27 August 2018

মুনাফালোভী সউদী মুয়াল্লেমদের বাংলাদেশী হাজিদের সাথে দুর্ব্যবহার চরমে পৌঁছেছে


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী সউদী মুয়াল্লেমদের দুর্ব্যবহার চরমে পৌঁছেছে। সদ্যসমাপ্ত পবিত্র হজ্জের পাঁচ দিন মিনা-আরাফায় অধিকাংশ বাংলাদেশী হাজ্জিদের সাথে সউদী মুয়াল্লেমদের বিমাতাসূলভ আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিমানের প্রথম ফিরতি হজ্জ ফ্লাইট (বিজি-৪০১২) ৪১৯ জন হাজী নিয়ে আজ রাত ১০ টায় হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেদ্দাস্থ আন্তর্জাতিক হজ টার্মিনালে স্থাপিত বিমানের অস্থায়ী ক্যাম্প। গতকালই মক্কা থেকে ফিরতি হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের জেদ্দা বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ চলতি বছর ৬২ হাজার ৭শ” ৯৬ জন হজযাত্রীকে সউদী আরবে নিয়ে গেছে। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ এ তথ্য জানিয়েছেন।

সউদী আরব থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিনা-আরাফায় আল্লাহ’র মেহমান হাজিদের নিন্মমানের খাবার পরিবেশন, প্রত্যেক হজ এজেন্সি’র নির্ধারিত তাবুতে ৫০/৬০ জন হাজির সিট কম, লক্কর-ঝক্কর নন-এসি বাস দেয়া এবং মিনা-আরাফা-মুজদালিফার রাস্তা-ঘাট চেনেন না এমন ড্রাইভার ও হেলপার দিয়ে বাস চালানোর কারণে এবার বাংলাদেশী হাজীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেক ড্রাইভার রাস্তা-ঘাট না চেনার কারণে মিনা-আরাফা ও মুজদালিফায় হাজিদের নিয়ে ৬/৭ ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করেছে। এতে ক্ষুর্ধাত হাজিগণ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। সউদী সরকারের ই-হজ সিস্টেম অনুসরণ করে আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী মুয়াল্লেমদের সকল প্রকার সার্ভিস চার্জের অর্থ আগেভাগেই পরিশোধ করার পরেও কেন বাংলাদেশী হাজিদের সেবা প্রদানে ঢীলে-ডালা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা’ খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মক্কা থেকে একাধিক সূত্র এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গত শনিবার রাতে মক্কাস্থ মুয়াসসাসায় হজ পরবর্তী পুনর্মিলনী সভায় হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইত তসলিম বাংলাদেশী হাজিদের সেবা প্রদানে সউদী মুয়াল্লেমদের চরম উদাসিনতা ও গাফলতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। মক্কাস্থ মুয়াসসাসায় অনুষ্ঠিত হজ পরবর্তী সভায় সউদী নেতৃবৃন্দ মিনা-আরাফায় বাংলাদেশী হাজিদের তাবু ও বাস স্বল্পতার দরুণ দু:খ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশী হাজিদের দুর্ভোগ লাঘব এবং যৌক্তিক দাবি সমূহ মেনে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুত দেন মুয়াসসাসার নেতৃবৃন্দ। আগামীতে বাংলাদেশী হাজীদের যথাযথ সেবা নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রুতি দেন তারা। মক্কা থেকে হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ তথ্য জানিয়েছেন।

মুয়াসসাসার সভায় হাজীদের মান সম্পন্ন খাবার সরবরাহে চরম উদাসিনতার তীব্র প্রতিবাদ এবং আইবিএএন-এর জমাকৃত লাখ লাখ সউদী রিয়াল ফেরত দেয়ার জন্য হাবের পক্ষ থেকে মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জোর দাবি জানান। হজ পরবর্তী সভায় মুয়াসসাসার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাকি ওমর হারিরি ও ডিজি ওমর সিরাজ আকবরসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আনিছুর রহমান, রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ মিশনের কাউন্সেলর হজ মাকসুদুর রহমান, হাবের সভাপতি আলহাজ আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া, মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, হাবের শীর্ষ নেতা রুহুল আমিন মিন্টু, হাবের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ গোলাম সরওয়ার ও সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ সম্রাট।

সভায় ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সউদী সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশী হাজিদের সৃষ্ট সঙ্কট দূর করার অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রদূদ গোলাম মসীহ বলেন, বাংলাদেশী হাজীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ঢাকায় সম্পন্ন করার জন্য সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সউদী সরকার আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কার্যকরী উদ্যোগ নিবে।

এদিকে, সভা শেষে মুয়াসসাসার খাবারের হল রুমে ভিআইপি’দের সারিতে হাবের সভাপতি আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়ার চেয়ার না থাকায় হাবের ইসি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদকে হাবের মহাসচিব সভাপতি’র জন্য সিট ছেঁড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি সিট না ছাড়ায় উভয়ের মধ্যে উচ্চ্য-বাচ্চ্য হওয়ায় উপস্থিত সউদী মুয়াসসাসার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশী অতিথিবৃন্দ বিব্রতবোধ করেন। মক্কা থেকে হাবের সাবেক একজন ইসি সদস্য এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাতে জেদ্দা থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি বিজনেস অটোমেশনের প্রধান সমন্বয়কারী কবির আল মামুন জানান, বিমানের ফিরতি হজ ফ্লাইটের সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। হজ টার্মিনালে আগত হাজিগণ যাতে ভোগান্তির কবলে না পড়েন সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। হজ এজেন্সি’র মালিক মাওলানা তাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এক শ্রেণির সউদীর অতি মুনাফালোভী মুয়াল্লেম বাংলাদেশী হাজিদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করছে। মুয়াল্লেমদের সকল সার্ভিস চার্জের অর্থ পরিশোধের পরেও অধিকাংশ বাংলাদেশী হাজিদের কষ্ট দিচ্ছে। মিনা-আরাফায় হাজীদের নিন্মমানের খাবার দিচ্ছে। রাস্তা-ঘাট চিনেন না এমন ড্রাইভার ও হেলপার দিয়ে লক্কর-ঝক্কার বাস দেয়ায় হাজীগণ মিনা-আরাফায় ৬/৭ ঘন্টা করে বাসের ভেতরে গরমের মধ্যে কষ্ট করেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৪/৫ হাজার হাজির জন্য মাত্র ৪০/৪৫ টি বাস দেয়া হয়। তা’ও রাস্তায় অনেক বাস হাজি নিয়ে বিকল হয়ে পড়ে থাকে। শুধু বাংলাদেশী হাজিদের বেলায় এ ধরনের অব্যবস্থা চোখে পড়ে বলেও মাওলানা তাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন। তিনি আগামী সউদ-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তিতে এসব সমস্যা নিরসন কল্পে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানান। হাবের ইসি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: তাজুল ইসলাম মক্কা থেকে জানান, সউদী’র কতিপয় মুয়াল্লেম এবার বাংলাদেশী অনেক হজ এজেন্সিকে ঠিক মতো বাস সরবরাহ করেনি। হাজিদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য চাহিদানুযায়ী বাস না পাওয়ায় এজেন্সি’র মালিকরা নিজের পকেটের অতিরিক্ত রিয়াল ব্যয় করে তাৎক্ষণিক বাস ভাড়া করে হাজীদের মিনা-আরাফায় আনা নেয়া করেছে। তিনি আল্লাহর মেহমানদের সেবা নিশ্চিতকরণে সউদী সরকারকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার উদাত্ত আহবান জানান।


শেয়ার করুন

0 facebook: