29 September 2018

সিরিয়ায় নিয়ে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যে দিন রাশিয়ার কূটনীতিকরা সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটিতে অসামরিক জোন তৈরির ব্যাপারে তুরস্কের সাথে একটি চুক্তিতে উপনীত হন, সেদিনই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে যুদ্ধপরবর্তী সিরিয়ায় ব্যবসায়ের চুক্তিনামা নিয়ে একদল রুশ ব্যবসায়ী নিজেদের বাড়ির পথে রওনা করেন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটি ইদলিবে তাদের পরিণতি যাই হোক না কেন, সিরিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের পা রাখার একটি স্থান তৈরি করা কিংবা সিরিয়ায় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেন নাক গলাতে না পারে এ উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়ার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফল স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এমিল হোকায়েম বলেন, রাশিয়া একটি নতুন ধরনের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা চাইছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থনের কারণে সিরিয়ায় মৃত্যু ও ধ্বংসের ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু দেশটির সেনাসদস্যরা বিদ্রোহীদের দমনে নিজেদের সামর্থ্যরে পাশাপাশি এ-ও প্রমাণ করেছে যে, পশ্চিমা শক্তিগুলোর চেষ্টায় ঘাটতি ছিল। হোকায়েম বলেন, রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল দিয়েছে।

গত বুধবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে ইদলিবকে বড় ধরনের সঙ্ঘাত থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রায় সবাই বলছে, গত সপ্তাহে ইদলিবে বড় ধরনের সঙ্ঘাত না হওয়ার পেছনে কৃতিত্ব রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের করা চুক্তির। সম্মেলনে অনেকেই সিরিয়ার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন যে, ইদলিবের অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও চুক্তিটি বহাল থাকবে। রাশিয়াও বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেছে। এরপরও মস্কো সিরিয়ার সামরিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া গত সোমবার ঘোষণা দেয়, তারা সিরিয়ার কাছে এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রয় করবে। সিরিয়া অবশ্য যুদ্ধ শুরুর আগেই দীর্ঘ দিন ধরে রাশিয়ার অস্ত্রের ক্রেতা। তারা রাশিয়ার একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্য সহযোগীও বটে।

মস্কো সিরিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কটির উন্নয়ন করতে দেশটির রাস্তাঘাট, রেল লাইন, বড় বড় স্থাপনা, যেগুলো গত সাত বছরের যুদ্ধে, যার মধ্যে অনেক রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে, সেগুলো নতুন করে নির্মাণ বা মেরামত করে দিচ্ছে।

রাশিয়ার ৩৮টি কোম্পানির একটি গ্রুপ এ মাসের শুরুতেই দামেস্ক আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল গত এক বছরে সিরিয়ার সাথে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নের চতুর্থ পদক্ষেপ। আগামী মাসের শুরুতে সিরিয়ায় দেশ পুনর্গঠনবিষয়ক একটি সম্মেলনে অংশ নেবে রুশ কোম্পানিগুলো। সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ইরানও এ ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রাশিয়া এক্ষেত্রে অন্য সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে। যেমন রাশিয়া সিরিয়ার ট্রেন নেটওয়ার্ক পুনর্নির্মাণ করতে চয়।

রাশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক ভায়াশেসøাভ মাতুজব বলেন, মস্কো এটি আগের মতো করে তৈরি করে দিতে চায়। সেই সাথে কৌশলগত অর্থনৈতিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি করতে চায়। রাশিয়ার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানায়, রুশ কোম্পানিগুলো সিরিয়া ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন খাদ্য, কৃষি, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চায়। চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভøাদিমি প্যাডালকো বলেন, রাশিয়া দুই দেশের মধ্যে শুধু আগের বাণিজ্যিক সহযোগিতা পুনঃস্থাপনই করতে চায় না, বরং তারা আরো সামনে এগিয়ে যেতে চায়। মাতুজব বলেন, রাশিয়া কেবল ইগোগত কারণেই সিরিয়ায় এ কার্যক্রম চালাতে চাইছে না, বরং এটি তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি দায়িত্বও বটে।

হোকায়েম বলেন, এক্ষেত্রে প্রত্যাশা বা সম্ভাবনা যত কমই থাকুক না কেন, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত সিরিয়ায় চালকের আসনেই রয়েছে। রাশিয়া সিরিয়ায় অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, সিরিয়া যুদ্ধে যাই হোক না কেন, নিজ দেশে পুতিনকে এর জন্য বড় ধরনের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি।

হোকায়েম আরো বলেন, সিরিয়ার ক্ষেত্রে ইরান ও তুরস্কের সাথে রাশিয়ার আস্তানা শান্তিপ্রক্রিয়া জাতিসঙ্ঘ বা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন পদক্ষেপের চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। ফলে জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধিরা এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়েছে।

তবে আগামী কয়েকটি সপ্তাহ সিরিয়া ও রাশিয়ার জন্য খুবই কঠিন হতে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ দূত ডি মিসতুরা বলেন, অক্টোবর মাসটি ইদলিব এবং তাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস।


শেয়ার করুন

0 facebook: