আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এক সপ্তাহ আগে স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান অভিযুক্ত বাংলাদেশী ছাত্রী সোমা । অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক ব্যক্তিতে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে আটক হয়েছেন তিনি। গত শুক্রবার এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে কথিত আইএস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। কিন্তু সোমার পরিবার বলছে ভিন্ন কথা।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়সী সোমা গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি)
বিকালে মেলবোর্নে ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করেছেন বলে দাবি
করেছে পুলিশ। এরপর সোমাকে আটক করে মেলবোর্ন পুলিশ।
সোমা গত ১ ফেব্রুয়ারি স্টুডেন্ট ভিসায় স্কলারশিপ
নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। প্রথমে তিনি মেলবোর্নে বান্দুরা এলাকার একটি বাসায় ওঠেন। হামলার
আগের দিন তিনি রজার সিংগারাভেলু নামে এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন। রজারের
ওপরই পরদিন তিনি একটি ধারালো ছুরি নিয়ে হামলা চালান। এই দৃশ্য রজারের ৫ বছর বয়সী মেয়ে
দেখতে পায় বলে পুলিশ দাবি করেছে। কিছুটা আহত হলেও চিকিৎসা দেয়ার পর রজার এখন পুরোপুরি
সুস্থ।
সোমাকে আটকের পর পুলিশ বলছে, কথিত সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট এর দ্বারা
অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েটি এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের জড়িত থাকার’ অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে।
শনিবার গার্ডিয়ানকে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের
ডেপুটি কমিশনার ইয়ান মেকার্টনি বলেন,
‘আমরা
মনে করছি আইএসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের কমিউনিটর ক্ষতি করার জন্য এটি একক সন্ত্রাসী
হামলার চেষ্টা।’
শনিবার মেলবোর্ন ভিত্তিক দ্য এইজ পত্রিকা তার
পাসপোর্টের ছবি প্রকাশ করে যেখানে তিনি বোরকা পরিহিত অবস্থায় আছেন দেখা যায়। স্থানীয়
লাট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিজ্ঞানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া সোমা ধর্মীয় অনুশাসন
মেনে বোরকা পরেন। কিন্তু ডেইলি মেইল এ সংক্রান্ত সংবাদে তার বোরকা পরার কথা হাইলাইট
করে সংবাদ পরিবেশন করেছে।
বোরকা পরা তরুণীর ছুরি নিয়ে হামলাকে কথিত ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করলেও অভিযুক্তের
পরিবার বলছেন ভিন্ন কথা। সোমার চাচা অধ্যাপক মুহম্মদ আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে (১ ফেব্রুয়ারি) সে অস্ট্রেলিয়া
পৌঁছায়। খুবই শান্ত স্বভাবের ও মেধাবী ছাত্রী হিসেবে তার সুনাম রয়েছে।
যমুনা টেলিভিশনকে অধ্যাপক আজিজ বলেন, ‘আমরা কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না। মাত্র এক সপ্তাহের
ব্যবধানে ও উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়বে?
এটি
হতে পারে না। আমরা এখনও তার সাথে কথা বলতে পারিনি। বললে বিস্তারিত ঘটনা জানতে পারবো।’
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে তারা
সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন পরিবারের সদস্যরা। আগামীকাল (সোমবার) সকালে সোমার সঙ্গে
কথা বলার সুযোগ করে দেবে হাইকমিশন।
সোমা মেলবোর্নে পৌঁছার পর চাচাকে ফোন দিয়ে কথা
বলেছিলেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে চাচাতো ভাইবোনদের সাথে ফোনালাপে তিনি অস্ট্রেলেয়ার মানুষ
সম্পর্কে ইতিবাচবক মন্তব্য করেছিলেন বলেও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের
ডিন অধ্যাপক আব্দুল আজিজ। উচ্চশিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন নিয়েই
দেশ ছাড়েন মোমেনা সোমা।
অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকা দ্য এইজ অধ্যাপক আব্দুল
আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বছর খানেক আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সোমার
মা মারা যান। তার বাবা একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদেশে মেয়ের
আটকের খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন।
ডেইলি মেইল-সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পত্রিকায়
ঘটনা পুরোপুরি তদন্তের আগেই সোমাকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে
আহত রজারের কোনো আচরণ বিদেশে প্রথম যাওয়া তরুণীটিকে হামলায় উদ্বুদ্ধ করেছে কিনা- তা
প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে ‘মহানুভব’ (generous) বলে প্রচার করা হচ্ছে। সাধারণত, পশ্চিমা দেশে কোনো হামলায় মুসলিমদের সংশ্লিষ্টতা
মিললেই তদন্তের আগেই সেটিকে কথিত ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে প্রচার করার অভিযোগ রয়েছে কিছু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের
বিরুদ্ধে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ধর্মীয় বিদ্বেষ
0 facebook: