ফাইল ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষণা করে ঘোষণার তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এ আবেদনের ওপর আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো: আখতারুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি দাখিলের পর এ তারিখ ধার্য করেন। একই সাথে এ মামলায় আদালতের বিচারকের প্রতি দুই আসামি ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের অনাস্থা বিষয়েও একই তারিখে আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। ধার্য এই তারিখ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন আদালত।
গতকাল আদালতে শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, যুক্তিতর্ক থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। আমরা সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। যুক্তিতর্ক শুনানি না করে আসামিপক্ষ আদালতকে অসহযোগিতা করছে। বিলম্ব করে তারা মামলার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা যুক্তিতর্ক করছে না। আমরা রায়ের তারিখ ধার্য করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করছি। মামলার কার্যক্রম শেষ করে রায়ের তারিখ ধার্য করার আবেদন করছি।
দুদকের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপ বলছে, আমরা আদালতে আসি, আপনি জামিন দেন চলে যাই। আদালতকে কিছু দেই না। মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় তারা বলে বেড়াচ্ছেন ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি। আসলে আমরা ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি না। তিনি (কাজল) মামলার চেয়ে রাজনীতির কথা বেশি বলছেন। পিপির কারণে এই মামলায় কলঙ্ক লেপন হোক তা আমরা চাই না। আপনার বিচার যেন প্রহসনের বিচার না হয়। সেটা যেন পিপির কারণে না হয়। এ বিচার যদি একতরফা হয়, যদি প্রহসনের বিচারের তকমা লেগে যায়, তা কখনো কাম্য নয়। আর পিপি সাহেবের একতরফা আচরণের কারণে বিচার যদি প্রহসন হয়ে যায় উনি এর দায়ভার নেবেন কি না। আমরা আদালতকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আখতারুজ্জামান বলেন, মনিরুল ইসলাম স্থায়ী জামিনে আছেন, তিনি জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। তাই তিনি জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। এ ছাড়া আদালতের প্রতি অনাস্থার বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন, এজন্য মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন। এ পর্যায়ে আদালত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনিরুল ইসলাম খানের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।
এরপর বেগম খালেদা জিয়ার পে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আবদুর রেজাক খান। খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ ১৩টি মামলা করেছে। তিনি অসুস্থ, তারপরও হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিন নিতে হচ্ছে। আবদুর রেজাক খানের বিরুদ্ধে ১০ মামলা, তিনি একজন বয়স্ক লোক, ৮৬ বছর বয়স। আমার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সিনিয়র আইনজীবী রেজাক খান রাজনীতি করেন না, ভদ্র লোক। আমি তার ছাত্র। তিনি বলেছেন সময় দিতে। আমরা একটা মুলতবি চাচ্ছি। আপনি আদেশ দেন, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। তিনি সুস্থ হয়ে আদালতে আসবেন। মামলার কার্যক্রমে অংশ নেবেন। তিনি খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সপ্তাহে একদিন মামলার তারিখ দেয়ার আবেদন জানান। সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, আপনি (বিচারক) আদেশ দিলে খালেদা জিয়া চিকিৎসা করাতে পারবেন, সুস্থ হয়ে কোর্টে আসবেন।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা আপনার কোর্টে মামলা মোকাবেলা করছি। আমাদের একটা যুক্তিসঙ্গত সময় দেন। আমরা মামলা নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা করব। আর মামলা হয়ে শেষ হয়ে এসেছে, এত তাড়াহুড়া করার কি আছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে অবশ্যই আদালতে আসবেন, বিচারে সহায়তা করবেন। আপনি দয়া করে সময় দেন। সময়ে অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আইনে কোথাও যুক্তিতর্ক শুনানি করার বিধান নেই। এরপরও আসামিপকে যুক্তিতর্ক শুনানি করার সুযোগ দিচ্ছেন আদালত। কিন্তু আসামিপ জামিনসহ সব ধরনের সুযোগ পকেটে ভরে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যুক্তিতর্কের শুনানি করছে না। তিনি বলেন, আসামিপরে আইনজীবীরা মোটেও আদালতকে সহযোগিতা করছে না। বাইরের বন্ধুদের পরামর্শ শুনে আদালতের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন না।
তিনি বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য আছে। শোনা ভালো। আমরা বলব আসামি দোষী, আর আসামিপ বলবে খালাস পাবে। এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে, আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও মামলার চার্জ আছে। এখানে কে কি যুক্তি প্রদর্শন করল আর কে কি যুক্তি প্রদর্শন করল না তাতে কিছু যায় আসে না। যুক্তিতর্ক প্রদর্শন থেকে রায়ের দিকে যাওয়া উচিত। আমরা খালেদা জিয়া ও অপর দুই আসামির জামিন বৃদ্ধি না করার আবেদন করছি। একজন আসামি স্থায়ী জামিনে আছেন তার জামিন বাতিল করার আবেদন করছি। একই সাথে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করছি।
সানাউল্লাহ মিয়া তখন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কোর্ট ও প্রসিকিউশনকে এক করে ফেলছেন। সিনিয়র আইনজীবী অসুস্থ বলে আমরা সময় চেয়ে কি অপরাধ করেছি? এ মামলায় খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আবদুর রেজাক খান যুক্তি উপস্থাপন করবেন বলে সময় চাচ্ছি।
উভয়পরে শুনানি শেষে আদালত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে কি না সে বিষয়, আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয় ও মনিরুল ইসলাম খানের স্থায়ী জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন।
গতকাল আদালতে এ মামলার অপর আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে হাজির করা হয়। তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া তার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা মনেচায় যতদিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন, আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বার বার আসতে পারব না। ন্যায়বিচার এখানে হবে না। এখানে আমি ন্যায়বিচার পাবো না।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বিচারক বাসুদেব রায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে এখনো যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়নি।
0 facebook: