18 December 2018

‘আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একান্ত প্রয়োজন’


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একান্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন

শেখ হাসিনা এ সময় আগামী ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা তিনি জানতে চান এবং বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরারও আহ্বান জানান

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় বিএনপিসহ বেশকিছু জোট নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের নীতিভ্রষ্টআদর্শহীনআখ্যা দিয়ে কোন স্বার্থে এরা স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজদের উদ্ধার করতে নেমেছেন, সে প্রশ্নও করেন

তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট হয়েছেতারা সরকার গঠন নাকি করবেসরকারের প্রধান কে হবে, সেটা আজ পর্যন্ত জাতির সামনে দেখাতে পারে নাইএকটা প্রশ্ন রেখে যায়, তাদের সরকারপ্রধান কে হবে? এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী, তিনি হবেন? না ওই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানের হত্যাকারী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনি হবেন? না যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজা দিয়েছি, তাদের কাউকে করবেন? সেটা তো তারা স্পষ্ট করে বলেননি, সে কথাতো দেশবাসী জানেন নাপ্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশবাসীর প্রতি নিজের আস্থার কথা জানিয়ে বলেন, ‘দেশবাসীকেও বেছে নিতে হবে তারা কি ধরনের সরকার চায়? দেশের জনগণের ওপরই আমি এই দায়িত্ব ছেড়ে দিলামআমি একটা কথাই বলব, নৌকা মার্কায় ভোট চাইদেশের সেবা করে, দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাইআমার বিশ্বাস আছে, বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবেদেশের উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে টানা দুই মেয়াদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আরও ৫ বছর সরকারে থাকা একান্ত প্রয়োজনসেজন্য আজকে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় আমি বাঙালি জাতির কাছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইএই কারণে যে, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে’ ‘স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজ, অস্ত্র চোরাকারবারী, সাজাপ্রাপ্ত খুনি আসামি এরা কখনো এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না’, যোগ করেন তিনি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন মানুষ ভাল থাকে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়তারা বলে, এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতাস্বেচ্ছাচারিতাটা কিভাবে হলো, আমার সেটা প্রশ্নস্বেচ্ছাচারিতার কি দেখতে পেল তারা? তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম ঘোষণা করেছে যে, ১০ বছরের স্বেচ্ছাচারিতাকে তারা পরিবর্তন করবেপরিবর্তন কি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লল্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশে আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, নির্বাচনের আগে প্রহসন, আবার দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার একেবারে অন্ধকার যুগে নিয়ে যাওয়াএই পরিবর্তনটা তারা আনতে চান?’ তিনি বলেন, ‘তারা ছিল তো ক্ষমতায়

৪৭ বছর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছেএই ৪৭ বছরের মধ্যে ৩৯ বছরই তো এরা ক্ষমতায় ছিলকি দিয়েছিল মানুষকে? কি পেয়েছে মানুষ? মানুষ কিছু না পেলেও ওই বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছেযাদের কথা শুনেছি, ভাঙা সুটকেস-ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই নেইতারাতো কতো সম্পদের মালিক... সম্পদ শুধু দেশে না বিদেশেওঘুষ-দুর্নীতি করে তাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেযার জন্য আজকে দুর্নীতির মামলায় হয় সাজাপ্রাপ্ত নয় আসামিআর আমরা আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন দিয়েছিল বিশ্বব্যাংকআমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলামবাংলাদেশের মানুষ আমাদের সাথে ছিলসেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করেছিবিশ্বব্যাংক কোনো দুর্নীতি খুঁজে পায়নিকানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, বিশ্বব্যাংকের সকল অভিযোগ ভুয়াশেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথা হেট হোক সেটা কিন্তু করি নাইবরং আজকে বাংলাদেশেল মানুষ যখনই যে বিদেশে যাচ্ছে, তারা একটা সন্মান পাচ্ছে, মর্যাদা পাচ্ছেবাংলাদেশ আজকে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠ হয়েছেঅর্থাৎ সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছিতাহলে স্বেচ্ছাচারিতাটা কোথায়? উনারা নকি পরিবর্তন করে ফেলবেনঠিক আছে, খুব ভাল পরিবর্তন তারা করুক

তিনি বলেন, ‘আজকে যারা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এক হয়েছে, তারা কারা? একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীসেই যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা কিভাবে মনোনয়ন পায়? কিভাবে তারা এমপি হয়? যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় চায়নিতাদের দোসর কারা? যারা তত্ত্বকথা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়আমি আর কারও নাম নিতে চায় নাতাদের নাম নিতে গেলে মনে হয় যেন, এই নামই মুখে আনা উচিত নাআমার তাদের জন্য করুণা হয়কারণ, তারা দিকভ্রষ্ট, তারা ভ্রষ্টা হয়ে গেছে, তাদের আর কোনো নীতি নাই, নীতিভ্রষ্টকাজেই এই নীতিহীন, আদর্শহীন এরা কখনো মানুষকে কিছু দিতে পারে নাপারে নাইভবিষ্যতেও পারবে নাএরা বাংলাদেশের আদর্শেই বিশ্বাস করে না
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছেইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেবাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারবে না৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনএই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে, বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুল করে নাতাদের ভোটের অধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে পারবে নাসে সাহসও পাবে নানৌকা মার্কা জনগণের মার্কানৌকা মার্কায় ভোট চাই

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, দুর্নীতিবাজদের উদ্ধার করতে নেমেছে আমাদের কিছু জ্ঞানী-গুণী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীরাযুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের সাজা হয়েছে, তাদেরই ছেলেরা মনোনয়ন পায় এদের কাছ থেকেসরকারপ্রধান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে যারা যুদ্ধাপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত কেউ কখনো কোনো স্থান করে দেয় নাকি দুর্ভাগ্য আমাদের যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেয়, বড় বড় কথা বলে, আজকে তাদের আদর্শহীনতা, সব ধরনের উচ্চবাচ্য সবকিছু যেন কোথায় হারিয়ে গেছেতারা এখন হাত মিলিয়েছে এদের সঙ্গে, কিসের স্বার্থে, কেন?’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ইসিতাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ

সভা পরিচালান করেন যৌথভাবে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের


শেয়ার করুন

0 facebook: