ইসলামিক ডেস্কঃ পবিত্র জুম’আর দিন মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। পবিত্র দ্বীন ইসলামের পবিত্র এই দিনটি যে কি পরিমান বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিয়ে আছেন তা আমাদের অনেকেরই অজানা!
জুমু’আর দিন সম্পর্কে কুরআন শরীফে যা আছেঃ মহান আল্লাহ্ পাক
রাব্বুল আলামিন তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফ উনার মধ্যে ইরশাদ মোবারক করেন “(মুমিনগণ, পবিত্র জুম’আর দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণের পানে ত্বরা করো
এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি
তোমরা বুঝো। অতঃপর পবিত্র নামায সমাপ্ত হলে
তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ তালাশ করো ও মহান
আল্লাহ পাক উনাকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও)”। (সূরাহ পবিত্র জু’মআঃ আয়াত ৯-১০)
জুমু’আর দিন সম্পর্কে হাদিস শরীফে যা আছেঃ হযরত আবু লুবাবা ইবনে
আবদুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমু’আর দিন সকল দিনের সরদার। মহান আল্লাহ পাকের নিকট সকল দিনের চেয়ে মর্যাদাবান। কোরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও বেশী
মর্যাদাবান এই দিন। সুবহানাল্লাহ!!!
আবু হুরাইরা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমরা
শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া
হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে
তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখো এই (জুম’আর) দিনটি মহান আল্লাহ পাক আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর
খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
মুসলমান হিসেবে
আপনার উপর মসজিদের হক্ব হচ্ছে, জুম’আর দিনে আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া, কেউ যদি একটু
আগে ভাগে মসজিদে যায় তবে এর জন্য অনেক ফজিলত রয়েছে তার জন্য। হাদিস শরীফে আছে, জুম’আর দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী
করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়,
সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল,
তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি
ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে
ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি
ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে
মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামরা
লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।” (বুখারী শরীফ ৮৮১, ইফাঃ ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
আর যে ব্যাক্তি
আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার
প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে
তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব লিখা হয়।
আউস বিন আউস আস
সাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “জুম’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে,
ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে
গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ
করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে
না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে
বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)
আপনারা খেয়াল
করলে দেখবেন আমরা যখন মসজিদে যাই তখন সেখানে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই, যা রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়ঃ
রাসুলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়।
(১) এক ধরনের
লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না।
(২) দ্বিতীয়
আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ
যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না।
(৩) তৃতীয়
প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে
খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও
তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা মহান আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদ শরীফ ১১১৩)
যে সকল মসলমান
জুম’আর নামাজ অত্যন্ত আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে আদায় করে,
সেই সকল আদায়কারীদের জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময় গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুম’আ থেকে পরবর্তী জুম’আ, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে
যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে
নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিম শরীফ ২৩৩)
জুমু’আর দিনে কিছু পালনীয় সুন্নত নিচে দেয়া হলোঃ
১, ফজরের আগে গোসল করা।
২, ফজরের ফরজ নামাজ়ে সূরা সাজদা [সিজদা] ও সূরা দাহর/ইনসান
তিলাওয়াত করা।
৩, উত্তম পোষাক পরিধান করা।
৪, সুগন্ধি লাগানো।
৫, প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়া।
৬, সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা।
৭, মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকা’আত সুন্নত নামাজ আদায় করা।
৮, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা।
৯, মনযোগ দিয়ে খুৎবাহ শোনা। খুৎবাহ চলাকালীন সময়ে কোন ধরনের কোন কথা না বলা; এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখলে তাকে কথা বলতে বারণ করাও কথা
বলার শামিল।
১০, দুই খুৎবাহর মাঝের সময়ে দু’আ করা।
১১, অন্য সময়ে দু’আ করা। কারণ এদিন দু’আ কবুল হয়।
১৩, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সারাদিন
বেশী বেশী দরূদ পাঠানো।
জুমু’আর দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যঃ
১, এই দিনে আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২, এই দিনে আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে দুনিয়াতে নামিয়ে
দিয়েছেন।
৩, এই দিনে আদম (আলাইহিস সালাম) মৃত্যুবরণ করেছেন।
৪, এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়ে হারাম ছাড়া যে কোন জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা প্রদান করেন।
৫, এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। তাই আসমান, যমীন ও আল্লাহর সকল নৈকট্যশীল
ফেরেশতা জুমু’আর দিনকে ভয় করে।
(ইবনে মাজাহ্ শরীফ,
মুসনাদে আহমদ শরীফ)
মহান আল্লাহ
পাক আমাদের সকলকে জুম’আর দিনকে যথাযত ভাবে পালন ও
আমাল করার তওফিক দান করুন। আমীন।
খবর বিভাগঃ
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: