কলামিস্ট অর্বাচীনঃ আমাদের
ছোট বেলায় কোন ভাল কাজ করলে বা পরীক্ষায় পাশ করলে বাবা মা খুব খুশী হতেন। আর খুশী হয়ে
মা ঘরের বড় মোরগটা বা হাঁসটা জবাই করে রান্না করে খাওয়াতেন। বাবা নতুন জামা বা নতুন
জুতা বা খেলনা কিনে দিতেন। কখনো কখনো মা বলতেন, এবার ভাল পাশ দিতে পারলে তোকে তোর মামার
বাড়িতে নিয়ে যাব। মামা বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার মজাই ছিল অন্য রকম।
তাই বোধ
হয় কবি ছড়া লিখেছিলেন,
"আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের
মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা
জামের মধুর রসে রংগীন করি মুখ।"
সেকালে
মামার বাড়ি যাওয়া মানেই ছিল অবাধ স্বাধীনতা। মামার কাধে চড়ে সারা পাড়া বেড়ানো। মামার
সাথে মাছ ধরতে যাওয়া। ছোট ছিলাম বিধায় জাল ফেলতে পারতাম না। তবে মাছের খলুইটা রাখার
সুযোগ মিলতো। মামা হাটু পানিতে নেমে জালটা কেমন করে যেন ছুড়ে মারতেন। তা সুন্দর গোল
বৃত্তাকার হয়ে পানিতে ছড়িয়ে পড়তো। মামা ধীরে ধীরে জাল টেনে উঠাতেন। কই, টাকি, পুটি, বেলে
শিং মাগুর মেনি মাছ ধরা পরতো। এই মাছ ধরার আনন্দ কি পরিমান তা লিখে প্রকাশ করা কঠিন।
আরও মজার কথা, মামা
মাছ ধরার সকল কৃতিত্বটা আমাকেই দিতেন। বাড়ি এসে সবাইকে বলতেন, আজ ভাগ্নেকে
নিয়ে গেছিলাম। তাই অনেক মাছ ধরতে পারছি।"
রাতে
নানীর কোলে বসে রুপকথার গল্প শোনা,
আর মামীর হাতে রান্না করা মজাদার খাবার। আহা হা। মনে হলেই এখনো
জীবে পানি চলে আসে। খাবার তালিকায় তেমন কিছুই থাকতো না। পুকুরের বা খাল/ বিল থেকে ধরে
আনা জ্যান্ত মাছ দিয়ে রান্না করা তরকারী, দীর্ঘ দিন ধরে খুব যতনে নানীর পালন করা মোড়গ
জবাই করে রান্না করা, শীত
কাল হলে বিভিন্ন রকম পিঠা পায়েশ চিড়া মুড়ি বা মটরশুটি সিদ্ধ করে খাওয়া। এগুলো তখন মনে
হতো যেন অমৃত। সারা বছর অপেক্ষার প্রহর গুনতাম, কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। কবে যাব মামার
বাড়ি।
আর এখনকার
দিনে। ছেলের পরীক্ষার শেষ হয়েছে। তো মা বাবা টাকা দিয়ে দেয় বলে যা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে
কোন একটা দামী হোটেলে খেয়ে আয়। কেএফসিতে গিয়ে বার্গার খাবে বা চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেন্স
ফ্রাই, স্যুপ বা কফি। চাওমিন। কত কি যে নাম। দশ টাকার খাবার এক শ টাকায় কিনে খাওয়ায়
কি যে আনন্দ। যেখানে মায়ের হাতের কোন ছোঁয়া নাই।
আমার
মায়ের হাতে রান্না করা মলা মাছের চচ্চরীর কাছে কেএফসির সেই চিকেন ফ্রাই তো কিছুই না।
নানীর হাতের ছোঁয়া দিয়ে মামীর যতনে রান্না সে তো অমৃত। মা মামী নানীর হাতের রান্না
করা খাওয়ার জন্য ব্যকুল থাকতাম। সে খাবারের লোভ দেখিয়ে মা একাজ সেকাজ করিয়ে নিতেন।
বাবা মায়ের বাধ্য থাকতে বাধ্য করতেন। বাবা মার অপছন্দের কাজ করলে ঐ সকল অমৃত থেকে বন্চিত
করবেন বলে ভয় দেখাতেন। সেই ভয়ে আমরাও বাবা মায়ের অপছন্দের কাজ থেকে বিরত থাকতাম।
আজকাল
শিশুরা বাবা/মায়ের ভালোবাসা,
মমতার ছোঁয়া বিহীন তৈরী করা ফাস্ট ফুড খেয়ে বেড়ে উঠছে। আর মায়েরা
জলসা টিভি বা জিটিভি দেখতে দেখতে রোবটিক হয়ে যাচ্ছেন। একটু রেস্ট করার জন্য সন্তানদের
কেএফসিতে খেতে পাঠাচ্ছেন। শিশুদের কৃতিত্বে খুশী হয়ে কেএফসিতে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই হয়তো
বাবা/মা আর সন্তানদের বন্ধনে দৃঢ়তা কমে গেছে। বুড়ো বয়সে বাবা মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
খবর বিভাগঃ
মতামত
লাইফস্টাইল
0 facebook: