স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ উরু পর্যন্ত শাড়ি পেটিকোট উঁচু করে ধান ক্ষেতের
ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মাঝ বয়সী এক নারী। তার নাম আলেয়া। বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। বয়স
বাড়লেও দুই সন্তানের জননী আলেয়ার শরীর ভেঙ্গে পড়েনি। এখনও যৌবনের পূর্ন রেশ শরীরে রয়েই
গেছে। কে জানতো তার সুগঠিত অববয়ই কোন নরপশুর লোলুপ দৃষ্টি কাড়বে; অতঃপর
নির্জন বিলে ধর্ষনের শিকার হয়ে লাশ কাটা ঘরে পড়ে থাকবে তার পঁচা গলা নিথর দেহটি।
ঘটনার
ভিতরে যাওয়া যাকঃ গত ০৩/১১/২০১৭ তারিখে সাঁথিয়া থানায় একটি নিখোঁজ জিডি এন্ট্রি করা
হয়। যার নম্বর-১০২। জিডিতে মোঃ আরদোশ মল্লিক(৫০), গ্রাম-চর পাইকরহাটি, সাঁথিয়া
জানান, গত
০১/১১/১৭ তারিখে তার স্ত্রী চরপাইকরহাটি, কুমিরবিলের পাশের ঈদগাহে লাকড়ি কুড়াতে যায়।
এরপর সে আর ফেরত আসেনি। জিডি এন্ট্রির পর এসআই রাশেদ, সাঁথিয়া
থানা ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে জানতে পারেন পার্শ্ববর্তী ডোবার মধ্যে নিখোঁজ মহিলার পরণের
শাড়ি পাওয়া গেছে।
বিষয়টি
আমার মনে দাগ কাটে। ০৪/১১/১৭ইং তারিখ আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শাড়িটি দেখি। আশেপাশের লোকজনের
সাথে কথা বলি। জায়গাটি একদম নির্জন নিঝুম। মূল গ্রাম থেকে সামান্য বাইরে। যেখানে ঈদগাহ
তার ঠিক সামনেই পূর্ব দিকে ১০ বিঘার একটি বিশাল পুকুর। পশ্চিম ও দক্ষিন পাশ জুড়ে বিশাল
বিল। উত্তর দিকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে মূল গ্রাম। ঐ জায়গায় দিনের বেলা গেলেও গা ছম
ছম করে। থাক সে কথা, ঘটনাস্থলে
গিয়ে প্রচুর উৎসুক জনতা পাই। মহিলার ঝাড়ু দেবার ঝাটা ঈদগাহের দেয়ালের পাশে পড়ে থাকতে
দেখি। শাড়ি যে ডোবায় ছিল সেই স্থান পরিদশন করি। কিন্তু মহিলার সন্ধান কেউ দিতে পারে
না। হঠাৎ ভীড়ের মধ্যে থেকে শোনা যায়, খালের ওপারে কাউকে টেনে বিলের ভিতরে নেবার
মত দাগ আছে। কিন্তু ওখানে যেতে হলে বুক সমান পানি পার হয়ে যেতে হবে। গ্রামবাসী একজনের
কাছে লুঙ্গি চেয়ে নিয়ে আমি নিখোঁজ মহিলার দেবর রেজাউলকে সাথে নিয়ে খাল পাড়ি দিয়ে অপেক্ষাকৃত
উঁচু জমিতে গেলে অজস্র পায়ের ছাপ দেখি। রেজাউল জানান যে, গ্রামের
শত শত লোক গত ২দিন ধরে বিলের ভিতর নেমে কোন কিছু পাওয়া যায় কিনা তার সন্ধান করেছে।
এগুলো তাদের পায়ের ছাপ। তারপরেও ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, কাউকে
টেনে নেবার দাগ। এরপর সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়। কিন্তু কোন কূল কিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না।
পূনরায় ডাঙ্গায় ফিরে আসি। মহিলার সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করি।
মহিলা
দরিদ্র আরদোশ মল্লিকের স্ত্রী। ০১/১১/১৭ তারিখ সকালে খড়ি কুড়াতে বাড়ি থেকে বের হয়।
পথে মিলন নামের এক ছেলের সাথে দেখা হয়। সে আখ থেকে গুড় বানাচ্ছিল। তার কাছ থেকে ২ টুকরো
আখ চেয়ে নেয়। এরপর বিলের পাশে ঈদগাহের দিকে চলে যান। এতটুকু জানার পর মিলনকে খুঁজে
বের করি। সে আমার অফিসে এসে সাবলীলভাবে জানায় যে, সে কিছুই দেখেনি, তবে তার
গ্রামের ইন্দাই তাকে সকাল দশটা/এগারোটার দিকে বলেছিল ঈদগাহের পাশের জমিতে কিছু একটা
নাকি দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু তারা দুজন ঈগাহের কাছে গিয়ে কিছু না পেয়ে ফিরে এসেছে। এছাড়া
সে আখ ভাঙ্গানোর সময় শুধু নিখোঁজ আলেয়ার ভাই বউকে পাশ দিয়ে পুকুরে কাপড় কাচতে যেতে
দেখেছে। আর একজন টুটুল (৩০) নামের একটা ছেলে এক টুকরা আখ তার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে ঐ
দিকে গিয়েছিল।
আমি এবার
ইন্দাই আর কাপড় কাঁচা মহিলার খোঁজ নিতে শুরু করি। কেননা টুটুল শুনেছি ঢাকায় চাকুরি
করে। সে ঢাকায় চলে গেছে। তাই তাকে আপতত খোঁজা বন্ধ করি। এবার ইন্দাইকে আমার সার্কেল
অফিসে ডাকি।
ইন্দাই
আমাকে জানায়, ঈদগাহের
সামনের পুকুরপাড়ে তার সবজি বাগান পরিষ্কার করছিল। তার টয়লেট চাপলে পুকুরের পূর্ব পাড়ের
বাঁশঝাড়ে যায়। হঠাৎ ঈদগাহের দক্ষিনের নিচু জমিতে কাউকে নড়তে দেখে। আর মনে হচ্ছিল কেউ
একজন বুঝি কাউকে জড়াজড়ি করছে। সে ভাবে গ্রামের কোন প্রেমিক-প্রেমিকা হয়তো গোপনে শারীরিকভাবে
মিলিত হচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি টয়লেট সেরে পুকুর পাড় বেয়ে এসে আখ ভাঙ্গানোর স্থানে থাকা
মিলনকে ডাকে। মিলন তখন খাবার খাওয়ার জন্য পুকুরে হাত ধুচ্ছিল।সে মিলনকে বিষয়টি জানায়।
দুইজন এগিয়ে গিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। পরে হাসি ঠাট্টা করে ফেরত চলে আসে। পরে সে শুধু
শুনেছে টুটুল আরও কিছুক্ষন পরে এসে মিলনের কাছে বলেছে তার একটা চশমা হারিয়েছে, তারা
কেউ পেয়েছে কিনা?
এরপর
যে মহিলা কাপড় কাঁচতেছিল তার সাথে দেখা করার জন্য আবার পাইকরহাটি গ্রামে যাই। সে জানায়, কাপড়
কাঁচতে যাওয়ার পথে মিলনকে আখ ভাঙ্গাতে দেখেছে। পরে টুটুল পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময়
তার সাথে ঠাট্টা মসকরা করে চলে যায়। দেবর হিসেবে কিছু রসাত্মক কথা বলে। প্রচুর কাপড়
ছিলো কাঁচতে দেরী হয়। পরে ভেজা কাপড়ে টুটুলকে ফিরতে দেখে। কিন্তু এবার সে ডাকলেও টুটুল
ব্যস্ততার কথা বলে চলে যায়। তিন জনের কথা শোনার পর টুটুলের প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ
জন্মায়।
আমি মাননীয়
পুলিশ সুপার মহোদয় জনাব জিহাদুল কবির, পিপিএম ও অতিঃ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস
‘‘স্যারকে
বিষয় গুলি জানাই। তাঁরা আমাকে লেগে থাকার পরামর্শ দেন। কেউ আমাকে বলেছিল ঘটনাস্থলে
যত বেশি বেশি যাবে, ততবেশি
বেশি রহস্য উন্মোচনের দিকে এগিয়ে যাবে”। আমি আবার বিলের মধ্যে যাই। আবার বিলে নামি।
ঐ দিন মসজিদে মাইকিং হয়। বিলের অনেকটা জুড়ে সকালে সবাই ধানক্ষেতে তল্লাশি চালায়, কিছুই
পায় না। তারপরও পুনরায় আমি নামি। প্রায় আধা কিলো বুক পানির ভিতর দিয়ে বিলের ভিতর যাই
কোন আলামত পাই কিনা? বিলের
মধ্যখানে কচুরিপানা ভর্তি ডোবা দেখতে পাই। আমার সাথে পথ দেখা হয় নিখোজেঁর দেবর রেজাউলের।
কিছু না পেয়ে ঘন্টা ২ পর আমি আবারো ফিরে আসি। তখন সুরমান নামে এক ব্যক্তি আমাকে বলে
যে, ঐ
দিন সে উচুঁ জমিতে বিলের মধ্যে ঘাস কাটছিল। বেলা ১১টার দিকে টুটুল এসে তাকে বলে তুমি
কি আমার চশমা দেখেছো। সে বলে আমি কিভাবে তোর চশমা দেখবো। টুটুল বলে তোমার বোঝা তুলে
দেই, তুমি
বাড়ি যাও। সে জানায় ঘাস কাটাই শেষ হয়নি তো বোঝা নিয়ে যাবো কেন। এরপর টুটুল চলে যায়।
এতটুকু শুনে আমি উপরে উঠে ইন্দাইকে নিয়ে পুকুর পাড়ে হাঁটতে থাকি। বাঁশঝাড়ে গিয়ে ইন্দাই
তার টয়লেটের চিহৃ দেখায়। আমি সব ঘৃনা, দুর্গন্ধ ভুলে তা দেখতে যাই। কারন বিষয়টা
আমার মধ্যে একটা নেশার জন্ম দিয়েছিল। ঐখানে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি যে, ওখান
থেকে পুকুরের অপর পাড়ে আসতে বেশ সময় লেগেছিল। তাই মিলন আর ইন্দাই এসে কিছুই দেখতে পায়নি।
সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে হেলাল নামে একজন আমাকে বলে, ঐ দিন সন্ধ্যার সময় টুটুলকে বিলের পূর্ব
পাশে স্কুলের মাঠের কোনায় একা বসে থাকতে দেখেছে। আমার টুটুলের প্রতি আগ্রহ বাড়তেই থাকে।
এরপর
আমি টুটুলের ফোন নম্বর জোগাড় করি। প্রথমে ফোন দিলে সে ধরে না। তার ভাগ্নে হাফিজকে দিয়ে
ফোন করাই। এরপর ০৭/১১/১৭ তারিখে সকালে সে আমাকে ফোন করে জানায় যে, তার ছুটি
শেষ হয়ে গেছে। সে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করে। তার পক্ষে এখন আসা সম্ভব নয়।
আমি বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাই যে না এলে এলাকার লোকজন হয়তো তাকে সন্দেহ করবে। সে এক ব্যক্তিকে
ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলে, কথা
বলেন। তিনি জানান যে, টুটুল
তার কর্মচারী। তার নির্ধারিত ছুটি অবশিষ্ট নাই। অলরেডি এবার ছুটিতে গিয়ে সে ওভার স্টে
করে এসেছে। আমি পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বললে, তিনি টুটুলকে ছাড়তে রাজি হন।
বিকেলে
বেলা এলাকার স্থানীয় নেতাকে দিয়ে টুটুল আমাকে ফোন করান। আমি নেতাকে আশ্বস্ত করি যে, কোন মামলা
হয়নি। তাকে গ্রেফতারও করা হবে না। শুধু ঐ দিন সে কি দেখেছে তা জানা দরকার। এরপর শুরু
হয় আসল নাটক।
সন্ধ্যা
৬টার দিকে চমৎকার একটি চশমা পরা সুদর্শন যুবক আমার অফিসে প্রবেশ করে জানায় তার নাম
টুটুল। আমি তাকে সাদরে বসতে দেই। তার ফোনটি হাতে নিয়ে দেখতে থাকি। কুশলাদি বিনিময় শেষে
তাকে কিছুই জিজ্ঞেস না করে সাদা কাগজে তার নাম-ঠিকানা লিখতে বলি। সে খুব দ্রুত তার
ঠিকানা লিখে দেয়। এরপর কাগজ কলম দিয়ে বলি ০১/১১/১৭ তারিখ বুধবার ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে
সে পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত কি কি করেছে তা আমাকে লিখে দিতে হবে। তখন সে জানায়, সে লিখতে
পারে না, তবে
যা যা জানে তা বলতে পারবো। আমি তাকে বলি যে, ‘‘আপনি না লিখতে পারলে নাম-ঠিকানা এত দ্রুত
লিখলেন কিভাবে? যতই
সময় লাগুক আপনি লেখেন, কোন
সমস্যা নাই ” পুরো
৩ ঘন্টায় সে ১৪ লাইন লেখে। যেখানে মূল ঘটনার ধারের কাছেও সে যায় না, এই ঠান্ডা
ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও ফ্যানের নীচে বসে ঘামতে থাকে। তখন আরো নিশ্চিত হই যে সে কিছু
লুকাচ্ছে। সময় নষ্ট না করে এবার তাকে ঘটনার বর্ননা করতে বলি। সে জানায় জমি দেখতে বিলের
পাড়ে গিয়েছিল। সেখানে তার চশমা হারিয়ে গেলে খুঁজে না পেয়ে সে চলে এসেছে। পরে শুনেছে
আলেয়াকে (তার চাচাতো ভাবিকে) পাওয়া যাচ্ছে না। এর বেশী তার জানা নাই।
এবার
তাকে প্রশ্ন শুরু করিঃ তার চশমা কিভাবে হারালো কিভাবে। সে জানায় চশমা খালের পাড়ে খুলে
সেন্ডেলের উপর রেখে জমি দেখতে গিয়েছিল। আমার অবাক লাগে মানুষ কিছু দেখতে গেলে চশমা
পড়ে আর সে চশমা খুলে দেখতে গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে সে বলে। ‘আমার
চশমায় তো পাওয়ার নাই; পরলেও
যা না পরলেও তা।’ আমি
জানতে চাই, তবে
এখন আপনার চোখে চশমা কোথা থেকে এল। সে বলে চশমা পড়তে পড়তে অভ্যেস হয়ে গেছে না পড়লে
অস্বস্তি লাগে তাই নিজের মেয়ের চশমা পড়ে আমার অফিসে এসেছে। এতে আমার অবাক লাগে যে, চশমা
না পড়লে অস্বস্তি লাগলে জমি দেখতে গিয়ে সে চশমা খুলে রাখবে কেন? সে কোন
উত্তর দিতে পারেনি। এরপর তাকে বলি,
সুরমানের কাছে কেন গিয়েছিলেন? সে জানায় সুরমান তাকে জমি কেনার ব্যাপারে
ডেকেছিল। কিন্তু আমি আগেই সুরমানের কাছে শুনেছি, এমন কোন কথাই হয়নি। আসার পথে তার জামা-কাপড়
ভেজা কেন ছিল, জানতে
চাইলে জানায়, গোসল
করেছিল তাই। সে বলে, বড়
পুকুরটিতে নাকি গোসল করেছে। অথচ পাশেই যে মহিলা কাপড় কাঁচতেছিলেন, তিনি
তাকে দেখেন নাই। তাছাড়া গোসলে গেলে লুঙ্গি-গামছা থাকার কথা সেগুলো কেন নেয়নি। এর কোন
উত্তর সে দিতে পারে নি। এরপর তাকে আমি শত চাপাচাপি করলেও আমার কথার সে কোন উত্তর দেয়নি।
এদিকে
কোন মামলাও এখনও রুজু হয়নি। মহিলা মারা গেছে কিনা তারও প্রমান নেই। এমতাবস্থায়, আমি সিদ্ধান্ত
নিতে না পেরে অতিঃ পুলিশ সুপার,
গৌতম স্যারকে জানাই। তিনি এসপি স্যারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এসপি স্যার বলেন আরো জিজ্ঞেস করো। প্রয়োজনে মামলা নিয়ে আটক করো। তিনি জিজ্ঞেসাবাদে
সাহায্যের জন্য ইন্সপেক্টর(তদন্ত) জনাব আব্দুল মজিদ সাহেবকে আমার কাছে নিয়ে আসতে বলেন।
এরপর
আমি বুঝতে পারি এভাবে চললে কিছুই পাবো না। আমি গোপনে মোবাইলের ক্যামেরায় টুটুলকে কয়েক
সেকেন্ড ভিডিও করি। কিছুক্ষন পর তাকে ঐটুকু দৃশ্য দেখাই আর বলি যে, আপনি
যা করেছেন তা কিন্তু স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে। এইবার সে ঘাবড়ে যায়। তবুও সে মুখ খোলে
না। তখন তাকে নতুন টোপ দেই। বলি,
দেড় লাখ টাকা লাগবে, যদি সে দিতে পারে তবে তাকে ছেড়ে দেবো। আরো
শর্ত থাকে, সে
যদি লাশটা কোথায় বলতে পারে তবেই তার মুক্তি। এরমাঝে আমি তাকে ফোনে কথা বলতে দেই। তাকে
সিগারেট পান করাই। সে ফোনে টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করে। তার আত্মীয়কে বলে জরুরী ভিত্তিতে
টাকার দরকার। পরে তার আত্মীয় এসে আমাকে দেড় লাখ টাকার চেক প্রদান করে। তখন রাত আড়াইটা।
টুটুল বলে লাশ কোথায় আছে আমি খুঁজে দিবো। কিন্তু কে রাখছে তা আমি জানি না। আমি বুঝে
ফেলি মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে এবং লাশটা গুম করা হয়েছে। টুটুল শর্ত দেয় যে, কোন পুলিশ
সাথে গেলে চলবে না। আমি জানাই যে,
তাকে উপকার করতে গিয়ে যদি সে আমাকে মেরে ফেলে, তাই আমিও
লোক ছাড়া যাবো না। শেষে রাজি হয়। তার সাথে আমি রাতের খাবার খাই এবং বন্ধুর মত আচরণ
করি। আমাকে সে ঘুষখোর হিসেবে বিশ্বাস করে। তারপর একটি সিভিল মাইক্রোতে আমি সহ ইন্সপেক্টর(তদন্ত)
সাথিয়া এই মামলা আই/ও রাশেদ সাহেব সহ আরও ৭/৮ জন নিয়ে চরপাইকরহাটি গ্রামে যাই। গ্রামে
ঢুকতেই টুটুল মাইক্রোর লাইট নিভিয়ে দিতে বলে। এরপর গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের কাছে
গিয়ে বলে, এই
দিক দিয়ে বিলে নামতে হবে। স্কুলের পাশে ঘন জঙ্গল। আমি অতিঃ পুলিশ সুপার গৌতম স্যারকে
বিষয়টি জানাই। স্যার আমাকে খুব সাবধান হতে বলেন। আমি টুটুলকে বলি ‘আপনাকে
ছাড়লে যদি দৌড় দেন সেক্ষেত্রে আমি কি করবো?’ সে বলে ‘তবে আমার হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগায়ে দেন।’ আমি চিন্তা
করি সে যদি বিলে নেমে পানিতে ডুব দেয় তাহলে হ্যান্ডক্যাপ নিয়েই সে পালাবে। এজন্য তার
এক হাত আর আমার অফিসের কং ১২৯৬ মুকুলের আরেক হাত যুক্ত করি। সে অনেকগুলি ধানক্ষেতের
মধ্যে দিয়ে বুক পানির ভিতর দিয়ে বিলের মধ্যখানে (ধান বিল নামক স্থান) নিয়ে যায়। এরপর
কিছুক্ষন উল্টাপাল্টা ঘুরায়। আমি তাকে স্মরন করিয়ে দেই সকাল হয়ে যাচ্ছে, লাশ না
পেলে তার মুক্তি নাই। এরপর সে বলে ‘এক
জায়গায় মাছ মারা বাঁশের চাড় আছে এটা খোঁজেন।’ আমরা পাশেই তা খুঁজে পাই। তখন সে ঐ বরাবর
ধানক্ষেতের ভিতর গিয়ে ধানগাছে ঢাকা পঁচা, গলা আলেয়ার লাশ দেখিয়ে দেয়। এরপর সে তাকে
ছেড়ে দিতে বলে। আমি বলি ডাঙ্গায় উঠে ছেড়ে দিবো। মাঝ বিলের মধ্যে ছাড়লে যদি তার কোন
বিপদ হয় তবে তার স্বজনদের কি উত্তর দিবো? ডাঙ্গায় এসে আমার সহযোগী কং মুকুলের হাত
খুলে টুটুলের দুই হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগাই। তখন সে বুঝতে পারে যে, তার রেহাই
নাই। এরপর জানতে চাই, এই
বিরান জায়গায় লাশ আছে তুমি জানলে ক্যামনে? আল্লাহ পাক ছাড়া তো কারও জানার কথা নয়। তখন
সে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। মূলত সে বিলের ধারে তার জমি দেখতে এসেছিল। সেই সময় তার
চাচাত ভাবী আলেয়া কাপড় উঁচু করে পানিতে নিমজ্জিত ধান ক্ষেতের ভিতর হাঁটছিল। সুগঠিত
দেহ দেখে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। তখন সে আলেয়াকে জড়িয়ে ধরে। ধর্ষনের চেষ্টা করে।
তখন সন্নিকটে কেউ ছিল না। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার চশমা কাদা পানিতে পড়ে যায়। এরপর
মহিলা এই সমস্ত ঘটনা ফাঁস করে দেবার হুমকি দেয়। ঘটনা জানাজানির ভয়ে সে মহিলার আঁচল
দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে। মহিলা মারা গেলে পাশেই ডোবায় লাশ নামিয়ে রাখে। এরপর হাত পা ধুয়ে
ফেরার পথে কেউ বিষয়টি দেখছে কিনা ত নিশ্চিত করতে সামনে যাকেই পেয়েছে তাকেই চশমা হারানোর
গল্প বলেছে। সারাদিন সে রাত নামার অপেক্ষায় থাকে। পরে ঐদিন গভীর রাতে (আনুমানিক রাত
৩টার দিকে) গিয়ে নিজে নিজেই একা লাশ টেনে বিলের ভিতর নিয়ে যায়। নেওয়ার সময় আলেয়ার পরণের
শাড়ি খুলে যায়। যা পরে ডোবার মধ্যে পাওয়া যায়। বিলে ধান ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে পানি থাকায়
লাশ টেনে নিতে তার কষ্ট হয় নি। পরে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর ২/১ দিন পরিস্থিতি অবজারভ করে
ঢাকায় ফিরে যায়।
টুটুলের
মুখে ঘটনার বিবরণ শুনতে শুনতে সেখানেই ফজরের আজান হয়। তখন মসজিদে গিয়ে মাইকিং করা হয়।
বলা হয়, আলেয়ার
লাশ পাওয়া গেছে। হাজার হাজার মানুষ স্কুল মাঠে জমায়েত হয়। অবশেষে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে
টুটুল গিয়ে লাশ বিলের মধ্যে আলেয়ার লাশ দেখিয়ে দেয়। লাশ উত্তোলন করা হয়। মৃতার স্বামী
ও বাবার বাড়ির লোকজন উভয় পক্ষই বাদী হতে আগ্রহ দেখায়। সবাই মিলে শেষে মৃতার মেয়ে শাবানা
আক্তার (২০) কে বাদী করে। সাথিয়া থানার মামলা নং-১০ তাং-০৮/১১/১৭ ধারা-নাঃ শিঃ নিঃ
দঃ এর ৯(৪)(খ) তৎসহ ৩০২/২০১ দঃ বিঃ রুজু হয়। আসামী টুটুল পরে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা
ফৌঃ কাঃ বিঃ অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান
করে। ৯/১১/১৭ তারিখ দেশের সকল প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকাসহ সকল স্থানীয় পত্রিকাতে
ঘটনাটি বিশদভাবে প্রকাশিত হয়।
আমার
চাকরি জীবনে এমন নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হয়ে যেমন আমি ব্যথিত হয়েছি, তেমনি
রহস্য উদঘাটন করতে পেরে গর্ববোধ করছি। আন্তরিক কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি, মাননীয়
পুলিশ সুপার, জনাব
জিহাদুল কবির, পিপিএম
মহোদয়কে তার দূরদর্শী দিক নির্দেশনার জন্য। কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
জনাব, গৌতম
কুমার বিশ্বাস (অপরাধ ও প্রশাসন) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব শামীমা আকতার (জেলা বিশেষ
শাখা) স্যারকে, তাদের
পরামর্শ আর সহযোগিতার জন্য। ধন্যবাদ আর অভিনন্দন ওসি সাথিয়া, ইন্সপেক্টর
(তদন্ত) সাথিয়া, এসআই
রাশেদ, আমার
অফিসের কং ১২৯৬ মুকুল, কং
১২২৮ গফুর, কং
৫৯১ আজিজ ও চুন্নুলাল(ক্লিনার) এবং গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য কামরুল হাসান লিটন
ভাইকে।
বিঃদ্রঃ
কার্য সমাপ্তির পর আমাকে প্রদত্ত দেড় লাখ টাকার চেকটি এর যথাযথ মালিককে ফেরত প্রদান
করা হয়েছে।
লেখক
- জনাব মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেড়া
সার্কেল, পাবনা।
0 facebook: