আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
সংস্থা (এইচআরডব্লিউ) ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ অভিযোগ করেছে যে, ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর
বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে । ২০১৭ সালে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত
হামলার নির্ভরযোগ্য তদন্ত কিংবা সেসব বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংস্থাটি গত (বৃহস্পতিবার)
২০১৭ সালের বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওই তথ্য জানায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
অভিযোগ, ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র কিছু নেতা হিন্দু আধিপত্য ও উগ্র জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের
মানুষজন গরুর গোশতের জন্য গরু কেনাবেচা বা তাদের হত্যা করে এমন গুজবের জবাবে ক্ষমতাসীন
বিজেপি’র সঙ্গে যুক্ত আছে দাবি করা কিছু মৌলবাদী হিন্দুগোষ্ঠী মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অনেক হামলা করেছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে পুলিশ গোহত্যা
নিরোধক আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছে। ২০১৭ সালে এ ধরণের কমপক্ষে
৩৮টি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর
হামলা বন্ধে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ প্রসঙ্গে
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আজ (শনিবার) পশ্চিমবঙ্গের ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ও
কোলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক রেডিও তেহরানকে
বলেন, ‘মোদি সরকার ব্যর্থ নয়, তারা আসলে চেষ্টাই করে নি। চেষ্টা করলে তবেই তো ব্যর্থতার প্রশ্ন ওঠে। তারা হল ষড়যন্ত্রকারী। আমাদের ভারতীয়ত্বকে ধ্বংসের, পরমত সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যকে
ধ্বংসের, দেশের যে বৈশিষ্ট্য- শক-হুন-পাঠান একদেহে লীন হল, সকলকে নিয়ে চলার যে নীতি
তাকে তারা ধ্বংস করতে চায়। সেজন্য তারা বাকস্বাধীনতাকে হরণ করছে, ধর্মীয় স্বাধীনতাকে হরণ করছে। সেজন্য তারা গরুর নাম করে, ভাষার নাম করে মানুষকে
হত্যা করছে।’
‘দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ভারতে কর্মকর্তারা নিজেরা প্রমাণ করেছেন যে তারা
ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিপদের মুখে পড়া অন্যগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে একনাগাড়ে হওয়া
আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা করতে অনিচ্ছুক। ভবিষ্যতে এ ধরণের হামলা বন্ধ করতে জোরালো প্রয়াস ও সহিংসতায় দায়ী
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
রিপোর্টে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাহরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে ভারতে ইন্টারনেট
সেবা বন্ধ করার প্রয়াসের বিষয়টিও উত্থাপিত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারগুলো সামাজিক
উত্তেজনা বন্ধ করার নামে সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার আশ্রয় নিয়েছে যাতে
আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা যায়। বিগত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৬০ বার ইন্টারনেট পরিসেবা ব্লক করা হয়েছে
যারমধ্যে ২৭ টি ঘটনা জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট গোপনীয়তার
অধিকারকে মৌলিক সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের সম্মান দিয়েছে। আদালত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন রক্ষা ও ক্ষমতার
উদ্ধত আচরণের বিরুদ্ধে গ্যারান্টির ওপরে জোর দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারি নীতি বা তার কাজকর্মের
সমালোচনাকারী সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের
মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: