আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। গতকাল
ভারতে বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির একটি বেঞ্চ ওই মামলার রায় দিয়েছে। এদিকে,
অযোধ্যা মামলার ওই বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত শীর্ষ আদালতের রায়ে প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থেকে কি ক্রমশ হিন্দু রাষ্ট্রের
পথে হাঁটছে ভারত?
ভারতের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিন্দু রাষ্ট্রের পথে ভারত যাচ্ছে কিনা কেবল সুপ্রিম কোর্টের রায়
দেখেই এমন কথা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ছবি উঠে আসছে তাতে এটা
বলাই চলে যে সংখ্যাগুরুর দাপট ক্রমশ বাড়ছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে।
আলিগড়
মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রশাসনিক বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাফে কিদোয়াই-
বলেছেন, আগে অপছন্দ হলে মুখের উপরে কথা বলা যেত। তা তিনি যে সম্প্রদায়েরই হোন না কেন।
কিন্তু এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সাধারণ তর্ক করতেও ভয় পাচ্ছে।
এই
ভয় থেকেই মুসলিম সমাজও নিজেদের বাঁচাতে পরিচয় সত্ত্বার রাজনীতি (আইডেন্টিটি পলিটিক্স)
করতে শুরু করেছে বলেই মনে করেন তিনি।
শুধুমাত্র
সাধারণ নাগরিক পরিসরেই নয়। সংখ্যালঘুদের ত্রাস
সামরিক ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও বাড়ছে বলে দাবি করলেন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের
দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র। বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাদে জম্মুর ক্যান্টনমেন্ট-এ
বড় হয়েছেন সলমন বশির।
তিনি
জানাচ্ছেন, গুরু নানকের জন্মদিনে আমরাও উৎসব করতাম সমান তালে। তবলা শিখতে যেতাম গুরুদ্বারে।
মন্দিরে যেতাম হালুয়া প্রসাদ খেতে। অন্য ধর্মের সামরিক পরিবারের সন্তানেরাও আসত আমাদের
বাড়িতে ঈদের বিরিয়ানি খেতে। এখন আর এসব হয় না সেখানে।
এদিকে,
এক 'অজানা ভয়'-এর গল্প শোনালেন অযোধ্যা-ফৈজ়াবাদের সংখ্যালঘুরা। গত মাসে ইকবালের একটি
উর্দু দেশাত্মবোধক কবিতা পড়ানোর অপরাধে সেখানকার সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের হেডমাস্টারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বজরং দল। মাদ্রাসার শিক্ষা
সরকারি স্কুলে 'পাচার' করার অভিযোগে স্কুল প্রশাসনকে দিয়ে ওই হেড মাস্টারকে সাময়িক
বরখাস্ত করা হয়।
স্থানীয়রা
জানিয়েছেন, এসব নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। অভিযোগ, সংখ্যাগুরুর দাপট জেলা এবং শহরের সর্বস্তরে।
গতকাল
রায় ঘোষণার সময়ে আদালত চত্বর ঘেরা ছিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সাধু সন্ত মহন্তে। স্বামী
চক্রবাণী মহারাজ বাজিয়েছেন শাঁখ। রায় আসার পর সন্তেরা আদালত চত্বরেই জয়ধ্বনিতে ফেটে
পড়েছেন।
সমাজবিজ্ঞানী
আশিস নন্দী বলছেন, এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে যা ক্ষমতা তার ধারে কাছে
কেউ নেই। সেটা আরএসএস-ও জানে। এটাও ঘটনা যে দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ই মোদির শক্তির
উৎস অর্থাৎ তাঁর ভোট ব্যাঙ্ক। ফলে সমাজের এই অংশের মন জয় করে চলাটাই বিধেয় মোদির কাছে।
এই কার্যকারণ থেকেই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রের অভিমুখে চালনা করার প্রশ্নটা উঠে আসছে।
দিল্লি
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অশোক মজুমদার অবশ্য বলছেন, বিশ্বাস করি না
যে গোটা দেশ হিন্দু রাষ্ট্রের পথে হাঁটছে। নীচের তলায় হিন্দুত্বের আস্ফালন থাকলেও তা
সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছায়নি।
ভারতীয়
রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত, বিষয়টি নিয়ে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার যথেষ্ট সচেতন।
সঙ্ঘ
প্রধান মোহন ভাগবত মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেয়া বার্তা প্রসঙ্গে বলেছেন, পৃথকভাবে
কোনও সম্প্রদায়কে বার্তা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একসঙ্গে দেশ নির্মাণ করতে হবে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ভারত
হিন্দু সমাচার
0 facebook: