16 May 2018

রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়ানবাগীকে মুরতাদ ঘোষণা করার দাবিঃ আওয়ামী ওলামা লীগের


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা, ঢাকাসহ সারাদেশে মসজিদ ভাঙ্গার হোতাদের গ্রেফতার, দেওয়ানবাগীর ইসলাম অবমাননা ও ধৃষ্টতার প্রতিবাদ, তামিল টাইগারদের ন্যায় পার্বত্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো, মাদরাসার ৩২টি পাঠ্যপুস্তক থেকে কোন আয়াত শরীফ বাদ না দেয়া, ভারতীয় চ্যানেল ও সিরিয়াল অবিলম্বে বন্ধ এবং আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার দাবীতে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ ও সমমনা ১৩ দল গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে মানহানীকর বক্তব্য, লেখা, প্রকাশনা, টিভি প্রোগ্রাম, রেডিও প্রোগ্রাম, ইন্টারনেটে স্ট্যাটাসসহ যে কোন বিষয় প্রচার, প্রকাশ ও প্রদানকারীর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- দিতে হবে।

তারা বলেন, আর মাত্র ৩-৪ দিন পর আসন্ন পবিত্র রমাদ্বান শরীফ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার সরকারের হাঁকডাকের কোনো তোয়াক্কাই করছে না অসৎ সিন্ডিকেট। অথচ দুবাই, কাতার, ওমান, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, প্রভৃতি দেশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা ৫০% শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে। ছাড় দেয়ার এক প্রকার প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা যায় সেদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিভিন্ন উৎসবে জিনিসপত্রের দাম কমলেও আমাদের দেশের চিত্র বিপরীত। তাই রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ৮৬ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ওলামা লীগ জিহাদ ঘোষণা করছে। এছাড়া আসন্ন রমাদ্বান শরীফে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হবে ৪৫ দিনের ছুটি দিতে হবে। ঈদে ১০ দিন জাতীয় ছুটি দিতে হবে। রমজান মাসে বিশ্বকাপসহ সব ধরনের খেলাধূলা বন্ধ, দ্রব্যমূল্য হ্রাস এবং টিভি চ্যানেলে অশ্লীল অশালীন নাচ-গান বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও সিরিয়াল নিষিদ্ধ করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সদরঘাটে বাইতুন নাজাত মসজিদ, পোস্তগোলায় গাউসে পাক মসজিদ, কুড়িল মসজিদ ভাঙ্গার হোতারাসহ বুড়িগঙ্গা নদী তীরের অনেক মসজিদ এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নামে ৫০টি মসজিদ ভাঙ্গার হোতাদের গ্রেফতার ও ফাঁসি দিতে হবে। অন্যথায় মসজিদ বিরোধী দুষমনদের প্রতিহত করা হবে। মসজিদ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র কোন মুসলমানরা বরদাশত করবেনা। উন্নয়নের নামে মন্দির অক্ষত রেখে মসজিদ উচ্ছেদ করা কি অসাম্প্রদায়িকতা? সরকারকে বিতর্কিত করার এসব হোতাদের গ্রেফতার করতে হবে।

তারা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, জঙ্গি, মৌলবাদীদের প্রতিহত করতে যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরসহ সকল ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলবে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আগামীতে নৌকাকে বিজয়ী করে আবারও সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

বক্তারা বলেন, দ্বীন ইসলামের ঘোরতর শত্রু, কুখ্যাত ভন্ড দেওয়ানবাগী মুরতাদ জান্নাতে নারীগণের সাইয়্যিদা হযরত ফাতেমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম সম্পর্কে মারাত্মক, চরম মানহানীকর কুফরী বক্তব্য দিয়েছে। উনাকে নিয়ে অত্যন্ত কুৎসিত, দৃষ্টতাপূর্ণ দাবি করেছে।

দেওয়ানবাগীর অসংখ্য ইসলাম অবমাননাকর ও ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঈমান নষ্ট করছে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চলছে। ইসলাম বিরোধী মারাত্মক কুফরী আক্বীদা প্রচার করায় দেওয়ানবাগী ভন্ডকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুরতাদ ঘোষণা করতে হবে। তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার এবং ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র এনে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের ৯৬৯ এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে সশস্ত্র ট্রেনিং নিচ্ছে। অবৈধ অস্ত্র সারাদেশে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তাই তামীল বিদ্রোহীদের মতো এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে হবে। বাংলাদেশের অখন্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্রুত সামরিক অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে। শান্তিচুক্তির আড়ালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এক গ্রুপ জেএসএসসরকারকে সামলাচ্ছে অপর গ্রুপ ইউপিডিএফসশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রকারী প্রতিষ্ঠান সিএইটি কমিশন, ইউএনডিপিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ করতে হবে।

কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত শরীফে সন্ত্রাসবাদে উৎসাহিত হওয়ার অভিযোগ তুলে মাদরাসা ৩২টি পাঠ্য বই থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ বিকৃত এবং বাদ দেয়ার চক্রান্ত করছে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু হিন্দুদের ধর্মীয় পাঠ্য বইয়ে কৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করার আদেশ দিয়েছে। বইগুলোতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, কংসবদ, জরাসন্ধ বদ, শিশুপাল বদ যুদ্ধসহ আরো অনেক যুদ্ধের কাহিনী পড়ানো হচ্ছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে, সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে দ্বীন ইসলাম ধর্মের উপর হাত দিয়েছে দুই মন্ত্রণালয়। অথচ জিহাদ হলো সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা যা প্রতিটি রাষ্ট্রেরই রয়েছে। আর সন্ত্রাসবাদ বা যুলুম নির্যাতন হারাম। সন্ত্রাসী কার্যক্রম হারাম। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনি ইসলামী দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হলো জিহাদ। তাই জিহাদকে সন্ত্রাসবাদের সাথে মিলানো চরম মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়। মুর্খ নাস্তিকরা আজ পাঠপুস্তক থেকে জিহাদ আয়াত শরীফ উঠাতে চাচ্ছে। কাল তারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের থেকে জিহাদ সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে বাদ দেয়ার দাবী তুলবে।

সরকার বিরোধী জনরোষ বন্ধ করতে অবিলম্বে পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ বিকৃত ও বাদ দেয়ার চক্রান্তকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। এর নেপথ্যে থাকা পবিত্র কুরআন শরীফ বিরোধী নাস্তিক্যবাদী হোতাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি নিষিদ্ধ করতে হবে। অবিলম্বে মাদরাসার বই থেকে জিহাদ সংক্রান্ত আয়াত শরীফ বাদ দেয়ার নাস্তিক্যবাদী ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হারাম সেটা অর্ন্তভূক্ত করা হোক।
বক্তারা বলেন, একই দিনে চাঁদ দেখে রোজা রাখা বা ঈদ করা দ্বীন ইসলাম সম্মত নয়। কারণ প্রত্যেক দেশের স্থানীয় সময় রয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন অ লে সময়ের পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য ১৪ ঘণ্টারও বেশি সুতরাং কোন দেশে ঈদ পালিত হলে অন্য দেশে ঈদ পালন শেষ হবে; এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই শরীয়তের নিয়ম। যার যার অ লে চাঁদ দেখে ঈদ এবং রোযা বা অন্যান্য দ্বীনী আমল পালন করতে হবে। কোন স্থানের শাওয়ালের চাঁদ দেখে পৃথিবীর সব স্থানে ঈদ পালন সম্ভব নয় বরং অবান্তর।

সুতরাং কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ বিকৃতকারী, আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদের জনক ওহাবী-সালাফী গোষ্টীদের নিষিদ্ধ করতে হবে। একই দিনে ঈদ পালনের শরীয়ত বিরোধী তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। টিভি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এসব ভন্ড ওহাবী-সালাফীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে এসব ভন্ডদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা দিতে হবে। বাতিল মতবাদ হিসেবে সালাফী মতবাদ নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশের একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ীরা মরা পশুর গোশত আমদানী করছে। এছাড়া বয়স্ক, রোগাক্রান্ত এবং ক্ষতিকারক ইনজেকশন পুশ করা গরুও অবাধে আমদানী করছে। এতে যেমন দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ হারাম পশু এদেশের মুসলমানদের খাওয়াচ্ছে অন্যদিকে জনগণের মধ্যে এসব বিষাক্ত পশুর মাধ্যমে স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে। সরকার, প্রশাসন নির্বিকার। এদের বিরুদ্ধে এখানো কোন অভিযান নেই। অবিলম্বে এসব অসৎ ব্যবসায়ীদেও গ্রেফতার করে ভারত থেকে সব ধরনের গোশত আমদানী নিষিদ্ধ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছে, “ভারতীয় সিনেমা এবং সিরিয়ালের কারণে সামাজিক সমস্যা বাড়ছে” “বাজে গল্পের সিরিয়াল ভারতে সামাজিক সমস্যা বাড়াচ্ছে। ভারতে যদি ভারতীয় সিরিয়ালে এই প্রভাব হয় তাহলে বাংলাদেশে এর বিষাক্ত প্রভাব কতটুকু হবে তা সহজেই অনুমেয়।

ইতিমধ্যে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো ব্যাপকভাবে বিপথগামী করছে আমাদের তরুণ-তরুণীদের। পারিবারিক বন্ধন তথা সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে দিচ্ছে। ফলে সমাজে খুন, সম্ভ্রমহরণ, রাহাজানি, ভ্রুণ হত্যা, উত্ত্যক্ত করাসহ ইত্যাদি ইত্যাদি অপকর্মগুলো বেড়েই চলছে জ্যামিতিক হারে। আমাদের ধর্ম, আমাদের পরিবার প্রথা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সুক্ষ্মভাবে ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে টিভি সিরিয়াল ও টিভি আগ্রাসনের মাধ্যমে প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে। অবিলম্বে ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসকারী সিরিয়াল ও পর্ণ সাইট এদেশে বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশকে হেয় ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ভারতীয় সেনা প্রধান, বিজেপির এমপি ও অন্যান্য উগ্রবাদী হিন্দুরা অব্যাহতভাবে ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ ও নেক্কারজনক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। নেপাল, মালদ্বীপের মতো ক্ষুদ্র দেশ যেখানে ভারতের ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরণের তাৎক্ষনিক জবাব দেয় সেখানে বাংলাদেশের মতো স্বাধীন চেতা বীরের জাতির পক্ষে জবাব না দেয়া কাপুরুষতা। বীরের জাতি হিসেবে বীরদের মতো ভারতীয় ঔদ্ধ্যত্বের জবাব দিতে হবে। তাৎক্ষনিক পাল্টা কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সভাপতি- সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি, মাওলানা মুহম্মদ শোয়েব আহমেদ, মাওলানা আল আমীন, ক্বারী, মাওলানা আসাদদুজ্জামানসহ ১৩টি ইসলামী সমমনা সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।


শেয়ার করুন

0 facebook: