চট্টগ্রামে
মেজবান খেতে গিয়ে হিন্দুদের মৃত্যুতে আমার পক্ষ থেকে কোন দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি, বরং হিন্দুদের
লোভী মানসিকতা তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে বিগত লিখায়। এ নিয়ে অনেকেই আমার লিখার বিরোধিতায়
লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করাটাই বরং
অস্বাভাবিক, কারণ-
১) সম্প্রতি
রাজস্থানে আফরাজুল নামক এক মুসলিম ঠিকাদারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শম্ভুলাল রেগড় নামক
এক উগ্রহিন্দু। এই হত্যাকাণ্ডের পর শম্ভুলালের সমর্থনে বিরাট মিছিল বের হয়েছে, তার স্ত্রীর
ব্যাঙ্ক একাউন্টে লাখ লাখ টাকা জমা হয়েছে তাকে বাঁচাতে।
হিন্দুরা
মুসলমান হত্যা করলেই খুশিতে বাকবাকুম হয়ে উঠে। দলিত হলেও শম্ভুলালের জন্য মিছিল বের
করে, খ্রিস্টান
হলেও ট্রাম্পের ছবি নিয়ে পূজা করে। সেক্ষেত্রে কিভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব, এই হিন্দুদের
মৃত্যুতে সহানুভূতি প্রকাশ করা?
তাদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
অনেকে
আমাকে বলেছে, ভাই আপনি তো ছাম্প্রদায়িক! ইসলাম আমাদের অছাম্প্রদায়িক হতে বলে, হিন্দুরা
খাবার খেতে গিয়ে মরেছে বলে তা নিয়ে স্যাটায়ার করতে হবে?
ক্ষনিকের
জন্য হলেও একটু উল্টোপাল্টা চিন্তা করুনতো। যদি এরকম ঘটতো যে, হিন্দুরা
কোন গণ খাবারের আয়োজন করেছে আর সেখানে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে মুসলমান নামধারী কেউ মারা গিয়েছে, তাহলে
কি হিন্দুরা টিটকারী দেয়ার সুযোগ ছেড়ে দিতো? মিনিটে মিনিটে স্ট্যাটাস দেয়া হতো যে, মুসলমানরা
হিন্দুর খাবার খেতে গিয়ে মরেছে। হিন্দুরা না খাওয়ালে মুসলমানদের খাবার জুটবে না।
সবচেয়ে
বড় কথা, ঐ
কমিউনিটি সেন্টারটি ছিল ‘শুধুমাত্র
অমুসলিমদের জন্য বরাদ্দ’।
সেই কমিউনিটি সেন্টারে যেসব হিন্দু-বৌদ্ধরা গিয়েছে, তারা মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার মানসিকতা
রেখেই কিন্তু গিয়েছে। “মুসলমানের
রান্না আমি খাবো না, মুসলমান
বেড়ে দিলে খাবার অপবিত্র হয়ে যাবে”
এরকম চিন্তা থেকেই হিন্দুসর্বস্ব আয়োজন করা এবং সেখানেই এই পদদলিত
হওয়ার ঘটনা।
চট্টগ্রামের
হিন্দুদের মানসিকতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। আমার আব্বা চট্টগ্রামের হিন্দুদের এক
বিয়েতে খেতে গিয়েছিল, ফিরে
এসে আমাদের বলল যে বিয়েতে আগত অতিথিরা কানাকানি করছিল এই বলে যে, “বাবুর্চি
মুসলমান। ছিঃছিঃ, মুসলমানের
খাবার কিভাবে খাই!
চট্টগ্রামভিত্তিক
‘সনাতন’ গ্রুপের
প্রচারণা চালাচ্ছে যে, “আপনারা
কেউ কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন না। কারণ কমিউনিটি সেন্টারগুলো মুসলমান
মালিকানাধীন, ওখানে
বিয়ে করলে টাকা মুসলমানদের পকেটে যাবে। আপনারা সব চিপাগলি মার্কা মন্দিরে বিয়ে করুন।”
তো এই
বিভেদাত্মক মেন্টালিটির চর্চা করতে গিয়ে যারা পায়ের তলায় চাপা পড়ে মরল, তাদের
জন্য মুসলমানদের দুঃখ প্রকাশ করার অবকাশটা কোথায়? এর পরও বাঙালি মুসলমান হিন্দুদের জন্য সহানুভূতি
দেখাতে যায়। একে মানসিক রোগ ছাড়া আর কী বলা যায়?
মূলত
এসব কারণেই মুসলমানদের মধ্যে কোন লেখক-কবি-সাহিত্যিক উঠে আসতে পারে না। লেখক-সাহিত্যিকদের
কদর করতে পারে একমাত্র সাম্প্রদায়িক জাতিসমূহ, কারণ বিরোধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ভয়েস হিসেবে
তাদের লেখক-কবিদের চাহিদা রয়েছে। যখন বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল, তখন তাদের
মধ্যে থেকে ফররুখ আহমদ,
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, গোলাম মোস্তফার মতো সাহিত্যিক বের হয়ে এসেছিল।
বিপরীতে বর্তমানে যেহেতু মুসলমানরা অছাম্প্রদায়িক হয়ে গিয়েছে, সেহেতু
তাদের মধ্যে থেকে খসলিমা লেসবিয়ানের মতো কিছুসংখ্যক নাস্তিক ছাড়া আর কিছু জন্ম নেয়
না।
গোলাম মোরশেদঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইসলামিক ও রাজনৈতিক
বিশ্লেষক।
0 facebook: