ফাইল ছবি |
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এখনো সময় আছে এক মাসেরও বেশি। বিএনপি কিংবা তার সহযোগী ঐক্য প্রক্রিয়া কিংবা ঐক্যফ্রন্ট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে, তাদের দাবির আলোকে এই ধরনের কিছু করতে হলে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এ সময়ে সেটা সংবিধানসম্মত হবে না। কারণ, এ সময়ে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, তাদের প্রয়োজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নয়, তাদের প্রয়োজন হচ্ছে সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটা হচ্ছে মূল বিষয়। নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হবে কি না, এখানে নিরপেক্ষ সরকারের তো দরকার নেই। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা মাত্র, তারা রুটিনমাফিক কাজ করবে। সরকার ক্ষমতায় থাকবে নামমাত্র।
‘তাদের প্রয়োজন হচ্ছে, ইলেকশনটা ফেয়ার, নিরপেক্ষ হবে কি না, সেটা তো পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনটাই নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন তো নিরপেক্ষই আছে। সরকারের নিরপেক্ষ হওয়ার তো দরকার নেই। কারণ, সরকার তো নির্বাচন পরিচালনা করবে না। নির্বাহী বিষয় নিয়ে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা থাকবে না’ বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, দেশে কি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ সরকারের প্রয়োজন পড়েছে? বাংলাদেশ তো অশান্ত নয়। তবে বিএনপি ও তার সহযোগীরা অশান্তির উস্কানি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। মোট কথা, অক্টোবরেই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে সবাই নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠবে। তখন সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে, আশা করছি।
বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাদের নির্বাচনে নিয়ে আসতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কি আমার বাড়ির মেজবান যে আমি তাদের দাওয়াত দিয়ে আনব? নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তো বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটিকে তারা দয়ার দান ভাবছে কেন?’
বিএনপি না এলে এবারের নির্বাচনও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন যদি বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে এ দেশে আইপিইউ (ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) এবং সিপিএর (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন) বর্ণাঢ্য কনফারেন্স হলো কী করে? বিশ্বের এত এত স্পিকার, এত এত ডেপুটি স্পিকার দেশে এসেছিল, তারা কি কোনো প্রশ্ন তুলেছিল যে, এই দেশের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না কিংবা আমি এখানে কনফারেন্সে অংশ নেব না। এমন কিছু কি ঘটেছিল? এমন কিছু কি শুনেছেন? এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব হবে না।
‘পৃথিবীর মানুষ বর্তমান সরকারের বিস্ময়কর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখছে। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ও সাহসী ভূমিকা পালন করার জন্য। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর উন্নয়নেও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে জাতিসংঘ,’ বলেন ওবায়দুল কাদের।
রাজনীতির মাঠ আবার উত্তপ্ত হচ্ছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাঠ উত্তপ্ত হবে কেন? আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেইনি। আমরা দিয়েছি নিরীহ কর্মসূচি। আমাদের কর্মসূচি হছে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ।’
তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার জন্য নাকি অনুমতি দেই না। এবার তো অনুমতি দিলাম, জনসভা করুক। লাগলে মঞ্চ তৈরি করে দেব, মাইক লাগিয়ে দেব, যত খুশি কথা বলুক। বিএনপির শাসনামলে অনুমতি আমাদেরকেও নিতে হয়েছে। এখন তো অনুমতি দেই দিনে, আমরা অনুমতি পেতাম রাত ১১টার পর।’
‘টকশো দেখলাম। টকশোর বিষয় হচ্ছে ‘অনুমতি’। বিএনপির পক্ষ থেকে যে গেছে সে কিছু জানে না, আমার দলের পক্ষ থেকে যে গেছে সেও কিছু জানে না। যে টকশো চালাচ্ছে সেও কিছু জানে না। অনুমতি একটি সাধারণ জিনিস। সবারই নিতে হয়। সাধারণ মানুষরাও জনসভা করলে অনুমতি নিতে হয়- এটাই নিয়ম,’ বলেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাগরের উত্তাল ঊর্ণিমালা সমুদ্র ছেড়ে রাজপথে এসে মওদুদ আহমদকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এমন ভাবার কোনো সুযোগ নাই। সময় কম, এক মাসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে সবাই নির্বাচনে আসবে, খবর আমাদের কাছেও আছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি না এলে যুক্তফ্রন্ট বা ঐক্য প্রক্রিয়া ইলেকশনে আসবে না, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। এই ঐক্য, এই প্রক্রিয়া, এই যুক্তফ্রন্ট- আমার তো বিশ্বাস, তারা সবাই নির্বাচনে আসবে। যে যেটাই বলুন, আমি কাউকে আক্রমণ করছি না। সে পথটা খোলা আছে। যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া কি ইলেকশনে আসবে না মনে করেন? বিএনপি না এলে তারা আসবে না? সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। খোঁজ-খবর আমাদেরও আছে।’
যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো স্বাগত জানাব, আসুক না। ফ্যাক্টর হবে কি না, সেটা জনগণ ঠিক করবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাবিনামা তো আসবেই। বিরোধী দল যা আদায় করা যায়, সেটা নিয়ে দাবি করবেই। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো অসহিষ্ণুতা নেই। আমরা সরকারের আছি, আমাদের সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। ইলেকশনের ছবি, এখন যে আন্দোলনের ছবি, সেটা থাকবে না। ওই ছবিটা অংশগ্রহণের, উৎসবমুখর পরিবেশের যে দৃশ্যপট, সেটাই দৃশ্যমান হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, একটি আইনে সবকিছু উল্লেখ থাকে না। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে পরিপূর্ণ করা হয় বিধিমালায়। সম্পাদক পরিষদের যে উদ্বেগ সেটি সরকার আমলে নিয়েছে বলেই তথ্যমন্ত্রী আজকে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদের দাবি যৌক্তিক হলে মানতে বাধা কোথায়? বিধিমালা চূড়ান্ত হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সংবাদপত্রকে তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
0 facebook: