17 January 2018

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুঁজিবাদী দেশগুলো কী বলেছিল, রাশিয়ার ঋণ শোধ করতে হবে?

গোলাম মুরশেদঃ ইতিহাস সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা এটি সকলেই জানেন যে হিটলারের পতন হয়েছিল রাশিয়ার যুদ্ধে জড়ানোর কারণে। রাশিয়ায় ব্যাপক গণহত্যা চালানোর পর যখন তীব্র শীত এসে উপস্থিত হয়, তখন সেখানে অবস্থানরত জার্মান বাহিনী চরম বেকায়দায় পড়ে। এই সুযোগে সোভিয়েত সৈন্যরা শীতে কাবু জার্মানদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাদের পরাস্ত করে। নিজ দেশের জার্মানদের পরাস্ত করে সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী ট্যাঙ্ক ও অস্ত্রশস্ত্রসহ এগিয়ে যায় জার্মানির দিকে।

তখন হিটলারের সামনে দুটি ফ্রন্ট এসে উপস্থিত হয়, ইস্টার্ন ফ্রন্ট এবং ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। পশ্চিমে ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স, আজকের বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো। এই পশ্চিম ফ্রন্ট কিছুতেই হিটলারকে পরাস্ত করতে পারত না, যদি না পূর্বদিক দিয়ে রাশিয়া এসে আক্রমণ না করত। রাশিয়ার সেনারাই জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পতন ঘটিয়েছিল, আমেরিকা-ব্রিটেনদের সেনারা কিন্তু বার্লিনের পতন ঘটায়নি।

আমাদের দেশে অনেকেই বলে থাকে যে, ভারতের প্রতি নাকি আজীবনকৃতজ্ঞ থাকতে হবে একাত্তরের যুদ্ধের জন্য। সেক্ষেত্রে বলতে হয়, কমিউনিস্টরা না এগিয়ে আসলে পুঁজিবাদী সব দেশগুলো যে হিটলারের পেটে যেত, এতে কোন সন্দেহ নেই। হয়তো আমেরিকাকে পর্যন্ত তার স্বাধীনতা হারাতে হতো। একাত্তরের যুদ্ধে ভারতের বলা চলে তেমন কোন ক্ষতিই হয়নি, রাশিয়ার সাথে তুলনা করলে তো নয়ই। যুদ্ধে ভারতকে তার কোন সিভিলিয়ান হারাতে হয়নি, বিপরীতে শীত আসার আগে রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছিল জার্মান সেনাবাহিনী। ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিল ৩ই ডিসেম্বর, বিজয়ের মাত্র ১১ দিন আগে। বিপরীতে রাশিয়া জার্মানির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

এতোকিছুর পরও পুঁজিবাদীরা কমিউনিস্টদের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে, কৃতজ্ঞতা পোষণ তো দূরে বন্ধু বলেও স্বীকার করেনি। বিপরীতে ভারতীয় সেনাদের মাত্র ১১ দিন অবস্থানের উছিলায় নাকি আমাদেরকে ভারতের কাছে মাথা বেচে দিতে হবে! এমনকি কাশ্মীরে ভারতীয়দের অন্যায় আগ্রাসনকেও সমর্থন দিতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এরকম মাথা বেঁচে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না, যুদ্ধের পর পরই তিনি পাকিস্তানে গিয়েছেন ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য। 

কারণ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি অন্য জাতির সাহায্য নিতে পারে, কিন্তু ঋণ শোধকরার নামে নিজের আদর্শ ত্যাগ করেনা। বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই বলেছিল যে, ‘ভারতের ঋণশোধ করার জন্য ওআইসিতে যোগদান করা যাবে না, পাকিস্তানে যাওয়া যাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা শোনেননি। কারণ পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হতে পারে, সেই যুদ্ধে ভারত সাহায্য করতেও পারে, কিন্তু আদর্শগতভাবে আমরা অবশ্যই ভারতের বিরোধী ও পাকিস্তানের বন্ধু। কারণ আমরা হলাম মুসলমান। এই কথা যারা মানতে চায় না, তাদের মুখ বন্ধ করার উত্তম উদাহরণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরোক্ত ইতিহাসটি।


শেয়ার করুন

0 facebook: