াছিলে। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা হক্বদার এবং মহামহিম।

এরপর পুনরায় হাত না উঠিয়ে আল্লাহু আকবরবলে এ দোয়াটি পড়বেঃ-

জানাযার দোয়াঃ [اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ]
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান, বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন
অনুবাদঃ হে মহান আল্লাহ পাক, আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অুনুপস্থিত বালক ও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা করুহে আল্লাহ! পাক আপনি যাদের জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন আর আপনি যাদের মৃত্যু দিবেন, তাদের ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করুন

লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবেঃ [اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا]
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ্‌আলহু লানা ফারাত্বাওঁ ওয়াজ্‌আলহু লানা- আজরাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়াজআলহু লানা- শা-ফিআওঁ ওয়া মুশাফ্ফায়া
অনুবাদঃ হে মহান আল্লাহ! পাক, তাঁকে আমাদের জন্য অগ্রগামী করুন তাঁকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ করু এবং তাঁকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানা

এরপর আল্লাহু আকবরতথা শেষ তাকবীর বলবে অতঃপর দুইহাত দুইপাশে ঝুলাইয়া ইমাম সাহেব ডানে এবং বামে ছালাম ফিরাইবে

লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবেঃ [اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا]
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ্‌আলহা লানা ফারাত্বাওঁ ওয়াজ্‌আলহা লানা- আজরাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়াজআলহা লানা- শা-ফিআওঁ ওয়া মুশাফ্ফায়া
অনুবাদঃ হে মহান আল্লাহ! পাক, তাঁকে আমাদের জন্য অগ্রগামী করু তাঁকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ করুন এবং তাঁকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানা

মাসআলাঃ যার উপরোক্ত দোয়া স্মরণ না থাকে, সে অন্য কোন একটি দোয়া মাসূরা পড়ে নেবে

মাসআলাঃ জানাযার চার তাকবীরের মধ্যে কেবল প্রথম তকবীরে হাত উঠাবে, বাকীগুলোতে উঠাবেনা আর চতুর্থ তকবীর বলার সাথে সাথে হাত খুলে নেবে ও সালাম ফেরাবে

মাসআলাঃ জানাযার নামাযের রোকন অর্থাৎ ফরয দুটিঃ চার-তকবীর ও ক্বিয়ামসুন্নাতে মুআক্‌কাদাহ্‌ তিনটিঃ ১. আল্লাহ্‌ তায়লা উনার সানা পাঠ, ২. দুরূদ শরীফ পড়া ও ৩. মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করা

মাসআলাঃ যেহেতু ক্বিয়াম ফরয, সেহেতু বিনা কারণে বসে বা বাহনের উপর নামায পড়লে হবে নাতবে যদি মৃত ব্যক্তির ওলী বা ইমাম অসুস্থণার কারণে বসে নামায পড়ে এবং মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে পড়ে, তবে নামায শুদ্ধ হবে। [দুর্‌রুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]

মাসআলাঃ যার কয়েক তকবীর বাদ পড়ে গেছে, সে ইমাম সালাম ফিরানোর পর বাদ পড়া তকবীরগুলো বলে নেবেআর যদি এ ভয় হয় যে, পড়তে গেলে দোয়া পূর্ণ করার আগে লোকেরা মুর্দাকে কাঁধে উঠিয়ে নেবে, তাহলে কেবল তাকবীর বলে নেবে এবং দোয়া বাদ দেবে[দুর্‌রুল মুখতার]

মাসআলাঃ যে ব্যক্তি চতুর্থ তকবীর বলার পর আসলো, ইমাম তখনও সালাম ফেরাননি, তাহলে আল্লাহু আকবারবলে জামায়াতে শরীক হয়ে যাবে এবং ইমামের সালাম ফেরানোর পর তিনবার আল্লাহ আকবরবলে নেবে। [দুর্‌রুল মুখতার]

মাসআলাঃ যে সব বিষয় দ্বারা অন্যান্য নামায ভঙ্গ হয়ে যায়, ওইসব বিষয় দ্বারা জানাযার নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায়শুধু একটি বিষয় যে, কোন মহিলা পুরুষের পাশাপাশি হয়ে গেলে, এতে জানাযার নামায ভঙ্গ হবে না [আলমগীরী]

মাসআলাঃ জানাযার নামাযের জন্যও ওইসব পূর্বশর্ত প্রযোজ্য, যেগুলো অন্যান্য নামাযের জন্য নির্ধারিতযেমন- ১. পবিত্র হওয়া, (নামাযীর শরীর, কাপড় ও নামাযের জায়গা পাক হওয়া), ২. সতর ঢাকা, ৩. ক্বেবলার দিকে মুখ করা ও ৪. নিয়্যত করাঅবশ্য জানাযার জন্য সময় নির্দিষ্ট নেই এবং তকবীরেই তাহরীমা পৃথক রোকন বা পূর্বশর্ত নয়; বরং প্রথম তাকবীরও জানাযার চার তাকবীরের শামিল [রদ্দুল মুহ্‌তার]

জানাযার পূর্বশর্ত হচ্ছে মৃতকে গোসল করানো এবং পবিত্র কাফন পরিধান করানো  জানাযা সামনে থাকা এবং জানাযা মাটির উপর রাখাকোন জন্তু ইত্যাদির উপর রাখা হলে, নামায হবে না

মাসআলাঃ প্রত্যেক মুসলমানের জানাযার নামায যেন পড়া হয়, যদিও সে বড় গুনাহ্‌গার হয়তবে কয়েক প্রকার গুনাহগারের নামায পড়তে নেইযেমন ১. বিদ্রোহী, যে বরহক্ব ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হলো এবং সেই বিদ্রোহী অবস্থায় মারা গেলো এবং ২. ডাকাত, যে ডাকাতি করা অবস্থায় মারা যায় এবং ৩. মুনাফিক [আলমগীরী, দুর্‌রুল মুখতার, বাহার]

মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ইমামতির হক সর্বাগ্রে ইসলামী শাসকের অতঃপর ক্বাযীরএরপর জুমুআর ইমামেরতারপর মহল্লার ইমামকে অগ্রাধিকার দেয়া মুস্তাহাবতবে মহল্লার ইমাম ওলী অপেক্ষা উত্তম হতে হবে, অন্যথায় ওলী উত্তম [গুনিয়া, দুর্‌রুল মুখতার]

মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় অনুপস্থিত এবং দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় উপস্থিত রয়েছেএক্ষেত্রে দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ই নামায পড়াবেঅনুপস্থিত বলতে এতটুকু দুরত্বকে বুঝানো হয়, যেখান থেকে আসার অপেক্ষা করা ক্ষতিকর [রদ্দুল মুহতার]

মাসআলাঃ মহিলার কোন ওলী না থাকলে, স্বামী নামায পড়াবেস্বামীও না থাকলে প্রতিবেশী পড়াবেঅনুরূপ পুরুষের ক্ষেত্রেও ওলী না থাকলে প্রতিবেশী অন্যান্যদের উপর অগ্রাধিকার পাবে [দুর্‌রুল মুখতার, বাহার]

মাসআলাঃ অন্যান্য নামাজের মতো মহিলা ও শিশুগণ জানাযার নামাযের ওলী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না

মাসআলাঃ জানাযার নামাযে তিন কাতার করা উত্তমহাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যার নামায তিন কাতারে পড়া হবে তার মাগফিরাত হয়ে যাবেযদি সর্বমোট সাতজন হয়ে থাকে, তাহলে একজন ইমাম হবে তিনজন প্রথম কাতারে, দুজন দ্বিতীয় কাতারে এবং একজন তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে [গুনিয়া, বাহার]

মাসআলাঃ ইমাম মৃত ব্যক্তির বুকের সামনে দাঁড়ানো মুস্তাহাবমৃত ব্যক্তি থেকে দূরে না হওয়া চাই

মাসআলাঃ মসজিদে জানাযার নামায যে কোন অবস্থায় মকরূহে তাহরীমীলাশ মসজিদের ভিতরে হোক বা বাইরে অথবা সব নামাযী মসজিদের ভিতরে হোক বা কিছু অংশ [দুর্‌রুল মুখতার]

মাসআলাঃ জুমুআর দিন কেউ মারা গেলে, জুমুআর আগে কাফন-দাফনও নামায সম্পন্ন করে নিতে পারলে, করে নেয়া চাইজুমুআর পর বেশী লোক হবে, এ ধারণায় রেখে দেয়া মাকরূহ [রদ্দুল মুহতার]

মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে যদি নামায না পড়ে দাফন করা হয় ও মাটি চাপাও দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তার কবরের উপর নামায পড়বেযদি মৃত দেহ ফেটে যাওয়ার সন্দেহ না হয়, আর যদি মাটি না দিয়ে থাকে, তাহলে বের করে নামায পড়ার পর দাফন করবে [রদ্দুল মুহতার, দুর্রুল মুখতার]

মাসআলাঃ মুসলমানদের শিশু বা মুসলমান মহিলার শিশু জীবিত জন্ম গ্রহণ করার পর মারা গেলে, তাকে গোসল ও কাফন দেয়া হবে এবং নামায পড়বে আর যদি মৃত জন্ম হয়, তাহলে এমনি গোসল করিয়ে পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করে ফেলবেতার জন্য নামায ও সুন্নাত তরীক্বা মত গোসল ও কাফনের প্রয়োজন নেই

মাসআলাঃ যে শিশুর মাথা বের করে জন্ম হলো এবং বুক বের হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিল অতঃপর মারা গেল, তাহলে ওকে জীবিত জন্ম হয়েছে বলে ধরা হবেআর যে  শিশুর পা বের করে জন্ম হলো এবং কোমর বের হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিল অতঃপর মারা গেল, তাহলে তাকেও জীবিত ধরা হবেযদি উল্লেখিত পরিমাণ বের হওয়ার আগে মারা যায়, যদিওবা ক্রন্দন করে থাকে, তবুও তাকে মৃত জন্ম হয়েছে বলে ধরা হবে [দুর্রুল মুখতার, রুদ্দুল মুহতার]

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার নিয়মঃ

যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবে, সে প্রথমে ওযূ করে নেবেগোসলের স্থানের চারিদিকে পর্দার ব্যবস্থা করে নিতে হবেকুল (বড়ই) পাতার সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাতে হয়এটা না পেলে সাদা পানি ব্যবহার করতে পারবেপ্রথমে মৃত ব্যক্তিকে খাটের উপর শায়িত করে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবেতারপর পায়খানা-প্রসাবের স্থান এক খণ্ড কাপড় দ্বারা মসেহ্‌ করবেমৃত ব্যক্তির গুপ্তস্থানের দিকে একেবারেই দৃষ্টিপাত করবেনাতারপর ওযূ করাবেওযূর মধ্যে প্রথমে মুখ তারপর দুই হাত কুনুই পর্যন্ত ধৌত করবেঅতঃপর মাথা মসেহ্‌ করবেএর পর উভয় পা ধৌত করবেমুখ ও নাকের ভিতর পানি দেবে নাকাপড় ভিজিয়ে মুখ ও নাকের ভিতর মুছে নেবেমাথা ও দাড়ি সাবান দ্বারা ধৌত করবেতৎপর মৃতকে বাম করটে শুইয়ে ডান পার্শ্বে পানি ঢালবে, যাতে সমস্ত শরীর ভাল মতে ধোয়া যায়তাপর মৃতকে হেলান দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হয়এতে মল বের হলে ধুয়ে ফেলবেএ জন্য ওযূ বা গোসল পুনরায় করাতে হবে নাগোসলের পর শুকনা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলবেনখ কাটবে নাদাড়ি ও মাথায় চিরুনী ব্যবহার করবে নামাথায় ও দাঁড়িতে আতর-গোলাপ লাগাবেসাজ্‌দার জায়গায় কর্পুর লাগাবেপুরুষকে পুরুষ লোক দ্বারা এবং স্ত্রীলোককে স্ত্রীলোক দ্বারা গোসল দিতে হয়; কিন্তু নাবালেগকে উভয়েই গোসল দিতে পারেস্বামী স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে নাস্বামী মৃত স্ত্রীকে দেখতে ও কবরে নামাতে পারবে এবং স্ত্রীর খাট বহন করতে পারবে

কাফনঃ

পুরুষ মৃতের কাফন তিনখানা কাপড় দ্বারা দেওয়া সুন্নত

যথাঃ ১ লেফাফা- এটা সর্ব প্রথম বিছাতে হয়এটা মৃত ব্যক্তির দেহ হতে কিছু বেশী লম্বা রাখতে হয়; যাতে দুই প্রান্তে বাঁধতে অসুবিধা না হয়,

২. ইযার- এটা মৃত ব্যক্তির মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা হতে হবে এবং

৩. কামীছ- এটা গলা হতে পা পর্যন্ত লম্বা রাখতে হয়, কিন্তু আস্তিন ও কল্লি বিহীন হতে হবে

মেয়েলোকের জন্য পাঁচ খানা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া সুন্নত

যথাঃ ১. পিরহান, ২.ইযার, ৩. ওড়না বা সেরবন্দ- এর দ্বারা মাথা ঢাকতে হয়এটা দুই হাত দৈর্ঘ্য ও আধ হাত চওড়া হবে, ৪. লেফাফা; ইযার ও লেফাফা মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা হওয়া আবশ্যক এবং ৫. সীনাবন্দ- এটা দৈর্ঘ্যে তিন হাত লম্বা এবং বগল হতে হাঁটু পর্যন্ত হতে হবেআর্থিক অভাব হলে পুরুষের জন্য দুই কাপড়, যথা- ইযার ও লেফাফা এবং স্ত্রীলোকের জন্য তিন কাপড় যথা- ইযার, লেফাফা ও সেরবন্দ দিলেও চলবে

কাফন বিছানোর নিয়মঃ

পুরুরুষের জন্যঃ খাটের উপর প্রথমে লেফাফা, লেফাফার উপর ইযার এবং ইযারের উপর কোর্তার অর্ধেক এমনভাবে বিছাবে যাতে মৃতকে কোর্তার উপর রাখলে অবশিষ্টাংশ মাথার উপর দিয়ে আনলে বরাবর হয়ে গায়ে লাগেইযারকে প্রথমে বামদিক হতে জড়িয়ে, পরে ডান দিক হতে জড়াবে, তারপর লেফাফাও বামদিক হতে জড়িয়ে, পরে ডান দিক হতে জড়াবেকাফন খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মাথা, বুক ও পায়ের নিকট সুতা দ্বারা বেঁধে দেবে

স্ত্রীলোকের জন্যঃ প্রথমে সীনাবন্দ, তারপর লেফাফা, তারপর ইযার অতঃপর পিরহান বিছিয়ে মৃতকে সেগুলোর উপর শোয়াবেতারপর প্রথমে পিরহান পরাবেমাথার চুলগুলি দুইভাগ করে উভয় কাঁধের দিক হতে এনে পিরহানের উপর রাখবেঅতঃপর সেরবন্দ দ্বারা মাথা জড়িয়ে দুপাশ হতে এনে বুকের উপর রাখবে আর ইযারকে বাম দিক হতে জড়িয়ে পরে ডান দিক হতে জড়াবেতারপর লেফাফাও এইরূপে জড়াবেসবশেষে সেরবন্দ দ্বারা মাথা জড়িয়ে দুপাশ হতে এনে বুকের উপর রেখে সীনাবন্দ জড়াবেকাফনের উপর আতর গোলাপ লাগাবে

দাফনঃ

মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখাঃ-

প্রথমে কবরের মধ্যে মৃত ব্যক্তির দুইজন পরহেযগার নিকটতম আত্মীয় নেমে দাঁড়াবে; উপর হতে অন্য লোকে মৃতকে ধরে তাদের হাতে দেবেকবরে নামানোর সময় নিচের দোয়াটি পড়বেঃ [بِسْمِ اللّٰہِ وَعَلٰی مِلَّۃِ رَسُوْلِ اللّٰہِ]
উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূ-লিল্লাহ
অর্থঃ মহান আল্লাহ্‌ তায়লা উনার নামে এবং রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উনার প্রচারিত ধর্মের উপর

মৃতের মাথা কবরের উত্তর প্রান্তে ক্বেব্‌লামুখী করে রাখবেস্ত্রীলোককে কবরে নামানোর সময় কবরের চতুর্দিকে পর্দা করতে হবেমৃত স্ত্রীলোককে কবরে নামানোর জন্য যাদের সঙ্গে বিবাহ (মুহরিম) জায়েয নাই তারা কবরে নামবেতাদের কেউ না থাকলে পরহেযগার লোক কবরে নামাবেতারপর যথা নিয়মে দাফন কার্য সম্পন্ন করবে


শেয়ার করুন

0 facebook: