21 September 2019

২০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় মডেল মসজিদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সোনার ছেলে ছাত্রলীগ


স্টাফ রিপোর্টার।। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসফিকুর রহমান সাকিবের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী মসজিদের ঠিকাদারের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার তারা ওই মসজিদ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিকদের মারপিট ও চেয়ার-টেবিল এবং বিভিন্ন মেশিন ভাংচুর করে। এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রংপুরের নর্দান টেকনো ট্রেডের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চগড়ের জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ করছেন রংপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নর্দান টেকনো ট্রেড। বেশ কয়েকদিন ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মাণ কাজ এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল। তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসফিকুর রহমান সাকিবের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী ওই ঠিকাদারের লোকজনের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঠিকাদার না থাকায় তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি। সেসময় তারা চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঠিকাদার নাজমুল হক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুসাইন মুহম্মদ সাফি মন্ডলসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের উপস্থিতিতে ভিত্তি ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। এ খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাকিব, প্রিন্স, রাজন, হৃদয়সহ ২৫/৩০ জন নেতাকর্মী এসে অস্থায়ী ঘর ও চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে। এসময় তারা ঠিকাদার নাজমুল হকসহ কর্মীদের মারধর করে এবং কাজ বন্ধ করে দেয়। মারপিট করার চিত্র মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় ঠিকাদারের গাড়ির চালকের মোবাইল ফোন এবং এক্সেভেটরের গাড়ির চাবি খুলে নিয়ে যায়। চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত সব কাজ বন্ধ থাকবে বলে হুশিয়ার করে দে

রংপুর টেকনো ট্রেডের পরিচালক ঠিকাদার নাজমুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাকিব ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। আমরা তা দিতে অস্বীকার করায় বার বার আমাদের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। বুধবার কাজ বন্ধ করে দিলে রাতেই আমি রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় আসি। বৃহস্পতিবার সকালে আমরা মডেল মসজিদের ভিত্তির ঢালাইয়ের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। কাজ শুরু হলেই সাকিব তার ২৫/৩০ সহযোগী নিয়ে হাজির হয়। কাজ শুরু করার অনুমতি দিলো কে বলেই ভাঙচুর শুরু করে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে ও আমার লোকজনদেরক মারধর করে। আমরা এ ঘটনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনাসহ আইনী ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটি লিখিত অভিযোগ আমি তেঁতুলিয়া থানায় দিয়ে এসেছি।

একই অভিযোগ করেন ওই প্রকল্পের প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার নিজাম উদ্দিন জানান, তাদের চাঁদা না দেয়ায় এবং ইট, বালু ও পাথর সরবরাহের সুযোগ না দেয়ায় তারা এসে কোন কথা না বলে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় ঠিকাদার ও আমাদের লোকজনদের মারধর করে। এমনকি তারা কাজ শুরু করলে আমাদের সিমেন্টের সাথে বেঁধে ঢালাই করে দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের হুশিয়ারি অমান্য করলে অবস্থা খারাপ হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাকিবের বাবা কাজী আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের কিছু নেতা আমার কাছে আসে যাতে মসজিদ নির্মাণ কাজের ছোট ছোট কাজ যেমন বালু, ইট, পাথর সাপ্লাই কাজের দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়। এজন্যই তারা সেখানে ঘুরাঘুরি করে। এর বাইরে আমি তেমন কিছু জানি না। তারা যে অভিযোগ করছে তা সাজানো।

তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসফিকুর রহমান সাকিব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা কোথাও কোন চাঁদাবাজি করিনি। আমরা চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিতে বিশ্বাস করি না। তবে আমি আমার কর্মীদের এসব থেকে বিরত রাখতে তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। তারা যেসব অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

পঞ্চগড় গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইসাইন মুহম্মদ সাফি মন্ডল জানান, ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। একদল ছেলে সেখানে এসে কাজ বন্ধ করে দেয় এবং ঠিকাদারসহ লোকজনদের মারপিট করে। আমি বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শোনার পর আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে এখনো কেও আমাকে কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন

0 facebook: