স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ নিত্যপণ্যের
বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গত রোববার সচিবালয়ে ডেকেছিলেন
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ,
টিকে গ্রুপসহ বড় আমদানিকারক এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে
সরকারকে আগেই হুঁশিয়ারি করে বলেছে, এসব কোম্পানির অংশগ্রহণ ছাড়া
দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করা সম্ভব নয়। রিপোর্ট আমলে নিয়ে কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ বাণিজ্যমন্ত্রীর। সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মজুত রয়েছে দাবি
করে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেউ কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের
মূল্যবৃদ্ধি বা সঙ্কট সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাজার
বিশ্লেষকদের মতে, হুঁশিয়ারিতে কিছুটা কাজ হয়েছে। গত দুই দিনে ডিলার বা আড়তদার পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম
নতুন করে বাড়েনি; কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই কিছু
নিত্যপণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, চিনি, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুরসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্য চাহিদার তুলনায় মজুত রয়েছে কয়েক গুণ বেশি।
সরবরাহও
স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিটি পণ্যের মজুত বিগত
দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও এ সব পণ্যের কোনো সঙ্কট নেই বা মূল্য বাড়েনি। কাজেই এসব পণ্যের সঙ্কট বা মূল্যবৃদ্ধির কোনো
সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে
যাচ্ছে। সরবরাহ চেইনে যাতে কোনো ধরনের
সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সব আমদানি পয়েন্টে
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, রসুন, গরুর গোশত, লবণ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের
মূল্য গত বছরের তুলনায় কম রয়েছে। তেলের মূল্যও স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারেও গত বছরের তুলনায় এসব পণ্যের মূল্য কম রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের
বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করবে। আশা করি কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাবে না।
বাস্তবতা হলো,
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে
নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ, মুরগি, চিনিসহ বেশকিছু
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত এক মাসে বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে বহু নিত্যপণ্যের। টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে
৩৬ শতাংশ। এক বছরে বৃদ্ধির হার ৬৩ শতাংশের
বেশি। আদার দাম গত এক মাসে ৫ দশমিক ২৬
শতাংশ বেড়েছে বলে টিসিবি উল্লেখ করলেও এক বছরের ব্যবধানে ২৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির
খরব দিয়েছে সংস্থাটি। ভুক্তভোগিদের মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতারা একেক সময় একেকটি
অজুহাত খুঁজে বের করেন। তাদের হাতে এবারের অজুহাত
রমজান।
গতকাল রাজধানী
ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের সাথে কোনোরূপ সম্পর্ক না থাকলেও বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে
আকাশছোঁয়া দামে। পেঁপের দাম মাসখানেক ধরেই
বাড়তি। গতকালও বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা
কেজিদরে। বেগুনের দাম ৪০ থেকে বেড়ে
হয়েছে ৮০ টাকা। ৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে
বরবটি, টমেটো, করল্লা,
কাকরোলসহ আরো কয়েকটি সবজি। কচুর লতি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঢেঁড়শ প্রভৃতি সবজির কেজিও গতকাল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। রমজানের সাথে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা
করে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতা মানিক বলেন, রমজানে মানুষ সবজি বেশি খায় না এ কথা ঠিক। কিন্তু আমরা যারা সবজি বিক্রি করি তাদের তো বাড়তি
দামে সবকিছু কিনতে হয়। আমাদের খরচ বেড়ে যায়, কাজই দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। তা ছাড়া পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে তো আমাদের কিছুই করার
থাকে না।
রাজধানীর
শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কাওরানবাজার,
ঠাটারিবাজার, বাদামতলী,
শ্যামবাজার, মৌলভীবাজার, রহমতগঞ্জ, মোহাম্মদপুর, নিউ মার্কেট, শান্তিনগর,
রামপুরা, ফকিরেরপুল ও মিরপুরের কয়েকটি
বাজার থেকে তথ্যসংগ্রহ করে টিসিবি তার ওয়েভসাইটে উল্লেখ করেছে, ঢাকায় গতকাল খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা
কেজিদরে বিক্রি হয়েছে। যদিও এসব বাজারের কয়েকটি ঘুরে
কোথায় ৪০ টাকাদরের দেশী পেঁয়াজের সন্ধান মেলেনি। ৫০ টাকায় যেসব দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে সেগুলোও
মানগত দিক থেকে বেশ নি¤œ, আকারে বেশ ছোট। ভালো মানের দেশী পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে
দেখা গেছে বেশির ভাগ বাজারে। এক সপ্তাহ আগে এ পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং এক বছর আগে ছিল২৫ থেকে ৩০ টাকা।
কেবল পেঁয়াজ নয়,
অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই টিসিবির ওয়েভসাইটে উল্লিখিত দরের
সাথে বাজারের প্রকৃত দরের মিল পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টিসিভির ওয়েভসাইটে অনেক পণ্যের নামই নেই। বিশেষ করে শাক-সবজিসহ অধিকাংশ কাঁচামালের দাম তারা ছেড়ে
দিয়েছেন বিক্রেতাদের ইচ্ছার ওপর। তারা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকছেন, যার থেকে যা পারেন আদায় করছেন। ফলে এক বাজারের সাথে অন্য বাজারের দরে মিল নেই। সামঞ্জস্যতা মেলে না পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা
বাজারদরের।
অনুসন্ধানে
জানা যায়, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের
মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের অসাধু মানসিকতাই দায়ী। তারা কেবল উপলক্ষ খোঁজেন, কিভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়াবেন এবং বাড়তি মুনাফা লুফে নেবেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে চাঁদাবাজের সংখ্যা ও চাঁদার হার
বেড়ে যাওয়া, যানজট এবং অন্যান্য কারণে ব্যবসা পরিচানায় খরচ বেড়ে
যাওয়া। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজার
এবং পাইকারি বাজার অপরিবর্তিত থাকলেও উৎসবের অজুহাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে
দেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা রমজান উপলক্ষে
বাড়তি দামে পণ্য কেনার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন অধিকাংশ ক্রেতা। ফলে কোনোরূপ আপত্তি বা যুক্তিতে না গিয়ে বিক্রেতার
চাওয়া দামেই পণ্য কিনে নেন অনেকে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ব্যবসা ও বাণিজ্য
0 facebook: