27 November 2019

প্রচন্ড ইসলাম বিদ্বেষের কারনেই ঐতিহাসিক আগ্রার নাম বদল করতে চায় ভারত!


স্টাফ রিপোর্ট।। বদলে যাচ্ছে ইসলামিক স্থাপত্যের শহর আগ্রার নাম। সেই সাথে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে মুসলমানদের সব গৌরব গাথা। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টির উন্নয়ন নয়, হিন্দু মুসলিম বিভক্তিকরণ সৃষ্টি করতেই যেন উঠে পড়ে লেগেছে।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় ইউপি সরকার তাজমহলের জন্য বিখ্যাত আগ্রার নাম পরিবর্তনের চিন্তা ভাবনা করছে। এ লক্ষে আগ্রার আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্মরণাপন্ন হয়ে  নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি ইতিহাস সম্পৃক্ত নতুন নাম খুজেঁ বের করবে। ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর সুনেম আনন্দ এ তথ্য জানিয়ে স্বীকার করে তারা এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ ইতিহাস উল্টিয়ে দেখে নতুন নাম খুজেঁ বের করবে।

আগ্রার ইতিহাসঃ মধ্যযুগে মুসলিম শাসক সিকান্দর লোদি ১৫০৪ খৃষ্টাব্দে কৌশলগত সুবিধার জন্য রাজধানী দিল্লী থেকে আগ্রায় স্থানান্তর করেন। তখন থেকেই আগ্রার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম মোঘল সম্রাট আকবর লোদি শাসককে পরাজিত করে আগ্রা দখর করেন। আগ্রাকে রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মোঘল শাসক আকবর এখানে গড়ে তোলেন আগ্রা ফোর্ট বা দুর্গ। এ দুর্গ হয়ে উঠে মোঘল শক্তি ও বীর্যের প্রতীক।

১৬ শতকের শেষের দিকে মোঘল সম্রাট আকবর ফতেহপুর সিক্রিতে নতুন রাজধানী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেও এ অঞ্চলে পানির তীব্র সঙ্কটের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মোঘল শাসক শাহজাহান প্রিয় স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে   যমুনার তীরে নির্মাণ করেন তাজমহল। ১৬৪৮ সালে শাহজাহান রাজধানী পুনরায় দিল্লীতে স্থানান্তর করলেও অদ্যাবধি তাজমহল আকর্ষণ হারায়নি। প্রতি বছর ১৬ লাখ পর্যটক এ ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতে ভারত সফর করে থাকে।

পর্যটন খাত থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রাজস্ব আহরণ করে থাকে ভারত সরকার। আগ্রা দুই বছর আগে সংবাদ শিরোনাম হয়, যখন ইউপি প্রাদেশিক সরকার ট্যুরিস্ট ডিরেক্টরি থেকে আগ্রার তাজমহলের নাম মুছে দেয়।

নানা সমালোচনার মুখে পুনরায় অবশ্য নামটি প্রতিস্থাপিত করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে এটি ভারতীয় ইতিহাস থেকে ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থানসমূহ ও ইতিহাস মুছে দেয়ার ঘৃণ্য শড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইতিহাস বেত্তা  প্রফেসর আদিত্য মুখার্জি বলেন, দারিদ্রতা, শিক্ষা সুযোগের অভাব ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার মতো ইস্যু থাকলেও সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ না করে হিন্দু মুসলমান বিভক্তিকরণের কাজ কেন করা হচ্ছে এটাইতো চিন্তার বিষয়। ভারত যে মতাদর্শ নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ সিদ্ধান্তগুলো তার সাথে যায় না।

ক্ষমতায় আসার পর নানা জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। মুঘলসরাই রেল স্টেশনের নাম হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন। এলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। ফৈজাবাদ জেলার নাম অযোধ্যা। এবার পালা আগ্রার। কিন্তু কেন হঠাত্ এই প্রাচীন শহরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব? যোগী সরকারেরই একাংশ বলেছে, এলাকার অনেকের বিশ্বাস, অতীতে এই শহরের নাম ছিল অগ্রবন। যোগী সরকার চায়, সেই নামেই এই শহরকে ফের ডাকা হোক। এ কারণেই ইতিহাসবিদদের শরণাপন্ন হয়েছে তারা। তারা জানতে চাইছে, কবে, কোন অবস্থায় অগ্রবনের নাম আগ্রা হয়েছিল।

যোগী সরকার অগ্রবননামটির পক্ষে হলেও আগ্রার বহু বাসিন্দা অবশ্য মনে করেন আগ্রার প্রাচীন নাম ছিল আকবরবাদ।আকবরের আমলে এই শহরটি এই নামে পরিচিত ছিল বলে মনে করেন তারা। তবে অগ্রবন হোক বা আকবরবাদ, আগ্রার ট্যুরিস্ট গাইডরা নাম পরিবর্তনের বিষয়টিতে আদৌ খুশি নন। তারা বলেছেন, গোটা পৃথিবীই তাজমহলের কারণে এই শহরকে আগ্রানামেই চেনে। রাতারাতি নাম বদলে ব্যবসায়ে ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।


শেয়ার করুন

0 facebook: