ফাইল ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আগামীকাল ঈদপূর্ব শেষ কর্মদিবস। অনেকেই আগেভাগে ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। ঈদযাত্রীদের ভোগান্তির শুরু স্টেশন-টার্মিনাল থেকেই। সময়মতো গাড়ি ছাড়ছে না বাস টার্মিনালগুলো থেকে। অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ট্রেনের শিডিউল।
গতকাল সকাল থেকেই ট্রেন ছাড়ে দেরি করে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়তে গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্ব হয়। স্টেশনের প্ল্যাটফরমে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী অবণী বলেন, সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়বে জেনে না খেয়ে স্টেশনের চলে আসেন। কিন্তু ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরি করে ট্রেন ছাড়ে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলসাগর ছাড়াও আন্তঃনগর অধিকাংশ ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় ছিল। মূলত তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় তারাকান্দি থেকে ঢাকাগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এর জেরেই পরবর্তী ট্রেনগুলো আটকা পড়ে। দিনের প্রথম ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস দিয়েই শুরু হয় বিলম্ব যাত্রা। ভোর ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে সকাল ৭টায়।
তাছাড়া রংপুর এক্সপ্রেসে ১ ঘণ্টা, সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, লালমনি এক্সপ্রেসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, একতা এক্সপ্রেসে দেরি হয় ২০ মিনিট। গতকাল ঢাকা থেকে ৬৮টি ট্রেন ছেড়ে যায়। এরমধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের অবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে গতকাল ভোরেই তাগিদ দেওয়া হয়।
গতকাল সকালে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে বৈঠক করেন। সময়মতো ট্রেন ছাড়া নিশ্চিত করতে জরুরি বৈঠক করেন তারা। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ট্রেনের বিলম্ব সহনীয় রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু সময় দেরি হতে পারে। তবে দায়িত্বে গাফিলতির কারণে ট্রেনের যাত্রাবিলম্ব মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এদিকে গতকাল ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন টার্মিনাল-কাউন্টারে মানুষের ভিড় ছিল আগের দিনের তুলনায় বেশি। সময়মতো বাস ফেরার কারণে ঢাকা থেকে ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। আর তাই মানুষ টিকিট হাতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে অপেক্ষায় আছেন বাস ছাড়ার। বাক্স-পেঁটরা নিয়ে বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রীরা উপস্থিত হন কাউন্টারে। ঘাটের ভোগান্তি-পথের জট মাড়িয়ে গাড়ি ফিরতে ফিরতে কমপক্ষে ১-২ ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। ভোগান্তির তীব্রতায় অনেক যাত্রীর কাছে বাড়ি ফেরার আনন্দ হয়ে যায় ম্লান।
যাত্রীরা জানান, যাত্রাবিলম্বের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফেরা শুরুর পর পদে পদে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে ঘাট পার হতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষকেও বিভিন্ন সড়কে থেমে থেমে আগাতে হয়। বাসের যান্ত্রিক ত্রæটি, গরুর হাট এবং যানজটপ্রবণ স্পট পার হতেই বিপত্তি। যাত্রীদের চাপ দেখা না গেলেও খুলনা-যশোরগামী কয়েকজন যাত্রী জানালেন, বাসের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। সকালে যাত্রী কম হলেও কল্যাণপুরে দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আসিফ।
নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শৌখিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বাস আটকা পড়েছে। রাতের বাসগুলো এখনো এসে পৌঁছায়নি। যশোর-খুলনার পথে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক রবিনও জানালেন দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরি পারাপারে ১৪-১৫টি বাস আটকে আছে তাদের। তবে পর্যাপ্ত বাস থাকায় আধা ঘণ্টা পরপর ছাড়ছে বলে জানান তিনি। গতকাল দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং সিলেট ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার বাস ছাড়ে। তবে ময়মনসিংহ পথে কোনো বাসেই অগ্রিম টিকেট দেওয়া হয় না। ময়মনসিংহে গাড়ি ছাড়ে মোটামুটি যথাসময়ে।
অন্যদিকে ঢাকার নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। মানুষ লঞ্চের ছাদে উঠেও যাতায়াত করছেন। এমন অবস্থা তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গত শুক্রবার ৯৬টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে বিভিন্ন গন্তব্যে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে বিশেষ লঞ্চ ছিল ১৬টি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ছে। আর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি রুট পুনরায় চালু হয়েছে। নাব্যতা সঙ্কটের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গতকাল ১৬টি ফেরি চালু হয়। এর কারণে পদ্মার দুই পাড়ে বাস-ট্রাকসহ সড়কযানের জট কমেছে। আগের দিনের তুলনায় পরিস্থিতি ভালো হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: