15 August 2019

কাশ্মীর যেনো আজ এক অদৃশ্য জেলখানা ‘খাঁচাবন্দি’ জীবনযাপন করছেন সেখানকার মুসলমান


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। ভারত এবং পুরো বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে মুসলমানদের কাশ্মীরকে। হিন্দুত্ববাদি অবৈধ দখলদার ভারত কতৃক জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলসহ উপত্যকায় সেনা বাড়ানো এবং রাজনীতিকসহ সাধারণ মানুষকে গণগ্রেফতারে কাশ্মীরি মুসলমান বিক্ষুব্ধ।

ভারতের কয়েকজন রাজনীতিক আর সামাজিককর্মী পাঁচ দিন ধরে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। ভারত অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসে বুধবার দিল্লিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তারা।

সেই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, পাঁচ দিনের সফর শেষে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির নাম দেয়া হয়েছে কাশ্মীরী মুসলিম কেজড' বা খাঁচাবন্দি কাশ্মীরী মুসলমান

ওই রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মীরা রাজধানী শ্রীনগরসহ রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছেন যে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা এবং যেভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তা নিয়ে একটা ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

কিন্তু সেই ক্ষোভ বহিঃপ্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করারও পরিস্থিতি নেই সেখানে। বিক্ষোভ দমাতে একদিকে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে চলছে সংবাদমাধ্যমের ওপর অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ।

অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কাশ্মীর গিয়েছিলেন। তিনি জানান, শ্রীনগরসহ গোটা উপত্যকার মানুষই ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, যেন একটা জেলখানায় তাদের রাখা হয়েছে।

সরকার নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল করলেই মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তাই আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর সাওরার মতো যেখানে কিছুটা প্রতিবাদ হয়েছে, সেখানেই ছররা গুলি চালাচ্ছে ভারতীয় বাহিনী।

হাসপাতালগুলোতে ছররা গুলিতে আহত এ রকম বেশ কয়েকজনকে তারা দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ছররা গুলিতে আহত এক কাশ্মীরি।
কাশ্মীরের প্রায় ৬০০ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক করে রাখা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শহরে বা গ্রামে যেখানেই তারা গেছেনসেখানেই দেখেছেন তরুণ বা যুবক- এমনকি স্কুল ছাত্রদেরও আটক করে রাখা হয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী মাঝরাতেও বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে আটক করছে। একজন যুবককে ছররা গুলি মারা হয়েছে, এ জন্য যে তিনি এক বৃদ্ধকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রাস্তায় যেতে দিতে অনুরোধ করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে।

প্রতিনিধিদলটির আরেক সদস্য অল ইন্ডিয়া গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মইমুনা মোল্লা জানান, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বোচ্চ আর দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতাদের তো আটক করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রায় সব গ্রাম থেকেই অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ সংগঠিত করার দক্ষতা আছে, এমন লোকদেরই টার্গেট করে আটক করা হয়েছে। এ মুহূর্তে কাশ্মীরে কত মানুষ যে জেলে আছে, কেউ জানে না। তা ছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের সংবাদমাধ্যমগুলোকেও সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত সরকার।

প্রতিনিধিদলটি জানায়, কাশ্মীরি সংবাদমাধ্যম তো কোনো কাজই করতে পারছে না। তাদের কাছে কোনো সংবাদ পৌঁছাচ্ছে না। এ ছাড়া তাদের খবর সংগ্রহ করারও কোনো উপায় নেই।

একটা-দুটো খবরের কাগজ হয়তো কোনোভাবে বেরুচ্ছে। কখনও দুইপাতা, চারপাতার কাগজ ছাপছে। তাও সেই কাগজ বিক্রি করার সুযোগ তেমন নেই। তাদের ওপরেও খবরদারি চলছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেশিরভাগ ভারতীয় সাংবাদিকই শ্রীনগরের যে অংশ থেকে কাজ চালাচ্ছেন, সেখানে মাঝে মাঝে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা নয়।

কিন্তু সেটিকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে যে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটি অসত্য। মূলত কাশ্মীরজুড়ে এখন শুধুই দমবন্ধ আতঙ্ক, উত্তেজনা আর হতাশারই ছবি।


শেয়ার করুন

0 facebook: