মনির হোসেনঃ প্রথম
শ্রেণীর ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর মর্যাদায় কারাগারে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হচ্ছেবিএনপি
চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তার খাবার রান্না হচ্ছে কারাগারে
বন্দীদের জন্য তৈরি করা চৌকায় (চুলায়)। জরাজীর্ণ
পুরনো ঢাকার কারাগারে তার রুটিন মাফিক জীবন যাপন চলছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন। আর রাতে ঘুমিয়ে পড়ছেন খুব তাড়াতাড়ি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল
থেকে বিকেল পর্যন্ত নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায়
সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। কারাগারের মূলফটকের সামনের গেটের অদূরে
চারপাশের কোথাও একস্তরের আবার কোথাও দুই স্তরের নিরাপত্তায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কারারক্ষী,
কারা
কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ পথ দিয়ে স্কুল, কলেজপড়ুয়াসহ
যারা চলাচল করছে তাদের নানা কৌতূহল।
খালেদা জিয়াকে যে দিন (৮
ফেব্রুয়ারি) কারাগারে নেয়া হয়, তার একদিন আগে থেকেই ওই এলাকা দিয়ে কোনো
মানুষ চলাচল করতে পারেনি। অর্ধশতাধিক
দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও ক্ষোভের কারণে পুলিশ কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষকে
কারাগার এলাকার সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে ওই পথ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এতে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়কেন্দ্র হিসেবে
পরিচিত মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, চকবাজার
ও সোয়ারীঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তারপরও লোকজনের চলাচল
শুরু হওয়ায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট
ব্যবসায়ীরা এখন স্বস্তির কথা বলছেন। তবে
কারাগারের গেট লাগোয়া ঢাকার নামকরা ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির দোকানটি বেগম খালেদা জিয়ার
কারাগারে যাওয়ার আগের দিন থেকে অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টা। চাঁনখারপুল মোড় হয়ে কারাগারের দিকে
এগোতে থাকলে চোখে পড়ে অস্ত্র হাতে পুলিশ সদস্যদের কঠোর অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার
দৃশ্য। ঢাকা
বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলামের দফতরের পূর্ব পাশের প্রধান গেটের সামনেই
বসানো রয়েছে ব্যারিকেড। এখানেই
মোতায়েন আছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। কেউ
খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে প্রথমে তাদের কাছেই আবেদন জমা দিতে হয়। এরপর তারা সেটি কারা অধিদফতরে পৌঁছে
দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
বেলা ১১টায় বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ নেত্রীরা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে
সেখানে যান। সংগঠনের
সহসভাপতি মনিরা আক্তার রিক্তার নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল শুকনো খাবারের কয়েকটি
প্যাকেট নিয়ে ব্যারিকেডের সামনে অপেক্ষায় থাকেন। এ সময় তারা তাদের প্রিয় নেত্রীর সাথে
দেখা করতে জেল সুপারের কাছে লিখিত আবেদন দেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদনে
সাড়া না দেয়ায় তারা স্লোগান দিয়ে ফিরে যান।
কারাগারের মূলফটকের
সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারের যে স্থানে (ডে
কেয়ার সেন্টার) রাখা হয়েছে তার সামনের রাস্তায় (আনোয়ারা বেগম মুসলিম উচ্চবালিকা
বিদ্যালয়) এক কারারক্ষী দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন। তার সামনেই লুঙ্গিপরা এক লোক কারাগারের
দেয়াল ঘেঁষা স্থানে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলে কারারক্ষী হুইসেল মেরে এবং হাত নেড়ে
তাকে বলতে থাকেন, এখানে না, এখানে
না! বন্ধ ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির পাশের ফার্নিচারের দোকানি চানমিয়া জানালেন, খালেদা
জিয়া আসার পর কারাগারের ভাড়া দেয়া দোকান সবই বন্ধ আছে।
তবে উল্টো পাশের
বেসরকারি দোকানগুলো সব খুলেছে। তিনি
বলেন, টুকটাক বেচাকেনা শুরু হয়েছে। কারাগারের মূলফটকের সামনে ছয়-সাত
কারারক্ষীকে ডিউটি করতে দেখা যায়। প্রখর
রোদে ছাদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন কারারক্ষী। পাশের
ভবনে বসেছে অস্থায়ী আদালত। এর
জন্য বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাতরওজা
এবং বেগমবাজারের দিকে যেতে দেখা যায় পুলিশের ব্যারিকেড। অস্থায়ী আদালতের সামনের রাস্তায় ডিউটি
করছেন দু’জন নারী পুলিশ সদস্য। সময়
পার করার জন্য পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর তার পরিবারের সাথে মোবাইলে লাইভ কথা
বলছিলেন।
চকবাজারের দিকে এগিয়ে
দেখা যায় ডিআইজি প্রিজনের পুরনো বাসভবনের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তা একজন বয়স্ক
মহিলার সাথে কথা বলছেন। চকবাজারের
মুখে হাজী সেলিম টাওয়ারের সামনের এক দোকানির সাথে কেমন বেচাবিক্রি হচ্ছে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, ধুলার কারণে আগে বসা যেত না। এখন গাড়ি না থাকায় পরিস্থিতি ভালো। তবে এই রাস্তায় লোকজন এখন কম আসছে। পরে চকবাজার থানা এলাকার ভাঙা রাস্তা
হয়ে কারা অধিদফতর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া ছাড়াও আলীয়া মাদরাসার সামনের
রাস্তায়ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।
0 facebook: