হাসান মুহম্মদঃ আজ
রবিবার মুসলিম জাহানের পবিত্রতম দিন ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। বিশ্বনবী হজরত
মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জন্ম ও মৃত্যুর দিন। মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জন্ম ও মৃত্যুর এ দিনটি সারা
বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মর্যাদা ও তাৎপর্যপূর্ণ।
৫৭০
খ্রিস্টাব্দের পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল মাসে আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য
আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশেষ মহানবী হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। উনার আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির বাণীর প্রচারে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
একটা
সময় পুরো আরবজাহান ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদীন। তারা আল্লাহপাককে
ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা।
মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল মানুষ। মূর্তি পূজা করত।
এ
যুগকে বলা হয় ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’। এ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, তাদের আলোর পথ দেখাতে
মহান আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে এ ধরাধামে পাঠান। মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতি অল্প বয়সেই
আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন। প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবি খাদিজার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৪০ বছর
বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআন শরিফে বর্ণিত
আছে- মহানবীকে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না।
এ
কারণে এবং তৎকালীন আরবজাহানের বাস্তবতায় এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি।
পবিত্র
ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও বাণী দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদে
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দিনটি
উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায়
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
জাতীয়
পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপ ও
লাইট পোস্টে টাঙানো হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে।
ইসলামিক
ফাউন্ডেশন (ইফা) আজ জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। দেশের সব বিভাগ, জেলা,
উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোয় আলোচনা
সভা ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ
টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দেশের
সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আজ
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিদেশে
অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় যথাযথভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন
করা হবে। দিনটি উদযাপনে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি
গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচিঃ
ইফার উদ্যোগে শনিবার শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এদিন বাদ মাগরিব বায়তুল
মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ধর্ম সচিব মো.
আনিছুর রহমান সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিশেষ
অতিথি ছিলেন ইফার বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর সিরাজ উদ্দীন আহমেদ ও খন্দকার
গোলাম মাওলা নকশেবন্দী। সভাপতিত্ব করেন গভর্নর মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত
প্রতিদিন এই স্থানে বাদ মাগরিব থেকে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয়
মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা
চলবে। ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মসজিদের উত্তর সাহানে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, মহানবী (সা.)-এর
জীবনীভিত্তিক পোস্টার ও গ্রন্থ প্রদর্শনী হবে।
প্রতিদিন
দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। মসজিদের
পূর্ব সাহানে ১৬ ও ১৭ নভেম্বর বাদ মাগরিব হামদ-না’ত ও কিরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ২০
নভেম্বর বাদ আসর স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আজ
থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
ইফার বায়তুল মোকাররম মিলনায়তনে বাদ আসর অনুষ্ঠেয় ওই সেমিনার রেকর্ড করে বাংলাদেশ বেতার
‘ক’ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন রাত ১০টা ১৫ মিনিটে প্রচার করা হবে।
স্কুল,
কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী এবং অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী
শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
অনুষ্ঠিত হবে।
‘পবিত্র
ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্মরণিকা’ প্রকাশ করেছে ইফা। ইফার জেলা, বিভাগীয় ও ইসলামিক মিশন
কেন্দ্র, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ও উপজেলা/জোন মডেল রিসোর্স সেন্টারে র্যালি, সবীনা
খতম, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল, মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জীবনীর ওপর সেমিনার/আলোচনা সভা এবং স্কুল
ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
আরবের
মরুপ্রান্তরে ১ হাজার ৪৪৯ বছর আগের এই দিনে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ
ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আরব সমাজ যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন
মহানবী হজরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সারা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন সর্বশক্তিমান
মহান আল্লাহ। ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন মহানবী। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির
পথে আসার আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল
ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন তিনি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ ২৩ বছর এই বার্তা প্রচার করেন। ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ধর্ম ও জীবন
Exciting world class learning apps in bd like never before..
ReplyDeletevisit us to the link
https://exampreparation.study