19 February 2018

কোন পথে সমাজ্? যেভাবে গোপনাঙ্গ প্রদর্শনের বিকৃত প্রতিযোগিতা চলছে! চারপাশে


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ শয়তানের পক্ষ থেকে বর্তমানে মানব জাতির সর্বনাশের জন্য অন্যতম মারাত্মক অস্ত্র যৌনসন্ত্রাস আর এই কাজটিই করে যাচ্ছে ইবলিশ যার কারনে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সে। এই যৌনসন্ত্রাস শিল্প বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি মুনাফা আসা ব্যবসা!

অপসংস্কৃতির প্রভাবে সমাজে আজকাল কেবল সৌন্দর্যের প্রদর্শনেচ্ছা নয়, অনেক ক্ষেত্রে রীতিমতো গোপনাঙ্গ প্রদর্শনেচ্ছার মত চরম বিকৃতির প্রতিযোগিতা চলছেপোশাক-আশাকগুলোও সেভাবেই করা হচ্ছে

আর এক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়েমিডিয়া নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়কে লিখছে সাহসী অভিনয়! কাদের হাতে কোন পথে সভ্যতা?

বিশ্বব্যাপী অস্ত্রের আঘাতে হয় হয়তো শত শত মানুষ নিহত আর হাজার হাজার আহত হচ্ছেকিন্তু আধুনিকতার লেবাসে নগ্নতা কিবা বিকৃতির ছোবলে প্রতিদিন অন্ধকারের পথে হারিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ

বিশেষ করে প্রযুক্তির অপব্যবহার, নকলের মহোৎসব, খেলাধুলার পরিবর্তে মাদকের সয়লাব, বেকারত্ব এবং সর্বোপরি নানা হতাশার কারনে তারুণ্যের সম্ভাবনা আজ ধ্বংসের সর্বনাশা পথে!

পর্নোগ্রাফি যেভাবে শিশুদের ভবিষ্যত যৌন জীবন ধ্বংস করছে লাইফ।

অ্যালিসনের এক চিকিৎসক বন্ধু যখন তাকে বললেন, তার ১৩ বছর বয়সী ছেলেটি নিশ্চয়ই অনলাইনে পর্ন দেখছে তখন তার খুবই রাগ হয়অ্যালিসন বলেন, “এতে আমি মারাত্মকভাবে আহত হইকারণ আমি ভেবেছিলাম, সে কেন ওটা করবে? এটি একটি পথভ্রষ্ট আচরণআর সে তো পথভ্রষ্ট নয়
  
অ্যালিসন এখন জানেন যে, যৌন চিত্রাবলী দেখতে চাওয়াটা ছেলেদের একটা স্বাভাবিক বিষয়এমনকি যুক্তরাজ্যে ছেলেদের অনলাইনে প্রথম পর্ন ছবি দেখার গড় বয়স মাত্র ১১! আর একটু বেশি বয়সী ছেলেদের জন্য অলাইনে পর্ন দেখা এখন ডালভাতে পরিণত হয়েছে! ১৩-১৮ বছর বয়সী ৩ হাজার বালকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, তাদের ৮১ শতাংশই অনলাইনে পর্ন দেখেছে
  
অ্যালিসন এবং ডিয়ানা পুসিও ডিজিটাল যুগে পর্ন এবং অন্যান্য ইস্যুতে বাবা-মায়েদের কর্তব্য নিয়ে একটি বই লিখেছেনবইটিতে এই পরিস্থিতির দুটি প্রধান ফলাফল নিয়ে কথা বলা হয়প্রথমত, এই পরিস্থিতি নির্দেশ করে স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণ সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাদের আরো অল্প বয়সেই পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে
  
দ্বিতীয়ত, অনলাইন পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ির কারণে স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণ সম্পর্কে আলোচনা এখন আরো বেশি জরুরি হয়ে উঠেছেকারণ ছেলে-মেয়েরা এখন সহজেই মোবাইলে পর্ন দেখতে পারছে
  
অ্যালিসন এবং ডিয়ানা বলেন, এই প্রজন্মের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হলো অনলাইন পর্নোগ্রাফি ছেলেদের যৌন সংবেদনশীলতা এবং তাদের ভবিষ্যত দাম্পত্য সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে। মেয়েরা এতো অল্প বয়সে পর্নোগ্রাফিতে আগ্রহী নয়তথাপি তারাও ঝুঁকিতে রয়েছে; বিশেষ করে তাদের পুরুষ সঙ্গী বা ভবিষ্যত পুরুষ সঙ্গীর দিক থেকেকারণ অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখার ফল তাদের পুরুষ সঙ্গীরা যৌনতায় সন্তুষ্টির ব্যাপারে নিজেদের মনে ভুল ধারণা বা আদর্শ লালন করতে পারেন
  
এর কিছু সুদূরপ্রসারি পরিণতি রয়েছেআর বেশিরভাগ বাবা-মায়েরই এ ব্যাপারে যথেষ্ট জানা-শোনা নেইকিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা অনলাইনে যে ধরনের পর্নোগ্রাফি দেখছে তা ৭০ এবং ৮০-র দশকের প্রজন্ম যে ধরনের পর্নোগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন তার চেয়ে সম্পূর্ণতই ভিন্নআমরা শুধু হার্ডকোর ইমেজ সম্পর্কেই বলছি নাএখনকার বেশিরভাগ পর্ন ভিডিওতে শুধু পুরুষদের যৌন সন্তুষ্টির ওপরই ফোকাস করা হয় বেশিবিশেষ করে নারীদের দিয়ে মৌখিক যৌনতার মাধ্যমে পুরুষদের সন্তুষ্টি অর্জনের চিত্র তুলে ধরার ওপরই বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে
  
পর্ন ছবিতে উপস্থাপিত নারীদের বেশিরভাগের স্তনযুগলই সার্জারির মাধ্যমে অতিরিক্ত বড় করে উপস্থাপন করা হচ্ছেআর নারীদের জননাঙ্গে কোনো লোমের উপস্থিতিও দেখা যায় নাএ ধরনের বৈশিষ্টকেই নারীদের একমাত্র স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ছেলেদের মধ্যে তারা যেসব নারীদের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ হবেন সেসব নারীদের ব্যাপারে অবাস্তব সব প্রত্যাশা সৃষ্টি করছে
  
শুধু পর্নোগ্রাফির চিত্রগুলোই নয় বরং পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহৃত ভাষাও বিপজ্জনকযেমন, “নেইলড বা পেরেক বিদ্ধ করা”, “হ্যামারড বা হাতুড়ি দিয়ে থেতলানো”, “স্ক্রুড বা নাট-বল্টু লাগানো”, “পুমেলড বা মুষ্টিবিদ্ধ করাআর এই শব্দগুলো মূলত নারীদের উদ্দেশেই ব্যবহার করা হয়। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, তরুণীদের ৭৭ শতাংশই বলেছেন, তারা অনুভব করছেন পর্নোগ্রাফি মেয়েদের বা অল্প বয়সী নারীদের একটি বিশেষ ধরনের চেহারার অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করছেআর ৭৫% বলেছেন, পর্নোগ্রাফি তাদেরকে বিশেষ এক ধরনের আচরণে অভ্যস্ত হতে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করছেআর মলদ্বার দিয়ে যৌন সঙ্গমের মতো বিকৃত একটি আচরণকেও ক্রমাগত একটি স্বাভাবিক যৌন আচরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে পর্নোগ্রাফিতে
  
অ্যালিসন এবং ডিয়ানা তাদের বইয়ে আরো উল্লেখ করেন, এখন ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সেই ছেলেরা উগ্র পুরুষালি আচরণ শুরু করছেঅ্যালিসন বলেন, “আমরা কিশোরী মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তাদের ছেলে বন্ধুরা একেকজন সত্যিকার অর্থেই বিশ্বপ্রেমিক বা নারীশিকারী পুরুষ হয়ে উঠেছেএরা অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম-যৌনতার সম্পর্ক করে তা নিয়ে আবার গর্বও প্রকাশ করে
  
পুরুষালি, নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদি ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতেও সয়লাব হয়ে থাকে পর্ন ছবিগুলোঅ্যালিসন এবং ডিয়ানা ছেলেরা প্রতিদিন যেসব পুরুষালি শব্দ ব্যবহার করে আর মেয়েরা তা শুনেও না শোনার ভান করে সেসবের একটি তালিকাও করেছেনমেয়েরা হেঁটে যাওয়ার সময় ছেলেরা প্রায়ই যে কথাটি বলে, “তুমি কী করবে?” “আমি করতামতার হাঁটুর ওপর, আর ওটাই তার নিয়তিআমি তাকে ধ্বংস করবসে শুধুই একটি যৌনতার বস্তু
  
সুতরাং শিশুদেরকে বাবা-মায়েদের দিক থেকে কী শিক্ষা দেওয়া উচিত এবং কীভাবে তারা সেটি করবেন? অ্যালিসন এবং ডিয়ানা আরএপি বা রেইজিং অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড প্রিভেনশন (সচেতনতা তৈরি এবং প্রতিরোধ) শিরোনামে একটি প্রকল্পের অধীনে স্কুলে কয়েকটি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করছেনএতে শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন পর্নোগ্রাফির বিষয়ে তারা কখনো পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কিনা জিজ্ঞেস করা হয়উত্তরে একটি ক্ষুদ্র অংশই হাত তুলে হ্যাঁ সুচক জবাব দিয়েছে
  
অ্যালিসন বলেন, শিশুদের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতেই অর্থাৎ ১০ বছর বয়সেই স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণের ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা শুরু করা উচিতবাচ্চাদেরকে যে বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝাতে হবে তা হলো, অনলাইনে পর্নোগ্রাফিতে তারা যে ধরনের যৌন আচরণ দেখে তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরেতার সঙ্গে বাস্তব যৌন অভিজ্ঞতার কোনো মিল নেইনারী-পুরুষের বাস্তব সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার উপাদানগুলো- চুমু, জড়িয়ে ধরা এবং শারীরিকভাবে একাকার হয়ে যাওয়ার মতো অন্তরঙ্গ ও হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণগুলো পর্নোগ্রাফিতে সবসময়ই পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকে
  
বাবা-মায়েরা যদি তাদের শিশুদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণ নিয়ে খোলামেলা কথা বলার জন্য যথেষ্ট সাহস দেখাতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে তাদের কথাগুলো ওজনদার হয়ে থাকেঅ্যালিসন ও ডিয়ানার বইয়ে যেসব ছেলেদের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়েরা স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণ নিয়ে কথা বলেছেন, সেসব ছেলেরা তাদের বাবা-মায়ের কথা মনে রেখেছে১১ বছর বয়সী এক ছেলে বলেছে, “আমার বাবা আমাকে বলেছেন, পর্নোগ্রাফিতে যেভাবে দেখানো হয় দৈহিক মিলনের সময় নারীদের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করো নাকারণ নারীরা আসলে ওরকম নির্দয় আচরণ পছন্দ করেন না১২ বছর বয়সী আরেক ছেলে বলেছে, “আমার বাবা আমাকে বলেছেন, সত্যিকার পুরুষরা কখনো পর্নোগ্রাফি দেখে নাতারা নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন এবং কীভাবে নারীদের যত্ন নিতে হয় তা জানেন
  
অ্যালিসন বলেন, সব বাবা-মায়েরাই তাদের শিশুদের রক্ষা করতে চানআর অনলাইন পর্নোগ্রাফি মূলত কিশোর-কিশোরীদের ক্ষতি করছে বেশিকারণ এই বয়সীরাই বেশি অরক্ষিতএরা লুকিয়ে এবং একা একা পর্ন ছবি ও ভিডিও দেখেঅথচ এরা যেসব জিনিস দেখে সেসব মূলত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছেযা এদেরকে যৌনতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা দেয়
  
তবে ভালো সংবাদ হলো, কিশোর বয়সী ছেলেদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তোমরা কী একটি ঘনিষ্ঠ, অন্তরঙ্গ এবং পরিপূরক ও সুখি যৌনজীবন চাও? উত্তরে তারা হ্যাঁ সুচক জবাব দিয়েছেতোমরা যদি তাই চাও তাহলে তোমাদেরকে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ব্যাপারে অনলাইন পর্নোগ্রাফি এবং অশ্লীল খেলার মাঠের আনন্দ-বিনোদনের চেয়ে একটু ভিন্নভাবেই ভাবতে হবে
  
অ্যালিসন বলেন, “আমরা বলি, তোমরা যদি সত্যিকার অর্থেই একটি উপভোগ্য যৌনজীবন চাও তাহলে যুগযুগ ধরে চলে আসা নিয়মগুলোই অনুসরণ করতোমাদেরকে যা করতে হবে তা হলো, মেয়েদের সঙ্গে সম্মানের সাথে কথা বলাকথপোকথনের মধ্য দিয়েই তোমরা দুজনেই কী চাও তা খুঁজে বের করতে হবেতোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে ভাবতে হবে- যে তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে যে কোনো উপভোগ্য ও সুখি দাম্পত্য অথবা দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে- বন্ধুত্ব, রোমান্স বা প্রেম-ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা এবং হৃদ্যতা
  
অ্যালিসন এবং ডিয়ানার মতো শিক্ষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো ল্যাড কালচারবা পুরুষালি সংস্কৃতির মোকাবেলার কৌশল কী হবে তা খুঁজে বের করাআর কিশোর বয়সী ছেলেদের জন্যও ধর্ষকামি এবং নারীবিদ্বেষী রসিকতা বা কৌতুক করা থেকে বেরিয়ে আসা এবং যারা এসব করে তাদের মোকাবেলা করাটা একটু কঠিনই বটেযৌনতা ও নারীদের নিয়ে নোংরা রসিকতা বা কৌতুক এবং আচরণ যে কারো যৌন আচরণ এবং প্রত্যাশার ওপর যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা বুঝানোটাও একটু কঠিনই বটে
  
অ্যালিসন বলেন, “তরুণদেরকে বুঝাতে হবে, তাদের কোনো বন্ধু ধর্ষকামি কৌতুক বলার সময় যদি সে চুপ করে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সে নিজেও ওই অপকর্মে সহায়তা করছে এবং ফলত ওই নোংরা আচরণের সমর্থক
  
এছাড়া যারা পুরুষালি ভিডিও গেমস খেলে বা অনলাইনে অধ:পতিত মিউজিক ভিডিও এবং পর্নোগ্রাফি দেখে তারা লিঙ্গ বৈষম্যমূলক এবং নারী-বিদ্বেষী সংস্কৃতিরও সমর্থকবাবা-মায়েদেরকে এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবেঅনলাইন পর্নোগ্রাফির হুমকি এখন একটি নির্মম বাস্তবতা কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাবা-মায়েরা তা মোকাবেলায় পুরোপুরি ক্ষমতাহীন


শেয়ার করুন

0 facebook: