03 January 2018

শীতার্ত মানুষকে সহায়তার নামে করা বড় বড় কনসার্টের আয়োজনের মূল হেতু কি?

রণবীর ভট্টাচার্যঃ বাংলাদেশে ইদানিং দেখা যাচ্ছে শীতার্ত মানুষকে সহায়তার নামে বেশ বড় বড় কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে। বিশেষ করে কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলোতে। কনসার্টগুলোর স্লোগান হলো, কনসার্টের টিকিটের টাকা দিয়ে গরিব-অসহায় শীতার্ত মানুষগুলোর মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করা।

এখন আমি একটা জিনিস চিন্তা করলাম, আসলেই কি এই কনসার্টের সম্পূর্ণ টাকাগুলো গরিব-অসহায় শীতার্ত মানুষগুলোর মাঝে বিতরন হবে নাকি গরিব-অসহায়দের নাম বিক্রি করে সাধারন মানুষগুলোর ইমোশন কাজে লাগিয়ে বিরাট টাকার বিজনেস করছে। সাধারন মানুষ তো চিন্তা করবে এক ডিলে দুই পাখি মারতে পারব। কনসার্ট ও দেখা হল সাথে গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো গেল।

যারা এক ডিলে দুই পাখি মারার চিন্তা করছেন অর্থাৎ গরিবদের সাহায্যে করবেন সাথে কনসার্ট উপভোগ করবেন তাদের ধারনা ভুল। কারন দাদা আপনার টাকা গরিবদের কাছে যাচ্ছে না।

আর যারা শুধু কনসার্ট উপভোগ করতে যাচ্ছেন তারা ঠিক আছে। দাদারা একটা জিনিস খেয়াল করুন, একটা কলেজ অথবা ভার্সিটিতে কনসার্ট করতে অনেক টাকা খরচ রয়েছে।
যেমন ধরুন, যেখানে কনসার্ট করবেন সেখানে ভাড়া নিতে হবে। শিক্ষকদের ইনভাইট করতে হবে, তাদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা আয়োজক আছে তাদের জন্যও খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থা রাখতে হবে। স্টেইজ সাজাতে হবে, লাইটিং করতে হবে, কনসার্ট উপভোগ করার জন্য দর্শকদের বসার চেয়ার এর ব্যবস্থা করতে হবে, সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা করতে হবে, তাছাড়া খুটিনাটি অনেক খরচ তো রয়েছেই।

এছাড়া কনসার্ট তো এমনি এমনিই হবে না শিল্পী এনে কনসার্ট করাতে হবে। এইধরনের একটি কনসার্টে নিম্নমানের কোন শিল্পী থাকে না এবং কমপক্ষে পাচ জনের বেশি শিল্পী উপস্থিত থাকে।

আমার বাস্তব ধারণা থেকে বলছি, এই ধরনের কনসার্টে একটা শিল্পীদের কমপক্ষে ২০হাজার টাকা করে দিতে হয়। ধরে নিলাম এই ধরনের আয়োজনের জন্য শিল্পীরা ৫হাজার টাকা কম নিল। তাহলে পাচ জনের খরচ আসছে ৭৫হাজার টাকা। আর এই টিকিটের টাকা যদি জনপ্রতি ১০০ হয় তাহলে ঐ টাকা উঠাতে টিকিট বিক্রি করতে হবে প্রায় ৭৫০জনের কাছে।

এখন কথা হল একটা কনসার্টে কি এত লোক হয়!! হে হয়, কারন নিজের কেম্পাসের স্টুডেন্টরাই থাকে বেশির ভাগ উপস্থিত থাকে। তাছাড়া উপরের যে খরচের কথা বললাম তার খরচ বাদই দিলাম। তাহলে তারা অসহায়দের কি দিয়ে সাহায্যে করে, তাদের নিজেদের খরচই তো কভার করতে পারছে না!!

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে ভট্টাচার্য তাতে তোমার সমস্যা কি??

আমার কনসার্ট নিয়ে কোন সমস্যা নেই। হ্যা তবে আমার সমস্যাও আছে। তা হচ্ছে কনসার্টের সাথে শীতার্ত অসহায়-গরিব মানুষদের নাম ব্যবহার করা। কারন তারা টিকিটের টাকা সম্পূর্ন পাচ্ছে না। কারন তাদের নামটা শুধু শো-অফ করা হচ্ছে আর ফায়দা তুলছে আয়োজকরা।

আমার এইসমস্ত আয়োজকদের কাছে প্রশ্ন, যদি এতই অসহায় মানুষদের পাশে দাড়াতে মনে চয় তাহলে ঐসকল কনসার্টের খরচ দিয়েই তো সরাসরি তাদের পাশে দাড়ানো যায়, তাদের সাহায্যে করা যায়। এতে সময়, পরিশ্রম, ঝামেলা সবই বাঁচল। নাকি অন্যকোন উদ্দেশ্য রয়েছে তাতে??

আর যারা কনসার্টের মাধ্যমে অসহায়দের পাশে দাড়াতে চান তাদের উদ্দেশ্য বলছি, যদি এতই সাহায্যে করতে মনে চয়, তাহলে ঐ ১০০ অথবা ১৫০ টিকিটের টাকা দিয়ে আশে-পাশের গরিব অসহায়কে কম্বল কিনে দিয়ে দেন। এতে নিজে যতটুকু তৃপ্তি পাবেন সাথে গরিবে সরাসরি দোয়াও পাবেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: