ফাইল ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন।
আপিল বিভাগে গতকালের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আপিল আবেদনের রায়ের জন্য তিন নম্বর ক্রমিকে ছিল। সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে আদালত বসে। কার্যক্রম শুরু হলে প্রথম দুটি মামলার জন্য তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ বসে। ওই দুটি মামলার কার্যক্রম শেষে ৯টা ৩৩ মিনিটে কোর্ট উঠে যায়। এরপর ৯টা ৫০ মিনিটে আপিল বিভাগের কার্যক্রম আবার শুরু হয়। আদালতে উপস্থিত কয়েক হাজার আইনজীবী ও গণমাধ্যমের কর্মীরা তখন রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে বলেন, আমি গত দিনে সব সাবমিশন করতে পারিনি। আমার ফারদার কিছু সাবমিশন করতে হবে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, না, না। এখন তো রায়। আপনি তো শুনানি করেছেন। কী বলতে চান? আরগুমেন্ট থাকলে এখন করেন। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাত্র এক দিন চাই। এক দিনে কী হবে। কাল শুনানি ও রায়ের জন্য থাক।
এ সময় প্রধান বিচারপতি অন্য বিচারপতিদের সাথে আলোচনা করে বলেন, আগামীকাল আমাদের একজন ব্রাদার (বিচারপতি) আদালতে আসতে পারবেন না। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি সাড়ে ১১টার দিকে আসেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ১২টায় দেন। তখন আদালত ১২টায় অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির জন্য সময় দেন।
এরপর দুপুর ১২টা ৪ মিনিটে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের শুনানি গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল খালেদার জামিন বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদা, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আইনজীবী মীর হেলাল ও বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, যদি জীবনহানির আশঙ্কা না থাকে এবং মেডিক্যাল বোর্ডের যথাযথ মতামত না থাকে তাহলে শুধু অসুস্থতার যুক্তিতে জামিন দেয়া যায় না। তিনি বলেন, ওই সব মামলার অভিযোগ আর এ মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই সব মামলায় আসামিদের জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মেডিক্যাল বোর্ডের যথাযথ মূল্যায়ন বা মতামত ছিল। কিন্তু এ মামলায় জামিন প্রশ্নে মেডিক্যাল বোর্ডের এ ধরনের কোনো মতামত বা মূল্যায়ন নেই। তিনি বলেন, আসামি যদি গুরুতর অসুস্থ হয় বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে এবং সাজা যদি তিন বছরের ঊর্ধ্বে না হয় তাহলে অসুস্থতাজনিত কারণে আসামি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু এই মামলায় আসামির (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি যুক্তিও নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বা শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আদালতে যে তথ্য দেয়া বা দেখানো হয়েছে তা কেবল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর। আর ওই সব মামলায় রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ মামলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, হাইকোর্ট জামিন বিবেচনা করেছেন অসুস্থতার কারণে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জামিন পেলে তারা আপিল শুনানি করতে বিলম্ব করবে। বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা পাল্টা বক্তব্য দেব না। শুধু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেননা আমরা যা পড়তে পারিনি তার প্রত্যেকটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিস্তৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা আমাদের পক্ষে গিয়েছে। তিনি বলেন, ওই মামলাগুলোর কোনোটিতে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর সরকার বা দুদক আপিল করেনি। তিনি বলেন, সাত বছরের সাজা মামলায় হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জামিন দিয়েছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধেও সরকার বা দুদক আপিল করেনি। ইসমত আরাকে হাইকোর্টের একক বেঞ্চ জামিন দিয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুদক আপিল করেনি। তিনি বলেন, হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন এমন একটি মামলায়ও সরকার বা দুদক আপিল বিভাগে আসেনি। অথচ এই একটি মামলায় সরকার ও দুদককে দেখতে পাচ্ছি। এই মামলাটা বেছে নেয়া হয়েছে।
শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতির সাথে আলোচনা করে। রায়ের জন্য আজ বুধবার দিন রাখেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল হক, আবদুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, নওশাদ জমির, রাগীব রউফ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, সগীর হোসেন লিওন প্রমুখ।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক প্রমুখ আদালতে ছিলেন।
এর আগে গত ৯ মে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ১৫ মে দিন নির্ধারণ করেছিলেন। গত ৮ ও ৯ মে দুই দিন এ আপিলের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইজীবীরা আদালতে বলেছিলেন, শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচারব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। তারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, তারা একটি মামলাও দেখাতে পারবেন না যে, হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছে। অন্য সব মামলার থেকে এ মামলা আলাদা করে এনে দ্রুত বিচার করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র। আমরা মানি বা না মানি গোটা রাষ্ট্রকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। এতে সারা দেশেই আইনজীবীদের মধ্যে এমন একটা ধারণা কোন মামলায় জামিন হবে কী হবে না, তা নির্ভর করছে বিশেষ ক্লিয়ারেন্স আছে কি না, তার ওপর।
গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
0 facebook: