20 February 2018

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের কপি পেয়েছেন!


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পেয়েছেনগতকাল সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে তারা ১১৭৪ পৃষ্ঠার এ কপি পানবকশীবাজারস্থ ঢাকা আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ম বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ মামলার বিচার হয়

রায়ের কপি গ্রহণ করার সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ তালুকদারসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য তিন হাজার পৃষ্ঠার কার্টিজ পেপার আদালতে জমা দেন খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামানএই মামলায় অন্য আসামি খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১২ দিন ধরে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেনরায়ের সার্টিফায়েড কপি না মেলায় জামিন আবেদন করতে পারেননি তিনি প্রায় ১০ বছর আগে ২০০৮ সালের ৩জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে থাকার সময় এই মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনমামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়

সেখানে অভিযোগ করা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দেয়া হলেও, তা এতিম বা ট্রাস্টের কাজে ব্যয় করা হয়নিবরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে আসামি কারা দুর্নীতি দমন কমিশনের তখনকার উপ সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ (বর্তমানে উপ-পরিচালক) এ মামলার এজাহারে খালেদা জিয়াসহ মোট সাতজনকে আসামি করেন

বাকি ছয়জন হলেন- খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক (ইকোনো কামাল), সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ আহমেদ ওরফে সায়ীদ আহমেদ দুদক কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে যে অভিযোগপত্র দেন, সেখান থেকে গিয়াস উদ্দিন ও সায়ীদ আহমেদের নাম বাদ দেওয়া হয়

তাদের অব্যাহতির কারণ হিসেবে বলা হয়, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ অনেক আগে থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেনঅভিযোগে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমান পাওয়া যায়নিআর সায়ীদ আহমেদ নামে কারও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নিসাবেক সাংসদ কামাল জালিয়াতি করে ট্রাস্টের কাজে ওই দুই জনের নাম ব্যবহার করেছেন কী অভিযোগ এজাহারে বলা হয়, খালেদা জিয়া তার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম মেয়াদে ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে এতিম তহবিল নামে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় একটি হিসাব খোলেনএকটি বিদেশি সংস্থা ১৯৯১ সালের ৯ জুন ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান হিসেবে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাার ২১৬ টাকা দেয়

ওই টাকা দীর্ঘ দুই বছর কোনো এতিমখানায় না দিয়ে জমা রাখা হয়এরপর জিয়া পরিবারের তিন সদস্য তারেক রহমান, তার ভাই আরাফাত রহমান এবং তাদের ফুপাতো ভাই মমিনুরকে দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে ওই টাকা তাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ট্রাস্ট গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মানা হয়নিএছাড়া ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে

পরে ওই টাকা দুইভাগে ভাগ করে ট্রাস্টের বগুড়া ও বাগেরহাট শাখার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়এর মধ্যে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ টাকা ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে বরাদ্দ দেওয়া হয় বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামেওই অর্থ থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ট্রাস্টের নামে বগুড়ার দাঁড়াইল মৌজায় ২.৭৯ একর জমি কেনা হয় কিন্তু অবশিষ্ট টাকা এতিমখানায় ব্যয় না করে ব্যাংকে জমা রাখা হয়২০০৬ সনের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তা সুদে আসলে বেড়ে ৩ কেটি, ৩৭ লাখ ৭ শ ৫৭ টাকা ৩২ পয়সা হয়

এজাহারে বলা হয়, ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা তার ছেলে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানকে দিয়ে তিন কিস্তিতে ছয়টি চেকের মাধ্যমে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেনএরপর ওই টাকা কাজী সালিমুল হক কামাল ও অন্যদের মাধ্যমে সরিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করা হয় মামলায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে নাম সর্বস্ব ও অস্তিত্বহীনহিসেবে বর্ণনা করা হয়অপরাধের সময়কাল বলা হয় ১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চের মধ্যে


শেয়ার করুন

0 facebook: