25 February 2018

প্রশ্নফাঁসের মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা-২০১৮-এর তত্ত্বীয় বিষয়গুলোর লিখিত পরীক্ষা আজ শেষ হচ্ছেআগামীকাল শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষাশেষ হবে ৪ মার্চএ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যেমাধ্যমিকস্তরের এবারের এ পাবলিক পরীক্ষাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেএ পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছেফাঁস হওয়া প্রশ্নেই সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছেঅথচ পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষাসচিব মুহম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে নাপ্রমাণিত হলেই পরীক্ষা বাতিল করা হবেতারা আরো বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সব পথ বন্ধ করা হয়েছেপ্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেইকিন্তু বাস্তবে সব পরীক্ষার আগের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত

শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব আরো বলেছিলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে কোনো পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে নাযত বার প্রশ্নফাঁস হবে তত বারই নতুন করে পরীক্ষা নেয়া হবেএ নিয়ে অভিভাবক-পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছেকারণ, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নিপ্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে গঠিত যাচাই কমিটিআজ-কালের মধ্যেই মন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেতারপরই পুনঃপরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে

গত পয়লা ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে একই ও অভিন্ন প্রশ্নপত্রে শুরু হয়অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার কারণে দেশের যেকোনো প্রান্তে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে তা মুহূর্তেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেপ্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার কারণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ বা তাকে বরখাস্তের দাবি উঠেছে

পাবলিক পরীক্ষায় নকলের অভিশাপ বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের আমলে সমূলে উৎপাটন করা হয়অভিভাবক-শিক্ষার্থী মহলে এ নিয়ে সাময়িক স্বস্তি এলেও, বছর কয়েকের মধ্যে নতুন করে শুরু হয় প্রশ্নফাঁসের বিড়ম্বনা১/১১র সেনাসমর্থিত তদারকি সরকার- পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পরের বছর থেকেই শুরু হয়েছে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা

গত ৮-৯ বছরে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস একটি সাধারণ ঘটনায় রূপ নিয়েছেশুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয়, যেকোনো নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে অহরহ২০১৭ সালে প্রাইমারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে দেশের একাধিক জেলা ও উপজেলায়তবে, এবারের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে

অন্যান্য বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও তা কোনো জেলা বা মহানগরে সীমিত ছিলকিন্তু এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরপরই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে মুহূর্তেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেঅভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার কারণে এবারের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছেএক শ্রেণীর পরীক্ষার্থী মোবাইলের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সহজেই পেয়ে গেছেপ্রথম দিনের বাংলা প্রথমপত্র থেকে শুরু করে সর্বশেষ দিন উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন পাওয়া গেছে ফেসবুকেপ্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কোনোটি আগে দিন আবার কোনোটি পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেও ফাঁস হয়েছেফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে দেয়া প্রশ্নপত্র মেলানো হলে তার হুবহু মিল পাওয়া গেছে

ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীরকে প্রধান করে ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হলেও তারা কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেবে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নিবলা হয়েছিল, প্রশ্ন  অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে এ কমিটিকমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত নেয়া হবেএ দিন উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে কোনো প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়কিন্তু কোনো ঘোষণা বা পদক্ষেপই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নিপ্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রই ফেসবুকে পাওয়া গেছে


গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে তিন মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী) এবং ছয় সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেনএ বৈঠকের দিন অনুষ্ঠিত হিসাববিজ্ঞানের প্রশ্নটি ফাঁস হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের অনেককে মুখরোচক মন্তব্য করতে শোনা গেছেতাদের একটি মন্তব্য হচ্ছে, মন্ত্রীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়নিপ্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ব্যর্থতার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিটিআরসিকে দায়ী করেছেতবে, সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতাকে বেশি দায়ী করেছেপ্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে, বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর পরামর্শ তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রকাশ করবেনির্দিষ্ট আইডি থেকেই এসব করা হয়েছেঅনেকেই বলেছেন, রাষ্ট্রের ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কেউ আপত্তিকর কোনো মন্তব্য বা পোস্ট করার দু-এক দিনের মধ্যেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা গেলে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীকে কেন চিহ্নিত করা যায় না বা ধরা হয় নাএ ব্যাপারে সরকারের, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মহলের সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করছেন সবাই


শেয়ার করুন

0 facebook: