কলামিস্ট
অর্বাচীনঃ আমার বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব তিন’শ গজেরও
কম। প্রায়শই হেটে বাসা থেকে বাসস্ট্যান্ডে আসা যাওয়া করি। এতে আমার দুটি লাভ হয়। এক,
কিছু ক্যালোরি বার্ন হওয়া। ডাক্তার আমাকে প্রতি দিন কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাটতে
পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে হাটা হয়না। এই সুযোগে একটু হাটা হয়। আর দুই,
হলো রিক্সা ভাড়া দশ টাকা বেঁচে যাওয়া। আজকাল রিক্সায় উঠলেই দশ টাকা দিতে হয়। দূরত্ব
যাই হউক।
একদিন
দেহে কেমন যেন আলসেমী লাগছিল। তাই বাস থেকে নেমে একটা রিক্সায় উঠে বসি। রিক্সা দুই
মিনিটের মধ্যেই বাসার সামনে চলে এল। আমি পকেট থেকে দশ টাকা রিক্সা ওয়ালাকে দিতেই সে
বলে উঠে দশ টাকা নয়। বিশ টাকা দিবেন। আমিতো অবাক! আমি সাধারনত রিক্সাচালক, কুলি, মজুর
তাদের প্রতি একটু সহানুভুতিশীল। কিন্তু আজ আর সহানুভূতিশীল হতে পারলাম না। বললাম, কেন? ভাড়াতো
দশ টাকাই? রিক্সাওয়ালা
বলল, না, আপনি
বিশ টাকাই দেবেন। আমি বলি,
তিন শ গজ রাস্তার জন্য ভাড়াতো পাঁচ টাকার বেশী হয় না। সেখানে দশ
টাকা দিলাম। তারপরতো তোমার কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। রিক্সাওয়ালা কোন যুক্তি মানতে
নারাজ। তার এক কথা। তাকে বিশ টাকাই দিতে হবে। আমাদের এই কথা কাটাকাটি শুনে আমার পরিচিত
পাশের দোকানদার বলল, স্যার, তার সাথে
কথা বললে আপনার মান থাকবে না। বিশ টাকা দিয়া আপদ বিদায় করেন। মনে করেন দশ টাকা ছদকা
দিচ্ছেন। দোকানদারের কথা শুনে বিশ টাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত বাসায় ডুকে পড়লাম। এ
থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন দরদাম না করে আর কখনোই রিক্সায় চড়ি না।
সেদিন
সিটি কলেজ থেকে নিউ মার্কেটে যাওয়ার জন্য রিক্সা খুজতেছি। এক রিক্সাচালককে বললাম, নিউ মার্কেটে
ভাড়া কত? সে
বলে পঞ্চাশ টাকা। সিটি কলেজ থেকে নিউ মার্কেটের ভাড়া বড়জোর বিশ থেকে পঁচিশ টাকা হতে
পারে। কিছুতেই পঞ্চাশ টাকা হতে পারে না। বললাম, এখান থেকে নিউমার্কেটের ভাড়া এত বেশী চাঁচ্ছ
কেন? এখান
থেকে নিউ মার্কেট তো দেখাই যায়? রিক্সা ওয়ালা বিজ্ঞের হাসি
হেসে বলে, এখান
থেকে চানও তো দেখা যায়, যান না?। সেখানে চলে যান। দেখি পারেন কিনা। রিক্সাওয়ালার কথা
শুনে রাগ করে সেদিন হেটে হেটেই নিউ মার্কেট চলে যাই।
ঢাকা
সেনানিবাসের ভিতরে কয়েকটি রিক্সা স্ট্যান্ড আছে। সেখানে বিভিন্ন দূরত্বের ভাড়ার একটা
চার্ট দেওয়া আছে। জিয়া কলোনী এমনই একটা স্থান। সেখানে জিয়া কলোনী থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত
চল্লিশ টাকা লেখা আছে। সেদিন বাস থেকে নেমে জিয়া কলোনীতে এসে রিক্সাওয়ালাকে বললাম, পোস্ট
অফিসে ভাড়া কত? সে
পঞ্চাশ টাকা চায়। আমি বলি,
চার্টে তো চল্লিশ টাকা লিখা আছে। তুমি বেশী চাও কেন? একথার
উত্তরে বলে, চার্টে
যদি লেখা থাকে তো চার্টে কইরাই যান। আমার রিক্সায় যাইবার চান কেন?
আজকাল
রিক্সাওয়ালারা আর সহানুভূতির পাত্র নয়। তারা রীতিমত সংগ বদ্ধ দল। কোন কিছু নিয়ে কথা
কাটা কাটি হলেই মুহূর্তের মাঝে একজোট হয়ে আপনার উপর চড়াও হয়ে যাবে। ন্যায় অন্যায় দেখবে
না। যদিও নিজেদের মাঝে সারাক্ষন বিবাদ লেগেই থাকে। কাকদের মাঝেও এই গুনটা দেখা যায়।
বানরের মাঝেও একই গুন দেখতে পাওয়া যায়। মানব সমাজের শাসকগোষ্ঠীর মাঝেও এই গুন দেখতে
পাওয়া যায়। তাই বলে আবার ভেবে বসবেন না যে শাসকগোষ্ঠী রিক্সাওয়ালাদের বংশধর বা কাকের
বংশধর। ডারউইনের মতে তারা বানরের বংশধর হলে হতেও পারে। তবে এই গুনটা শুধু মুসলমানদের
মাঝে পাওয়া যায় না। অথচ পৃথিবীর সিংহভাগ জনগন না হলেই অনেক জনগনই মুসলমান। মানব জাতীর
কল্যানের জন্য মুসলমানদের মাঝে এই গুনটা বড় প্রয়োজন ছিল।
খবর বিভাগঃ
মতামত
লাইফস্টাইল
0 facebook: