বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা |
স্টাফ রিপোর্ট।। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই খুনির হাতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিএনপি খুনিদের দল যদি না হবে তাহলে স্যার টমাস উইলিয়াম এমপিকে কেন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে আসতে দেয়নি? এটির পক্ষে সাফাই গাওয়ার তো কিছু নেই। বিএনপি নেতাদের এটিও জানা উচিত, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে।’
গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর শের-ই বাংলানগর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিলিটারি ডিটেকটররা যখন ক্ষমতা নেয় তখন তাদের মনের ভেতর একটা সুপ্ত বাসনা থাকে, রাজনৈতিক নেতা হওয়ার। যদিও তারা রাজনৈতিক নেতাদেরই গালি দেয়। কারণ মোশতাক বেঈমানি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল, আড়াই মাসও কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক যেভাবে মীরজাফর বেঈমানি করে সিরাজউদদ্দৌলাকে পরাজিত করেছিল, মীরজাফরও কিন্তু ওই দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকের ভাগ্যেও তাই ঘটল, সেও থাকতে পারল না। এই মোশতাকেই কিন্তু জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সব থেকে বিশ্বস্ত মানুষ যে মোশতাকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। রশিদ ফারুকের সঙ্গে যে চক্রান্ত করেছিল। এ হত্যাকাণ্ড করতে উৎসাহিত করেছিল এবং সবরকম সহযোগিতা করেছিল। সেই জিয়াউর রহমানকে জেনারেল মোশতাক সেনাপ্রধান করে। আর পরবর্তী সময়ে সেই সেনাপ্রধানেই এদেশের একদিকে সেনাপ্রধান আরেকদিকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিজেকে ঘোষণা দেয় আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি। টক শো বেশি একটা দেখার সুযোগ হয় না তবুও দেখি। ইদানিং বিএনপির নেতারা নিজেদের সাফাই গাইতে একটা কথা বলা শুরু করেছে। ১৯৭৫’এ তো বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়নি। কাজেই তারা আবার খুন করল কীভাবে? বিএনপির যে প্রতিষ্ঠাতা, সে নিজেই যখন খুনি এবং শুধু খুনি না, খুনের সঙ্গে তো জড়িত ছিলই। আবার এই খুনিদের বিচার হবে না। তার জন্য যেমন ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল। আর তারই বলে এই খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।’
শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের এটা আমি বলতে চাই এবং জিজ্ঞাসা করি, জিয়া যদি খুনি না হবেন আর তার হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল এই বিএনপি, এরা যদি খুনিদের দল না হবে আর খুনির দল না হয়, তাহলে স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি এমপিকে কেন বাংলাদেশে তদন্ত করতে আসতে দেয় নাই? তার দুর্বলতাটা কি ছিল? সে কিন্তু ভিসা দেয়নি। অর্থ্যাৎ এই ঘটনার কোন তদন্ত হোক, হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, সেটা তো আইন করে আগেই বিচার বন্ধ, খুনিদের পুরস্কৃত করা এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সাধারণত মিলিটারি ডিটেকটর যখন ক্ষমতায় আসে আগে রাজনীতিবিদদের গালি দেয়। আর এরপরে নিজেরাই উর্দি খুলে তারপরে রাজনীতিবিদ সাজতে চায়।’
দেশ যাতে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অশুভ শক্তির নিয়ন্ত্রণে যেতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই, যাতে দেশ আর কখনো ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা হায়েনাদের হাতে না যায়।’
ঢাকা মহানগর উত্তররে সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ঢাকা মহানগর নতোদরে মধ্যে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, উত্তরের সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, জাহানারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও কামাল চৌধুরী।
সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন এবং আজিজুল হক রানা। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: