04 February 2018

এসব কেন করেছো? সব পত্র-পত্রিকা থেকে মিনিস্ট্রি থেকে আমাকে ফোন করছে!


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ধন্যবাদ তোফায়েল আহমেদ” ২০১৭ সালের ৫ই মে তেকারণ তিনি আমাকে এবং আমার ছেলে আজানকে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের গাড়ি থামিয়ে আমাদের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেনআমার জানা মতে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী এমন কাজ কখনও করেননিআজ তার পরের ঘটনাটা বলছি

আমার স্ট্যাটাসটা লেখার পরই নিউজ জি ২৪ ডটকম এটাকে নিয়ে একটি নিউজ করেনএরপর অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল আমাকে ফোন করে বিস্তারিত জানেন এবং তারাও  উজ করেনআমার স্ট্যাটাস এবং নিউজগুলো দ্রুত শেয়ার হতে থাকেআমার কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে প্রায় ছয় শর বেশিরাতে খুঁজে দেখলাম নিউজটি শেয়ার করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও আরও অনেকেবন্ধুদের কাছে শুনেছি মানীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও নাকি এই নিউজ/স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছিলেনপরবর্তী সময় জানতে পারলাম এই বিষয়টি প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ নিউজটি রিচ করেছেন

৮ মে দুপুরের দিকে হঠাৎ অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসলআমি প্রথমবার কলটি রিসিভ করিনিদ্বিতীয়বার একই নম্বর থেকে আবার কল আসলো ফোনটি রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ

তুমি কি সাহাদাত বলছো?
আমি উত্তর দিলাম
নানাজিম বলছি
আমি তোফায়েল আহমেদ বলছি
জ্বি স্যার বলেন (হঠাৎ থমকে গিয়ে বললাম)
আমি কি তোমাকে আর তোমার ছেলেকে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম?
জ্বি স্যার
তোমার ছেলে কেমন আছে?
জ্বি স্যার আল্লাহর রহমতে ভাল আছে
আচ্ছা তুমি এসব কি করেছোসব পত্র-পত্রিকা থেকে মিনিস্ট্রি থেকে নানা জায়গা থেকে আমাকে ফোন করছেএসব কেন করেছো?
স্যার আমার জায়গা থেকে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি মাত্রআর কিছু তো স্যার আমার করারও নাই

আরে এইসব কৃতজ্ঞতা কি এখন আর কেউ প্রকাশ করেতুমি তো তুলকালাম কাণ্ড করে ফেলছোঠিক আছে আমি একটা মিটিংয়ে আছিআমি কয়েকদিন ট্রাই করে তারপর তোমার নম্বরটা খুঁজে পেলামতোমার নম্বর সেভ করে রাখছি পরে কথা বলবো
ফোনটা রেখে দিলেন তিনিআমি কিছু সময় ধরে চুপ করে আমার কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলামআমার ছেলেকে নিয়ে আমার স্ত্রী আসলো আমার কাছে আমি তাকে বিষয়টা বললামও বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিল না
৯ মে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর শুয়েছিলাম আমার ছেলেকে নিয়েহঠাৎ স্যারের ফোন আসলো
হ্যালো নাজিম কেমন আছো?
জ্বি স্যার ভাল আছি? স্যার আপনি ভাল আছেন তো?
হ্যাঁ ভাল আছি
আচ্ছা কাল তো তোমার ছেলে জন্ম দিন তাই না (৫ তারিখ যখন স্যারের গাড়ি করে আসছিলাম তখন তিনি জানতে চেয়ে ছিলেন আজানের বয়স কত? আমি বলেছিলাম ১০ তারিখ ওর জন্ম দিন)
জ্বি স্যারস্যার আপনার মনে আছে?
হ্যাঁ মনে থাকবে না কেন (হাসতে হাসতে)

আচ্ছা আমি কাল তোমাদের জন্য গাড়ি পাঠালে তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে আমার বাসায় আসতে পারবেআমার বাসায় ওর জন্মদিন পালন করতাম
আমি আবারও থমকে গেলামস্যার স্যার করছি শুধু
হ্যালো নাজিম শুনতে পারছো
জ্বি স্যার শুনতে পারছিতাহলে তোমরা কি আসবে?
স্যার আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি আপনাকে দাওয়াত দিতে চাইআমার ছেলের প্রথম জন্মদিনটা আমার বাসাতেই করবোআপনি কি স্যার একটু আসবেন
তোমার বাসায়?
জ্বি স্যার
কোন আয়োজন করেছো বাসায়
জ্বি স্যার ছোট খাট একটা আয়োজন করেছিআপনি আসলে অনেক ভাল লাগবে আমাদের

ঠিক আছে আমি চলে আসবোকাল দেখা হবেভাল থেকো
চমকের পর চমক খেতে খেতে আমি পুরোই চমকাইতেছিলামবাসার সবাইকে বললামসবাই আমার মত চমক খাইলোবন্ধু বান্ধব, কলিগদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলে কেউ বললো উনি আসবেন আবার কেউ বললো না এতো ব্যস্ত মানুষ আসতে পারবে না মনে হয় ১০ মে ২০১৭ বাসায় ছোট খাট আয়োজন করলামবাসার সবাই উদ্রীব কখন মন্ত্রী আসবেপাঁচটা বেজে গেলে, ছয়টা বেজে গেলেআমরা অপেক্ষা করছিযখন সাতটা বাজলো স্যার এলেন নাতখন আমার মনে পড়তে থাকলে তাদের কথা যারা বলেছিল উনি ব্যস্ত মানুষ আসবে নামনটা আস্তে আস্তে খারপ হতে থাকলোআমার ছেলেকে কোলে নিয়ে বাসার মধ্যে পায়চারি করতে থাকলামভাবতে থাকলাম কি করিএকটা ফোন দিয়ে স্যারের কাছে জানা তো যায় উনি কোন ব্যস্ততার মধ্যে আছেন কি না?
ফোন দিলামএকবার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন তিনি

-হ্যাঁ নাজিম আমি বাসা থেকে বের হয়েছি১৫-২০ মিনিট লাগবে আসতেতোমাকে যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলাম আমি সেখানেই আসবো তুমি একটু নিচে এসে দাঁড়াও
এবার মুখে আবার হাসি আসলোআমি আমার বন্ধু মিঠুকে নিয়ে নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম
স্যার আসলেনসত্যিই তিনি আমার ফ্লাটের নিচে গাড়ি নিয়ে আসলেনআসপাশের লোকজন কানাঘুষা শুরু করে দিল এই বাসায় মন্ত্রী আসছেতোফালেয় মন্ত্রী আসছেইত্যাদি ইত্যাদি আমি স্যারকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলাম স্যার আমার আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করলেনঅন্যান্য বাচ্চাদের আদর করলেন, সবার সাথে পরিচিত হলেন, ছবি তুললেন, গল্প করলেন, কেক কাটলেন, খাবার খেলেনতারপর আমাদের মনকে তৃপ্ত করে ফেরত গেলেন

সত্যই এমন নেতা, এমন মানুষ, এমন অভিভাবক, এমন জনদরদী দরকার আমাদেরঅনেকে এটাকে উদাহারণ হিসেবে নিতে পারেন
  
ভাল থাকবেন ভাল রাখবেন স্যারস্যালুট

বিঃদ্রঃ স্যার বলেছিলেন আমি যে তোমার বাসায় এসেছি এটা নিয়ে কোনো নিউজ করো না আবারস্যার কোনো নিউজ করছি না শুধু মনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম

নাজমুস সাদাত নাজিম
বিজ্ঞাপন নির্মাতা
উৎসঃ ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন

0 facebook: