স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আগামীকাল
মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) পঞ্চম নির্বাচন। নির্বাচনবিধি অনুযায়ী রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা উৎসব। তাই উৎসবের এ নগরী এখন অনেকটাই নিশ্চুপ। নেই কোনো হাঁক-ডাক, প্রচার- প্রচারণা
উৎসব। নেই রাস্তায় মোটর শোডাউন কিংবা
কর্মীদের হুড়োহুড়ি। কেবল ভোটের জন্য অপেক্ষা। ভোটারদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটি অবশ্য স্পষ্ট। নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। ভোটের দিনের কৌশল নির্ধারণে
ব্যস্ত সবাই।
কে হবেন
নগরপিতা তা নির্ধারণে প্রায় ৫ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন কাল। একদিকে সরকারি দল, অন্যদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী দল। কোন শিবির থেকে উঠে আসবেন নগরপিতা সে ফলাফল পেতে আরো
একদিন অপেক্ষা করতে হবে নগরবাসীকে।
সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনা সিটির এ নির্বাচন প্রধান
প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জন্যেই অ্যাসিড টেস্ট। তাই বড় দুই দলই জয়ের জন্য মরিয়া। এ জন্য ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ঘোষিত ২৩৪টি ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্র নিয়েই দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভোটারদের।
স্থানীয় আওয়ামী
লীগের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা হলে সেটি
আগামী নির্বাচনে সরকারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সে কারণে নির্বাচন পরিচালনা
কমিটির পক্ষ থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
তবে বেশকিছু
ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী কিংবা অতি উৎসাহী সরকারদলীয় নেতাকর্মী থাকতে পারে যারা
প্রতিপক্ষকে দমাতে নিজ উদ্যোগে ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি এসব কেন্দ্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কেন্দ্র দখল কিংবা ভোট চুরির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে
ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে শেষ হয় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার
শেষ দিনে মহানগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি মুখরিত ছিল মাইকিংয়ে। বিভিন্ন জায়গা ছেঁয়ে গেছে
পোস্টার আর লিফলেটে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রার্থীরা চালিয়েছেন গণসংযোগ ও প্রচারণা।
প্রথমবারের মতো
মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশনে। মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী হলেন- আওয়ামী
লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপির নজরুল
ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান
মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের
মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো: মিজানুর
রহমান বাবু (কাস্তে)।
রিটার্নিং
অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা
থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে
রোববার দিবাগত রাত ১২টায়। একই সঙ্গে বহিরাগতদের শনিবার রাত ১২টার মধ্যে সিটি এলাকা ত্যাগ করেছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার বিকাল থেকে ১৬ প্লাটুন
বিজিবি মাঠে নামে।
তাছাড়া
মহানগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর
প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার
১০৭ জন।
সংশ্লিষ্ট
সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা
রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন। এ নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে দুটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার
করা হবে। এ দুটি কেন্দ্রের ১০টি বুথে
ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন দুই হাজার ৯৭৮ ভোটার।
কেসিসি
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: ইউনুচ আলী জানান, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের সকল
প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
খুলনা মহানগর
পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন বলেন, নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি ভোট কেন্দ্রকে
অতি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটের দিন পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি, এপিপিএনের প্রায় ১০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
খুলনা শহর সিটি
করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম দুটি নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি থেকেই। তবে ২০০৮ সালে তৃতীয় নির্বাচনে
জয় ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগের খালেক। তবে ২০১৩ সালে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনির কাছে ৬১ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি।
সচেতন তরুণ
ভোটাররা বলছেন, মেয়র পদটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত
এ পদটিকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী সুবিধা দেয়া উচিত। জাতীয় রাজনীতির বিভেদ সামনে রেখে কেবল বিরোধী পক্ষের
নেতা হওয়ার কারণে তাকে কাজ করতে না দিলে তা জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রভাব ফেলে।
খুলনা সিটি
কররেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হবে তরুণ ভোটাররা। এ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া ৫২ হাজার ৫২৭ তরুণ
ভোটারের হাতেই আগামী দিনের নগরপিতার ক্ষমতার চাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারাই কেসিসি নির্বাচনের ফলাফলে মূল ভূমিকা পালন করবেন। অপরদিকে প্রায় ৮০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন এই
সিটিতে। ভোটের ফলাফলে তাদের গুরুত্বও
অনেক। একই সঙ্গে ২৫ হাজার পাটকল
শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ভোটররাও প্রভাব ফেলবে জয়-পরাজয়ে।
0 facebook: