স্বদেশবার্তা
ডেস্কঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন শাখাগুলোর
ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থগিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পদবাণিজ্য, সন্ত্রাসী,
চাঁদাবাজ ও যারা কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন না তাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেন মহানগরের ১৬ জন নেতা। কমিটিতে আছেন বনানী থানা আওয়ামী লীগের একজন
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাড্ডার ফোর মাডারসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে
দেশের বাইরে। শেখ হাসিনা ঘোষিত কমিটি স্থগিত করে যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠন
করার জন্য নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত
২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক
খানের অনুমোদনে মহানগরের আওতাধীন থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রেস রিলিজের
মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। এক্ষেত্রে ২৬টি থানা, ৪৯টি ওয়ার্ড ও ৯টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন
করা হয়। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকায় কমিটির দায়িত্ব হস্তান্তরের কাজ
শুরুও করেছিলেন। গতকাল মহানগরের ১৬
জন নেতা ঘোষিত এ কমিটি সম্পর্কে অভিযোগ করে নিজেদের ক্ষোভের কথা শেখ হাসিনাকে জানান। তারা বলেন, ত্যাগী ও প্রকৃত রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে পকেটের লোক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত
করা হয়েছে। ফলে দল রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী তাদের অভিযোগ শুনে কমিটি স্থগিত
করেন এবং নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেন। তাদের সব পক্ষের সঙ্গে
আলোচনা করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি তো এ এলাকার অনেক পুরনো। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের
আপনি সহযোগিতা করেন।
এ ব্যাপারে
কাদের খান সাংবাদিকদের জানান, ‘নেত্রীর সঙ্গে আমরা দেখা করেছি। তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থগিত করেছেন এবং নতুন
কমিটি গঠনের বিষয়ে ফারুক খানের সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে বলেছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্কালে অন্যান্যের
মধ্যে ঢাকার মিরপুরের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী
লীগ উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান, বনানী থানার সভাপতি
এ কে এম জসিমউদ্দীন, মিরপুর থানার সভাপতি এস এম হানিফ, দারুস সালাম থানার সভাপতি মাজহারুল আনাম, শাহ আলী থানার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মোল্লা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক প্রমুখ
উপস্থিত ছিলেন।
২০১২
সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনের ৩ বছর
৩ মাস পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, ৪৫টি থানা এবং ১০০টি
ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের অন্তর্গত থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দীর্ঘ বিলম্ব হয়। গত ৫ জুলাই রাতে মোহাম্মদপুর, আদাবর,
মিরপুর, শাহ আলী, দারুস সালাম,
বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা,
গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক থানাসহ এর অন্তর্গত ২৫টি ওয়ার্ড ও
ছয়টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। কমিটি ঘোষণার পরেই
নানামুখী তোপের মুখে পড়ে মহানগর উত্তরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিতরা
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক
ঘণ্টার মধ্যে ওই ঘোষিত কমিটি স্থগিত করে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বাতিলকৃত কমিটিগুলোতে
অবৈধ আর্থিক লেনদেন, পছন্দের লোকদের দিয়ে পকেট কমিটি গঠন এবং বিএনপি-জামায়াতসহ বিতর্কিতদের
কমিটিতে স্থান করে দেওয়ার মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
অনুসন্ধানে
জানা গেছে, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে পদবাণিজ্য ছিল
অনেক ওপেন সিক্রেট। সহ-সভাপতি পদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
পদ দেওয়া হবে এই আশ্বাসে ৭/৮ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছেও
জমা পড়েছে। এতে ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে পদ-বঞ্চিত ত্যাগী নেতারা পাড়া-মহল্লায়
সংগঠিত হচ্ছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড পূর্ণাঙ্গ কমিটি
করার আগে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র
জানিয়েছে, যেসব নেতা অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের দলীয় কমিটিতে
স্থান দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি এ সব অনিয়ম
ও প্রবণতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপও নেবে দলটি।
কমিটিতে
আছেন বনানী থানা আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাড্ডার ফোর মাডারসহ একাধিক
হত্যা মামলার আসামি। সে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে।
খবর বিভাগঃ
ঢাকা বিভাগ
রাজনীতি
0 facebook: