07 February 2018

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ শিক্ষামন্ত্রীর দফতরের দুজন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৮ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ২ পিয়নকে মঙ্গলবার একযোগে বদলি করা হয়েছেএ ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা-দফতরে দীর্ঘদিন কর্মরত ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক দেখা দিয়েছেএদিকে ১০ জনকে বদলি করা হলেও সেরা দুর্নীতিবাজ ও ফাইল আটকে ঘুষ আদায়কারী বেশকিছু কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে এখনও অধরা রয়ে গেছেন

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেনকিন্তু বাস্তবে দুর্নীতি, ঘুষ আদায়, সেবাপ্রার্থীদের দুর্ভোগে ফেলে অর্থ আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নিবিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক ও টিআইবির একাধিক প্রতিবেদনেও এর প্রতিফলন দেখা যায় সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগের পরতে পরতে দুর্নীতি বাসা বাঁধেপরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেনএছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশএরপরও টনক নড়েনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরতারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার একযোগে ১০ জনকে বদলি করা হয়

বদলির আদেশপ্রাপ্তরা হলেন- কলেজ শাখার আলমগীর হোসেন, মুহম্মদ আজিম, মাধ্যমিক শাখার আবু আলম খান, আনসার আলী, সেবা শাখার আবু শাহীন, সমন্বয় শাখার গোলাম মোস্তফা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আবু জাহের, শিক্ষামন্ত্রীর শাখার মুহম্মদ আলী এবং মোক্তার হোসেনএছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে রোবায়েত হোসেন নামে একজনকে পদায়ন করা হয়েছেশিক্ষামন্ত্রীর দফতরে পিয়ন পর্যায়ের আরও কয়েকজন দুর্নীতিবাজ থাকলেও তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনিবিশেষ করে আদ্যাক্ষরের পিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশিএই ব্যক্তি তথ্য পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পর্যায়ে আরও বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ আছেনবিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখার অতিরিক্ত সচিবের আদ্যাক্ষরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন করে নানা সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছেসর্বশেষ বনানী এলাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন করে নিজের এক আত্মীয়কে চাকরি দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন তিনিওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য পাচারের অভিযোগ আছেআবুল কালাম আজাদ নামে আরেক নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে কয়েক মাস আগে নানা অভিযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে বদলি করা হয়

নতুন শাখায়ও ওই কর্মকর্তা সাগরের ঢেউগুনছেন বলে অভিযোগ আছেকারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের আদ্যাক্ষরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছেকারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের আদ্যাক্ষরের আরেক কর্মকর্তা ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাটের মালিকএই ব্যক্তি সাবেক এক শিক্ষা সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেনপরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকের ব্যাপারে পাঠানো প্রতিবেদন উল্টে দেয়ার অভিযোগ আছে অডিট শাখার আদ্যাক্ষরের এক নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

ওই শাখায় এ নারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছেকিন্তু সেই কর্মকর্তাও বহাল তবিয়তে আছেনশিক্ষামন্ত্রীর একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য যুগান্তরকে বলেন, ‘মাত্র শুরু হয়েছেঅপেক্ষা করেনদাগী প্রত্যেকের ব্যাপারেই পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত আসবেতিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছেতাদের মধ্যে বেশিদিন ধরে যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আছেন, তাদের অন্যত্র বদলি করে দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ যেতে পারে এছাড়া যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, তাদের ব্যাপারে আলাদা প্রতিবেদন পাঠানোর চিন্তাভাবনা চলছেপ্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পর্যায়ে বদলি করা হলেও শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএসের সিন্ডিকেটের কারোর ব্যাপারেই উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নিঅধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পুরনো কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও ওই সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা ঢাকা বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, মাউশি, বিভিন্ন প্রকল্পসহ অন্য দফতরে বহাল আছেন

এমনকি ঢাকা বোর্ডের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদ এক মাসের বেশিদিন ফাঁকা রেখে সেখানে জুনিয়র এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হচ্ছেএর আগে একই ধরনের কাণ্ড হয়েছিল মাদ্রাসা বোর্ডেসহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার নিজের (শিক্ষামন্ত্রী) প্রটোকল অফিসারকে রেজিস্ট্রার কাম চেয়ারম্যান করে রাখা হয়এরপর অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার পর চেয়ারম্যানের পদে তাকে বসানো হয়ওই এপিএসের সিন্ডিকেটে একাধিক অতিরিক্ত সচিব আছেনকয়েক বছর আগে এপিএস পদ থেকে সরানো হলেও মন্ত্রণালয়ে তার প্রভাব শেষ হয়ে যায়নিতার ইঙ্গিতেই বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি করা হয় বলে অভিযোগ আছে উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভাগে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে টিআইবি, দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বারবার প্রতিবেদন দিয়েছেকিন্তু সেসব আমলে নেয়া হয়নিবরং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর টিআইবি রীতিমতো তোপের মুখে পড়েওই সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি টেলিফোনে আমাকে প্রতিবেদনের জন্য সাধুবাদ জানানএর দুঘণ্টা পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অভিযোগ প্রমাণ নতুবা ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়বিষয়টিতে আমি তাজ্জব হয়ে যাইপ্রসঙ্গত, মন্ত্রণালয়ের ভেতর ও বাইরে বিশেষ করে শিক্ষা বিভাগের মাঠপর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছেতাতে ৮৬ জনের নাম আছেএছাড়া মাউশির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করেতাতে ১৮ জনের নাম আছেএ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাভেদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তালিকা পর্যালোচনা চলছেঅপরাধ অনুযায়ী ক্লোজড, বদলি, ওএসডি, শোকজসহ নানা রকমের ব্যবস্থা নেয়া হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: