স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ এবার কাফনের
কাপড় শরীরে জড়িয়ে বকেয়া বেতন ও ইনক্রিমেন্টের ৭শ’ কোটি টাকা পরিশোধের দাবিতে রাজপথে নামেন গ্রামীণফোনের কর্মীরা। পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত
ঘরে ফিরবে না বলেও শপথ করেন ৬ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে
কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণাও তাদের। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে সারা দেশের গ্রামীণফোনের অফিসে তালা ও
ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছে গ্রামীণফোন শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদ ও গ্রামীণফোন শ্রমিক-কর্মচারী
লীগ।
গতকাল শনিবার
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। গ্রামীণফোনের শ্রমিক-কর্মচারীদের
দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বাংলাদেশ বেসরকারি পাট, সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে আন্দোলন
সংগ্রামে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
সমাবেশে
বক্তারা বলেন, গ্রামীণফোন প্রতারক একটি
প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা
প্রদান না করে উল্টো ভাড়া করা মাস্তান-দালাল দিয়ে অসহায় শ্রমিকদের নানা ভাবে
হয়রানি করছে। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা
সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন ধরে পাওনা পরিশোধ করছে না। পাওনা পরিশোধ না করলে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে সরকারকে
অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেলেও এদেশের
শ্রমিকদের পাওনা টাকা প্রদান করতে নানা টালবাহানা করছে। পাওনা পেতে এখন তাদের ঘুরতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে মানবতার মা আখ্যা দিয়ে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য যখন নানা পদক্ষেপ
নিচ্ছেন, তখন গ্রামীণফোন সরকারের সেই নীতির উল্টো পথে চলে ৬ শতাধিক
শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করে বেকারত্ব সৃষ্টি করছে। বেকারত্ব দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা এদেশের
মানুষ কখনো ভুলবে না। গ্রামীণফোনের কর্মীরা আপনারই ভাই-বোন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই শ্রমিকের কষ্ট অনুভব করেন। তাই গ্রামীণফোনকে কর্মীদের
পাওনা টাকা দিতে বাধ্য করাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
মানববন্ধন ও
সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেসরকারি পাট, সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম সবুজ। অনেকেই তাদের কর্মসূচিতে
একাত্মতা প্রকাশ করেন। গ্রামীণফোন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি লোকমান হোসেনের সভাপতিত্বে ও
গ্রামীণফোনের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে অন্যদের
মধ্যে বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোন শ্রমিক লীগের সভাপতি মুহম্মদ হাসমত আলী, সহ-সভাপতি রমজান আলী ও ফজলুল হক মিলন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহম্মদ বাদশা মিয়া, গ্রামীণফোন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ফয়েজ আহমদ,
সাধারণ সম্পাদক মুসলেম উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক ওলিউর রহমান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুহম্মদ
জাফর শেখ, গ্রামীণফোন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক
কামরুল হোসেন, গ্রামীণফোন কর্মচারী ইউনিয়ন
নেতা মো. শাহজালাল, নূর মোহাম্মদ, নূর আলম ও নূরে আলম প্রমুখ।
মানববন্ধনে
শ্রমিকরা বলেন, আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের পাওনা টাকা কেন দেওয়া
হবে না? গ্রামীণফোন তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এদেশের মানুষের টাকা লুটে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যদি হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে শতশত শ্রমিকের পরিবারে পুনরায় হাসি ফুটবে। মানববন্ধনে ‘ডিউটি নাই, বেতন নাই, ওভার টাইম নাই’, ‘শ্রম আইনকে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে গ্রামীণফোন’, ‘বাঁচতে দাও,
বাঁচতে চাই’, ‘ম্যানেজমেন্ট
কর্তৃক সকল ধরনের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ করো’, ‘গ্রামীণফোনের অসাধু কর্মকর্তাদের বিচার চাই’, ‘কোম্পানির কাছে জিম্মি শ্রমিক’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে
রাজধানীর রাজপথে দাঁড়িয়ে পাওনা আদায়ের দাবি জানান শ্রমিক-কর্মচারীরা। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা ও রংপুরসহ গ্রামীণফোনের সারা দেশের আঞ্চলিক
কার্যালয় থেকে ৬ শতাধিক শ্রমিক মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে হাইকোর্ট হয়ে
মুক্তাঙ্গনে গিয়ে মিছিল শেষ করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সমাবেশে
সাংবাদিকদের উদ্দেশে গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ের কর্মচারী মো. আবুল বাশার
আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘ভাই, আমাদের জন্য পত্রিকায় লেখালেখি করেন, আমাদেরকে
বাঁচতে দিন, গ্রামীণফোনের এই অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহ সহ্য করবেন
না। যখন ইচ্ছে তখন চাকরি থেকে
অব্যাহতি দেয়। আমাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ
না করলে আল্লাহ বরদাশত করবেন না’।
তিনি বলেন,
‘অধিকাংশ মিডিয়া গ্রামীণফোনের কাছে বিক্রি হয়ে যায়। সাংবাদিক-ক্যামেরাম্যান আসেন
ঠিকই, কিন্তু নিউজ প্রকাশ হয় না। ইত্তেফাক একমাত্র পত্রিকা, যারা সত্য প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা গ্রামীণফোনের টাকার কাছে বিক্রি হয় না’। এমন অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য
দেন অনেক কর্মী।
গ্রামীণফোন
লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়েজ আহমেদ ইত্তেফাক’কে বলেন, কোম্পানি যেভাবে শ্রমিক
নির্যাতন ও ছাঁটাই করছে, এতে করে শ্রমিকরা ব্যাপক
ক্ষতির সম্মুখীন হবে। স্তব্ধ হয়ে যাবে জীবন ব্যবস্থা। শ্রমিকরা বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়লে তারা খারাপ পথে চলে যাবে। কারণ কর্ম মানুষকে ব্যস্ত রাখে,
খারাপ পথে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
করেন।
গ্রামীণফোন
লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ইত্তেফাক’কে জানান, আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী
অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন। সাতশ পরিবারের মুখের খাবার কেড়ে নিবেন না। বর্তমান সরকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে,
বেকারত্ব নয়। গ্রামীণফোনের ভেতরে ও বাইরে যে অপশক্তি আছে, যারা শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে দেশকে একটা অস্থিতিশীল রাষ্ট্র বানাতে চায়
তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিরও দাবি জানান তিনি।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ঢাকা বিভাগ
0 facebook: